Tokyo Paralympics: বিশ্বচ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে লড়ে হার, ব্যাডমিন্টনে রুপো নয়ডার জেলাশাসকের
দেশের প্রথম আইএএস অফিসার হয়ে প্যারালিম্পিকে পদক জিতলেন সুহাস যথীরাজ। ব্যাডমিন্টন ফাইনালে তিনি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও শীর্ষ বাছাইয়ের বিরুদ্ধে ভালো লড়াই চালিয়েও হেরে যান, জেতেন রুপো। কর্নাটকে জন্ম সুহাসের। তিনি বর্তমানে নয়ডার গৌতম বুদ্ধ নগরের জেলাশাসকের পদে কর্মরত। দারুণভাবে সামলেছেন কোভিড পরিস্থিতি। আর আজ তিনি জিতলেন ঐতিহাসিক রুপো।
|
ঐতিহাসিক রুপো
পুরুষদের সিঙ্গলসের এসএল ফোর ক্যাটেগরির ফাইনালে ফ্রান্সের লুকাস মাজুরের কাছে ৩৮ বছরের সুহাস পরাস্ত হন। তবে প্রথম গেমটি তিনিই জিতেছিলেন ২১-১৫ ব্যবধানে। পরের দুটি গেম অবশ্য বিশ্বের তিন নম্বর সুহাসের বিরুদ্ধে জিতে যান মাজুর। ১৫-২১, ২১-১৭, ২১-১৫ ব্যবধানে সুহাসকে হারিয়ে তিনি সোনা নিশ্চিত করেন। ভারতের কোনও আইএফএস অফিসার এর আগে প্যারালিম্পিকে পদক জিততে পারেননি। মাজুরের কাছে সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছিলেন ভারতের তরুণ। তিনি এদিন ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচে পরাস্ত হলেন ইন্দোনেশিয়ার ফ্রেডি সেতিয়াওয়ানের কাছে।
|
প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে
সুহাসের জন্ম কর্নাটকে। জন্ম থেকেই পায়ের সমস্যা। তবে তা কোনওভাবেই সুহাসের কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিবন্ধতকা তৈরি করতে পারেনি। ইঞ্জিনিয়ার সুহাস এখন আইএএস অফিসারও। উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় গৌতম বুদ্ধ নগরের জেলাশাসক। বিশ্বের তিন নম্বর সুহাস এদিন প্রথম গেমেই চমক দেখিয়েছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তথা তিনটি বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে পদকজয়ী মাজুরকে স্ট্রেট গেমে হারিয়ে। যদিও পরের গেমেই হেরে যাওয়ার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই বাজিমাত করেন মাজুর। তবে কোর্টে একেকটি পয়েন্ট জেতার পর যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন, আত্মবিশ্বাসী সেই ভঙ্গিমা শেষ অবধি মাজুরকে একেবারেই স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি।
|
দুরন্ত পারফরম্যান্স
আজ ব্রোঞ্জ জয়ের ম্যাচে ভারতের তরুণ যে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিপক্ষের কাছে হেরে গিয়েছেন তাঁকে হারিয়েই ফাইনালে উঠেছিলেন যথীরাজ। র্যালিতে দাপুটে পারফরম্যান্স একটা সময় মাজুরকে অবাকও করে দিয়েছিল। যদিও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ তিনি জিতে নেন। গ্রুপ পর্যায়েও মাজুরের বিরুদ্ধে খেলা পড়েছিল সুহাসের। সেবার স্ট্রেট গেমেই জয় পেয়েছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তবে এদিন সোনা জিততে তাঁকে বেশ বেগই পেতে হল সুহাসের কাছে।
|
ব্যাডমিন্টনে তৃতীয় পদক
টোকিও প্যারালিম্পিকের ব্যাডমিন্টনে ভারতের তৃতীয় পদকটি ঘরে আনলেন জেলাশাসক সুহাস। এসএল থ্রি ক্যাটেগরিতে সোনা জিতেছিলেন প্রমোদ ভগত। মনোজ সরকার জেতেন ব্রোঞ্জ। ব্যাডমিন্টনে ভারতের আরও পদক আসতে চলেছে। বিগত ৬ বছর ধরে প্রশাসনিক দায়িত্ব ও খেলাধুলো দারুণ সামঞ্জস্য রেখে সামলাচ্ছেন সুহাস। কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলাতেও প্রশংসনীয় ভূমিকা নিয়েছেন। তার মধ্যেই চালিয়ে গিয়েছেন অনুশীলন। প্যারালিম্পিকে নামার জন্য সরকারি কাজ থেকে ছুটির পর প্রতিদিন ঘণ্টা দুয়েক অনুশীলন করতেন। কাজের শেষে রাত ১০টা থেকে চলত ব্যাডমিন্টন অনুশীলন। প্রয়াগরাজ, আগ্রা, জৌনপুর, সোনভদ্রের জেলাশাসকও ছিলেন তিনি। গত বছর মার্চ থেকে তিনি গৌতম বুদ্ধ নগরের জেলাশাসক হিসেবে কাজ করছেন।
|
খেলা শুরু
সুহাস পেশাদার ব্যাডমিন্টন শুরু করেছিলেন ২০১৬ সালে। তখন তিনি উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের জেলাশাসক। একটি ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সেই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন। সেখান থেকেই শুরু তাঁর শাটলার হওয়ার যাত্রা। ভারতের প্যারা ব্যাডমিন্টন কোচ গৌরব খান্নার এরপর প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। আন্তর্জাতিক অভিষেকের প্রথম বছরেই তিনি বেজিংয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন। জাপান ও তুরস্ক ওপেনেও অব্যাহত রাখেন সোনা জয়ের ধারা।
|
অলরাউন্ডার সুহাস
উত্তরপ্রদেশের আইএএস ক্যাডারের ২০০৭-এর ব্যাচের সুহাস যথীরাজ। ২০১৮ সালের ন্যাশনাল প্যারা ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছিলেন। এশিয়ান প্যারা ব্যাডমিন্টনে তিনি বেজিংয়ে যে সোনা জিতেছিলেন সেটিও প্রথম কোনও ভারতীয় আমলা হিসেবেই। তাই এবার অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাল টোকিও প্যারালিম্পিকে। ২০১৬ সালে উত্তরপ্রদেশে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান যশ ভারতীতে ভূষিত হন সুহাস। প্যারা স্পোর্টসে অবদানের জন্যও তাঁকে সংবর্ধিত করে উত্তরপ্রদেশ সরকার। প্রশাসনিক পদ সামলানোর দক্ষতার জন্য তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। সুহাসের বাবাও সরকারি কর্মী ছিলেন। তাঁর বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিংয়ের জন্য সুহাস-সহ পরিবারকেও সেইসব জায়গায় গিয়ে থাকতে হতো। সুহাসের এই সাফল্যের পথ তাই সকলের কাছেই দৃষ্টান্ত।
(ছবি- দীপা মালিক টুইটার)