টোকিও অলিম্পিকে অন্যায়ভাবে হারানো হয়েছে, কান্নায় ভেঙে পড়ে বিস্ফোরক মেরি কম
টোকিও অলিম্পিকের প্রি কোয়ার্টার ফাইনালেই শেষ হয়ে গিয়েছে ৬ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এমসি মেরি কমের অভিযান। ফ্লাইওয়েট (৫১ কেজি)-তে আজ ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে বিজয়ী মেরি কমকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছেন রিও অলিম্পিকের ব্রোঞ্জজয়ী কলম্বিয়ার ইনগ্রিত ভ্যালেন্সিয়া। এরপরই অন্যায়ভাবে তাঁকে হারানো হয়েছে হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন কিংবদন্তি মেরি কম।
সরব বিচার নিয়ে
ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি যে বক্সিং টাস্ক ফোর্সকে রেখেছে তাকেই আক্রমণ করেছেন হতাশ মেরি কম। দুই রাউন্ডে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও স্প্লিট ডিসিশনের নামে কোন কারণে তাঁকে ২-৩ ব্যবধানে হারানো হল সেটাই বুঝতে পারছেন না মেরি। তিনি বলেন, প্রচুর স্বার্থত্যাগ করে দেশের হয়ে পদক জেতার লক্ষ্যেই নেমেছিলাম। আমিই জিতছিলাম। কিন্তু আমাকে হারিয়ে দেওয়া হল! বাউটের পরও সেটা বিশ্বাস করতে পারছি না। টাস্ক ফোর্সে কী চলছে বুঝতেই পারছি না। আইওসি-ই বা কী চাইছে?
বিশ্বাসই হচ্ছে না
উল্লেখ্য, সংস্থা সঠিকভাবে না চালানোয় এবং আর্থিক গরমিলের অভিযোগ থাকায় ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনকে সাসপেন্ড করেছে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি। তারপরই টোকিওতে আইওসি-র টাস্ক ফোর্সের বিচারকরা বক্সিংয়ের বিভিন্ন ইভেন্টে জয়-পরাজয় নির্ধারিত করছেন। সেই টাস্ক ফোর্সেরই সমালোচনা করে মেরি কম বলেছেন, আমিও টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য ছিলাম। প্রতিযোগিতা যাতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে চলে সে ব্যাপারে বিভিন্ন সময় আমার কিছু প্রস্তাব বা পরামর্শও দিয়েছি। কিন্তু সেই টাস্ক ফোর্সই আমার সঙ্গে এটা কী করল? আমি রিংয়ের ভিতর খুশি ছিলাম। আমি যখন রিংয়ের বাইরে আসি তখনও জানতাম আমিই জিতেছি। এমনকী আমাকে যখন ডোপ পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তখনও খুশিই ছিলাম, কারণ আমি জানি আমিই জিতেছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে এবং আমার কোচ ছোটেলাল যাদবের কাছে শুনে বুঝতে পারি, আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কান্নায় ভেঙে পড়েন মেরি
বাউটের শেষে ভ্যালেন্সিয়াকে দেখা যায় তিনি মেরি কমের হাত উঁচুতে তুলে ধরছেন। মেরিকেও দেখা গিয়েছিল স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নমস্কার করতে। কিন্তু অলিম্পিক অভিযান শেষ হয়ে গিয়েছে জানতে পেরেই আকাশ থেকে পড়েন মেরি, ভেঙে পড়েন কান্নায়। তিনি পরে বলেন, ভ্যালেন্সিয়াকে আমি আগেও দুবার হারিয়েছি। তাঁর হাত যে রেফারি তুলেছেন সেটা আমি খেয়াল করিনি। ভগবানের নামে শপথ করে বলছি, আমি তখনও জানতাম আমিই জিতেছি। এতটাই আমি নিশ্চিত ছিলাম।
স্বচ্ছতার অভাব
