Tokyo Olympics : হকির 'প্রাচীর' সবিতার পুরনো গ্রামে উৎসব, রিয়াল কবীরের মুখে আসল চক দে!
Tokyo Olympics : হকির প্রাচীর সবিতার পুরনো গ্রামে উৎসব, রিয়াল কবীরের মুখে আসল চক দে!
ভারতীয় পুরুষ দল সেমিফাইনাল হেরে গেলে টোকিও অলিম্পিকের হকি ইভেন্টে ভারতের সোনা বা রূপো জয়ের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। এই প্রথমবার অলিম্পিকের সেমিফাইনালে পৌঁছেছে ভারতের মহিলা হকি দল। শেষ চারের লড়াই জিতে ফাইনালে পৌঁছতে পারলে ইতিহাস রচনা করলেন রানি রামপালরা। তার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে আটটি পেনাল্টি কর্নার সেভ করা ভারতের মহিলা হকি দলের গোলরক্ষক সবিতা পুনিয়ার গ্রামে উৎসবের মেজাজ। দেশের মহিলা হকি খেলোয়াড়াদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন শাহরুখ খান অভিনীত 'চক দে! ইন্ডিয়া' সিনেমার গল্পের উৎস মীররঞ্জন নেগি।
আটটি পেনাল্টি কর্নার সেভ করা সবিতা
টোকিও অলিম্পিকে হকির কোয়ার্টার ফাইনাল জিতলেও ম্যাচে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণের ঝড় সামলাতে হয়েছে ভারতীয় মহিলাদের। ম্যাচের ২২ মিনিটের মাথায় এক গোলে পিছিয়ে পড়ার পর তো আক্রমণে আর গতি বাড়িয়ে দিয়েছিল অজি শিবির। পরপর পেনাল্টি কর্নার পেয়ে গিয়েছিল পরাজিত দল। সেগুলি কাজে লাগাতে পারেনি। গোটা ম্যাচ জুড়ে পাওয়া অফুরন্ত সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মহিলা হকি দলকে। সৌজন্যে সবিতা দেবীর অসাধারণ পারফরম্যান্স। ম্যাচে মোট আটটি পেনাল্টি কর্নার সেভ করেছেন ভারতীয় গোলরক্ষক।
কোচ এবং দলকে কৃতিত্ব
গোটা বিশ্ব যখন তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন সবিতা দেবী নিজে অবশ্য বিনয়ী হয়েছেন। জয়ের কৃতিত্ব নিজের ঝুলিতে কুক্ষিগত করে না রেখে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। জানিয়েছেন যে ডু অর ডাই ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে দিতেই দলের প্রতিটি সদস্য মাঠে নেমেছিলেন। কোচ জোরর্ড মারিজনের পেপ টক তাঁদের ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল বলেও জানিয়েছেন সবিতা। তাঁর কথায়, শাহরুখ খান অভিনীত 'চক দে ইন্ডিয়া' সিনেমার কবীর খানের মতোই নাকি কোচ, ভারতীয় মহিলা দলের খেলোয়াড়দের বলেছিলেন যে এই ৬০ মিনিট প্রত্যেকের জীবনের সেরা মুহুর্ত হতে চলেছে। সেই আবহে সবিতাদের কাছ থেকে সেরাটা চেয়েছিলেন জোরার্ড।
সবিতার পুরনো গ্রামে উৎসব
রাজস্থানের মেয়ে সবিতা পুনিয়া কেরিয়ার ও কাজের সূত্রে এখন আর নিজের হনুমানগড় জেলার ঝাঁসাল গ্রামে থাকতে পারেন না। তবে তাঁর আত্মীয়-পরিজনে পূর্ণ রয়েছে ওই এলাকা। সবিতার দাদু, কাকা, কাকিমা, ভাই-বোনেরা থাকেন ওই গ্রামেই। ২০১৯ সালে শেষবার ঝাঁসালে গিয়েছিলেন সবিতা। তারপর থেকে ভারতীয় হকির নতুন সেনসেশন নিজের পুরনো ভিটেতে পা না রাখলেও তাঁর গৌরবে গর্বিত হয়েছে গোটা গ্রাম। সবিতার ছবি, ভারতীয় পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়েছে এলাকা। টোকিও থেকে ফিরলে ইতিহাস রচনা করা সবিতাকে সম্বর্ধনা দিতে তৈরি হচ্ছেন পরিজনরা। কড়া সংগ্রাম করে কাঙ্খিত উচ্চতায় পৌঁছনো সবিতা পুনিয়াকে রূপোর হকি ব্যাট উপহার দিতে চলেছেন তাঁর পুরনো গ্রামের বাসিন্দারা।
২৫ বছর আগেই ভিটেছাড়া
সবিতা পুনিয়ার বাবা রাজস্থানের ঝাঁসাল গ্রামেই জন্মেছিলেন। কিন্তু কর্মসূত্রে তিনি ২৫ বছর আগে ওই গ্রাম ছেড়ে হরিয়ানা চলে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আত্মীয়রা। সবিতা পুনিয়ার জন্ম হয় সেখানেই। সশরীরে বাবার পুরনো ভিটেতে পা রাখার খুব বেশি সুযোগ না পেলেও আত্মীয়দের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে বলেই জানানো হয়েছে।
মীররঞ্জন নেগির চক দে!
শাহরুখ খান অভিনীত 'চর দে! ইন্ডিয়া' সিনেমা যার জীবনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, দেশের সেই প্রাক্তন হকি তারকা তথা কোচ মীররঞ্জন নেগি ভারতীয় মহিলা হকি দলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। শাহরুখ খানের ওই সিনেমায় বিশ্বকাপ হকিতে নারীশক্তির উত্থান দুর্দান্তভাবে প্রদর্শন করা হয়েছিল। যেখানে বহু প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বিশ্বকাপ হকিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। সিনেমার সেই 'চক দে' রানি রামপাল, সবিতা পুনিয়ারা টোকিও অলিম্পিকের বাস্তবতায় করে দেখাতে সক্ষম হবেন বলে মনে করেন দেশের প্রাক্তন হকি গোলরক্ষক নেগি। ১৯৮২ সালের এশিয়ান গেমসে পকিস্তানের বিরুদ্ধে সাত গোল হজম করার পর যার কেরিয়ার প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়ে ২০০২ সালের কমনওয়েলথ গেমস ও ২০০৪ সালের এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী ভারতীয় হকি দলের কোচিং দলের সদস্য হিসেবে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছিলেন নেগি।
অপ্রত্যাশিত জয়
টোকিও অলিম্পিকের প্রথম ম্যাচেই শোচনীয় পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছিল ভারতের মহিলা হকি দলকে। সেখান থেকে যে দল এভাবে ঘুরে দাঁড়াবে এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে দেবে, তা আগে কেউ কল্পনা করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন নেগি। তারই প্রেক্ষিতে এই জয়ের মাহাত্ম্য ব্যাপক বলে জানিয়েছেন বাস্তবের কবীর খান। যার মতে, রানি রামপালদের এই জয়ের হাত ধরে ভারতীয় হকিতে নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। ভারতের এই মহিলা দলের ভবিষ্যতও উজ্জ্বল বলে জানিয়েছেন মীররঞ্জন।
ছবি সৌজন্য:ইসন্টাগ্রাম