বিশ্ব কুস্তির ভারতীয় দলে কামব্যাকের রহস্য ফাঁস বজরংয়ের স্ত্রী সংগীতার, হতাশ করলেন ভিনেশ
অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপের আগে বড় ধাক্কা খেলেন ভারতের অলিম্পিয়ান কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট। ট্রায়ালের মাঝপথেই সরে দাঁড়ালেন তিনি। যদিও সকলকে চমকে দিয়ে তিন বছর পর কামব্যাক করে জাতীয় দলে জায়গা পাকা করে ফেললেন ভিনেশেরই খুড়তুতো বোন তথা টোকিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী বজরং পুনিয়ার স্ত্রী সংগীতা।
হতাশ করলেন ভিনেশ
দেশের অন্যতম সফল মহিলা কুস্তিগীর অলিম্পিয়ান ভিনেশের দিকেই ছিল সকলের নজর। টোকিও অলিম্পিকে বিতর্কে জড়ানোর পর ভারতের কুস্তিু ফেডারেশন শোকজ করেছিল ভিনেশকে। সাময়িক নির্বাসিতও হন। তবে বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রায়ালের আগে তাঁর সাসপেনশন তুলে ক্ষমা করে দিয়ে আরেকটা সুযোগ দেয় ফেডারেশন। ভিনেশ এদিন অঞ্জুর বিরুদ্ধে ট্রায়ালের ওপেনিং বাউট ১০-৫ ব্যবধানে জিতলেও নিজের চেনা ছন্দে ছিলেন না একেবারেই। এরপর আর পিঙ্কির বিরুদ্ধে তিনি লড়াইয়ে নামেননি। ফলে পিঙ্কি জাতীয় দলে জায়গা পাকা করে ফেলেন। টোকিও অলিম্পিকে বেলারুশের ভানেসা ভিনেশের বিরুদ্ধে যে হেড-লক টেকনিক নিয়েছিলেন এদিন অঞ্জুও সেই পন্থাই অবলম্বন করেন। এটাই এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন ভিনেশের ছন্দ নষ্ট করে দেয়। এরপরই সকলকে অবাক করে ট্রায়াল থেকে সরে দাঁড়ান ভিনেশ।
করোনার জেরে সমস্যা!
ভিনেশ সরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে বলেন, আমি জানি না কী হয়েছে। চোট নয়। তবে মাথায় একটা অস্বস্তিভাব হচ্ছে। টোকিও অলিম্পিকের কোয়ার্টার ফাইনালেও হঠাৎ সব কিছু ব্ল্যাঙ্ক হয়ে গিয়েছিল। আমি বুঝতে পারছি আমার শরীর যেমন থাকা উচিত তেমনটা ঠিক নেই। আমি চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলছি। হয়তো করোনায় যে আক্রান্ত হয়েছিলাম, তার জেরেই কিছু সমস্যা হচ্ছে।
সংগীতার কামব্যাক
গত বছরই বজরং পুনিয়াকে বিয়ে করেছিলেন ভিনেশের বোন সংগীতা। এবার টোকিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতলেও বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে বজরং নামতে পারবেন না পায়ের চোটের কারণে। কিন্তু তাঁর স্ত্রী ম্যাটে ফিরেই দারুণ কামব্যাক করলেন বছর তিনেক পর। তাঁরও হাঁটুতে দুটি অস্ত্রোপচার হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব কুস্তির ট্রায়ালে ম্যাটে ফিরেই তিনি আত্মবিশ্বাসী জয়ের সৌজন্যে জাতীয় দলে জায়গা পাকা করে ফেললেন। এদিন ৬২ কেজি বিভাগে প্রথমে টেকনিক্যাল সুপিরিয়রিটিতে হারান জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপোজয়ী সঞ্জু দেবীকে। এরপর খুব দ্রুতগতিতে সম্পন্ন ফাইনালে তিনি মনীষাকে হারান ৯-৫ ব্যবধানে। এই পারফরম্যান্সই তাঁর জাতীয় দলে কামব্যাক নিশ্চিত করে দেয়। সংগীতের কাউন্টার মুভে বজরংয়ের ছায়া লক্ষ্য করা গিয়েছে।
পরের লক্ষ্যও স্থির
২৩ বছরের সংগীতার ডান হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছিল ২০১৮ সালে। এর ফলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পারেননি। পরের বছর বাঁ হাঁটুতেও অস্ত্রোপচার করাতে হয়, যে কারণে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রায়াল তিনি মিস করেন। সংগীতা বলেন, এই পারফরম্যান্স বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জেতার বিষয়ে আমার আত্মবিশ্বাস বাড়াল। মনে হচ্ছে, আমি যা করতে চাইছি সবটা ঠিকঠাকই করতে পারছি। কয়েক মাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বজরংয়ের থেকে লাগাতার সহযোগিতা পাওয়াতেই এই পারফরম্যান্স করতে পেরেছি। আমার বাবা মহাবীর ফোগাট ম্যাচে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বজরং নানা ইনপুট দিয়ে আমার খেলাকে উন্নত করতে সহযোগিতার পাশাপাশি মোটিভেটও করেছেন। পরের বছর এশিয়ান গেমস ও কমনওয়েলথ গেমসেও নামতে চান সংগীতা।
আশাতীত সাফল্যে খুশি বজরং
স্ত্রী সংগীতার এমন পারফরম্যান্স প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বলে উল্লেখ করেছেন বজরং। তিনি বলেন, সত্যি বলতে কি সংগীতার হাঁটু কেমন থাকে সেদিকেই আমাদের নজর ছিল। আমরা এমন জয় প্রত্যাশা করিনি। সংগীতাকে শুধু বলেছিলাম নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য। উল্লেখ্য, এই ৬২ কেজি বিভাগেই মনীষা হারিয়ে দেন রিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী সাক্ষী মালিককে। এমনকী জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো পারফর্ম করা কুস্তিগীরদের কাছে পরাজিত হয়েছেন অনেক সিনিয়রই। অন্তত পাঁচজন জুনিয়র সিনিয়রদের হারিয়ে জায়গা পাকা করেছেন ভারতীয় দলে।