প্রথম রাউন্ডে মেরি ১-৪-এ পিছিয়ে ছিলেন, কারণ পাঁচজনের মধ্যে চার বিচারকই এগিয়ে রেখেছিলেন ভ্যালেন্সিয়াকে। পরের দুটি রাউন্ডেই মেরি এগিয়ে ছিলেন ৩-২ ব্যবধানে। কিন্তু ওভারঅল স্কোরলাইনে ভ্যালেন্সিয়াই এগিয়ে থাকেন। শেষ রাউন্ডে মেরিকে ৪-১ ব্যবধানেই জিততে হতো, অর্থাৎ চার বিচারকের রায় নিজের দিকে আনতে হতো। সেটা হয়নি, আর সেখানেই বিচারকদের নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি মেরি কম। তিনি বলেন, সবচেয়ে খারাপ যেটা সেটা হলো এখানে কোনও প্রতিবাদ জানানো বা রিভিউয়ের দাবি করার নিয়ম নেই। ফলের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে সেটা গোটা বিশ্ব দেখেছে যে কী হল এখানে! দ্বিতীয় রাউন্ডে আমাকে ৩-২ দেওয়াটা মানতেই পারছি না। উল্লেখ্য, প্রথম রাউন্ডে কিছুটা ব্যাকফুটে থাকলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন মেরি। কিন্তু সেই রাউন্ডের ফল নিয়েও হাজারো প্রশ্ন মেরির মনে, এমনটা যে হতে পারে তা ভাবতেই পারেননি।
হতাশ মেরি
রিও অলিম্পিকেও বিচারকদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর আইওসি-র বক্সিং টাস্ক ফোর্স জানিয়েছিলেন, জাজিং সিস্টেম স্বচ্ছ রাখা হবে। ৩৬ জন অফিসিয়ালকে সাসপেন্ডও করা হয়। মেরি কম নিজে বক্সিং টাস্ক ফোর্সের ১০ সদস্য-বিশিষ্ট অ্যাথলিট অ্যাম্বাসেডর গ্রুপের অন্যতম সদস্য। অলিম্পিক থেকে বিদায়ের পর মেরি বলেন, এক মিনিট বা এক সেকেন্ডের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল। যা হল তা দুর্ভাগ্যজনক। আমি বিচার পদ্ধতি নিয়ে হতাশ।
অবসর নয়
অলিম্পিকে ৪০ বছরের বেশি বক্সাররা অংশ নিতে পারেন না। ফলে মেরির পক্ষে এটাই শেষ অলিম্পিক। কেন না, প্যারিস অলিম্পিক হবে ২০২৪ সালে। তাই মেরিকে আর অলিম্পিক রিংয়ে দেখা যাবে না। কিন্তু এখনই অবসর যে তিনি নিচ্ছেন না সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মেরি কম। বলেছেন, আপাতত বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাব। তারপর কোনও টুর্নামেন্ট থাকলে নিশ্চিতভাবেই সেখানে অংশ নেব। এআইবিএ আইওসি-র স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। প্রশাসনিক স্তরে কিছু বদল আনার পাশাপাশি বক্সারদের অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাউট রিভিউ সিস্টেমও আনা হচ্ছে। মেরি তাকিয়ে সেদিকেই। তাঁর কথায়, এখানে প্রতিবাদ জানাতে না পারলেও নিশ্চিতভাবে কোথাও না কোথাও এদিনের অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাব। মেরি কমের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকেই জয়ী মনে করছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। তিনি টুইটে লেখেন, মেরি কমই আমাদের বিচারে জয়ী। তবে বিচারকদের কৌশল আমাদের বোধগম্য নয়।
For all of us @MangteC was the clear winner but Judges have their own calculations😥 https://t.co/bDxjHFK9MZ pic.twitter.com/gVgSEugq4Q
— Kiren Rijiju (@KirenRijiju) July 29, 2021
Mary Kom, you are a LEGEND.
— Anurag Thakur (@ianuragthakur) July 29, 2021
You’ve shown us what it takes to be the best in the world, not once, but throughout your inspirational career.
Your knockout punches are etched in the memory of every Indian 🇮🇳.@MangteC pic.twitter.com/YTk8fcqK99