ফিরে দেখা ২০২১: প্যারালিম্পিকে এই বছরই এসেছে সব থেকে বেশি সাফল্য
কোভিড-১৯-এর চোখ রাঙানি এবং আফগানিস্তানে তালিবান শাসন কায়েমের কারণে যখন এক অস্থির অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব তখনই এক দমকা হাওয়া মতো মানব জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি নিয়ে এসেছিল টোকিও অলিম্পিক এবং প্যারিলিম্পিক।
অলিম্পিকের সাফল্যের মধ্যে অনেক সময়েই চোখের অগোচরে চলে যায় প্যারা অলিম্পিয়ানদের সাফল্য। কিন্তু ২০২০ টোকিও প্যারালিম্পিক ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্যারালিম্পিকে ইতিহাসে সর্বাধিক ৫৪ সদস্য ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন এই বছর। মোট নয়টি বিভাগে ১৯টি পদক পেয়েছে ভারত। যা অতি বড় ক্রীড়াপ্রেমীও হয়তো আশা করেননি। ২০২০ টোকিও প্যারালিম্পিকে মোট ১৬২ দেশ অংশ নিয়েছিল।
শুধু পদক জেতাই নয়, প্যারালিম্পিকে একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন ভারতীয় প্রতিযোগীরা। জাভলিনে থ্রো-এ সোনা জয়ী সুমিত আন্টিল যেমন সোনালি পদক জয়ের রাস্তায় ভেঙেছেন একের পর এক বিশ্ব রেকর্ড তেমনই হাই জাম্পার নিশাদ কুমার টি৪৭ বিভাগে এশিয়ায় নতুন রেকর্ড তৈরি করেছেন। একই রকম ভাবে ৫০ মিটার মিক্সড পিস্তল শুটিং ইভেন্টে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছেন মনীশ নারওয়াল। উল্লেখ্য, এই ইভেন্টে ভারতীয়দের সাফল্য খুব কমই এসেছে। বছর শেষের খাতিয়ানে সেই রকম উল্লেখযোগ্য কিছু সাফল্যই তুলে ধরল ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা।

ফ্লাইং হাই: নিশাদ কুমার (রূপো)
হিমাচল প্রদেশের উনা জেলা থেকে উঠে আসা নিশাদ কুমার ২.০৬ মিটার অতিক্রম করে রূপো জেতেন এই হাই জাম্পার। ২০২১-এর শুরুর দিকে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন নিশাদ। তবুও তার পারফরম্যান্সে মহামারী কাটিয়ে ওঠার কোনও ধকলই চোখে পড়েনি। বরং অনেক বেশি জেতার খিদে ছিল তাঁর মধ্যে। টি৪৭ ইভেন্টে নতুন এশিয়ান রেকর্ড তৈরি করেছেন তিনি।

দুরন্ত লক্ষ্যভেদ: হারভিন্দর সিং (তিরন্দাজি ব্রোঞ্জ)
জন্মের পর থেকেই একাধিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আজ নিজের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন হারভিন্দর। মাত্র এক বছর বয়সে চিকিৎসকের গাফিলতিতে বাম পায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়া থেকে ২০১৮ প্যারা এশিয়ান গেমসে সোনা জয়ের ঠিক ২০ দিন আগে মা'কে হারিয়েছিলেন এই তিরন্দাজ। কখনও কোনও প্রতিবন্ধকতাকে নিজের উপর ভারী হতে দেননি হারভিন্দর। টোকিও-এর জন্য প্রস্তুতির মধ্যেই ডেঙ্গু'তে আক্রান্ত হন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিরন্দাজিতে পদক আনা থেকে কোনও কিছু বাধা তৈরি করতে পারেনি হারভিন্দরের সামনে। প্যারালিম্পিক থেকে দেশকে ব্রোঞ এনে দিয়েছেন তিনি।

সুমিত আন্টিল (জাভলিন সোনা):
এফ৬৪ জাভলিন থ্রো-এর ইভেন্টে ভারতকে সোনা এনে দেওয়া সুমিত-এর প্রধান খেলা জাভলিং থ্রো ছিল না। তিনি মূলত ছিলেন একজন কুস্তিগীর। ছ'বছর আগে সোনিপথে মটরবাইক দুর্ঘটনায় হাঁটুর নীচ থেকে পা হারান সুমিত। আকস্মিক দুর্ঘটনায় পা হারালেও মনের জোরকে সঙ্গে নিয়ে স্বপ্নকে বুকে ধরে এগিয়ে গিয়েছেন। সর্বোচ্চ স্তরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন তিনি ত্যাগ করেননি এক মুহূর্তের জন্য। তারই ফসল প্যারালিম্পিকে সোনা জয়।

সিংঘরাজ আদানা (শ্যুটিংয়ে রূপো) :
টোকিও প্যারালিম্পিকে শুটিং ইভেন্টে একের পর এক সাফল্য পেয়েছে ভারত। স্বদেশীয় মনীশ নারওয়ালের কাছে পি৪ মিক্সড ৫০ মিটার পিস্তল এসএইচ ১ ইভেন্টে রূপো জেতেন আদানা। পোলিও-প্রতিবন্ধী এই শ্যুটার হরিয়ানার বাহাদুরগড় থেকে উঠে এসেছেন এবং বিশ্বস্তরে গর্বিত করেছেন দেশকে।

মনীশ নারওয়াল (শ্যুটিং সোনা) :
পি৪ মিক্সড ৫০ মিটার পিস্তল এসএইচ ১ ইভেন্টে ভারত'কে সোনা এনে দিয়েছেন মনীশ। মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্যারালিম্পিকে প্রথমবার অংশ নিয়েই তাক লাগিয়ে দিয়েছন এই তরুণ শ্যুটার। সোনা জয়ের রাস্তায় ভেঙেছেন প্যারালিম্পিকে শ্যুটিং-এর রেকর্ড। এই বিভাগে বিশ্ব রেকর্ড রয়েছে হরিয়ানার বল্লবগড় থেকে উঠে আসা এই তরুণের।