মুকুটে জুড়ল আরও এক পালক! একনজরে পিভি সিন্ধুর কেরিয়ারের সাফল্যের খতিয়ান
বিডব্লিউএফ ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালস ২০১৮ জিতলেন পিভি সিন্ধু। দেখে নেওয়া যাক কেরিয়ারে আর কোন কোন মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি।
রবিবার (১৬ ডিসেম্বর), প্রথম ভারতীয় শাটলার হিসাবে ব্য়াডমিন্টনের সবচেয়ে সম্মানজনক টুর্নামেন্ট বিডব্লিউএফ ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালস প্রতিযোগিতা জিতলেন পিভি সিন্ধু। ঘোচালেন তাঁর 'ফাইনালে ব্যর্থ' বদনামও। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে রৌপ্য পদক জয়ের পর থেকে ভারতের ব্য়াডমিন্টনের প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন এই ২৩ বছরের হায়দরাবাদী।
মাত্র ৮ বছর বয়সে ব্যাডমিন্টনে হাতে খড়ি হয়েছিল তাঁর। তারপর ভর্তি হয়েছিলেন পুল্লেলা গোপীচাঁদের অ্যাকাডেমিতে। বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট জিতে প্রথম থেকেই তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফল হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছিলেন। তবে ব্য়াডমিন্টন বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন তিনি ২০১২ সালের চায়না মাস্টার্স সুপার সিরিজে, লন্ডন অলিম্পিকের স্বর্ণপদক জয়ী চিনা শাটলার লি জুরেলুইকে হারিয়ে ।
তাঁর সাফল্যের মুকুটে আরও এক পালক যুক্ত হওয়ার দিনে একনজরে দেখে নেওয়া যাক তাঁর ধূমকেতুর মতো উত্থানের ধাপগুলি।
গাভী, কেরল
কেরলের পতনমতিত্তা জেলায় অবস্থিত রান্নির জঙ্গলের মধ্যে গাভী নামের এই গ্রামটি প্রাকৃতিক শোভা অসাধারণ। কেরল বন দফতরের অভীন এই এলাকা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্র।
বন্দিপেরিয়ার টাউন থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে থাকতে গেলে আগে থেকে বন দফতরের অনুমতি নিতে হয়।
প্রথম গ্র্যান্ড প্রিক্স সোনা
২০১৩ সালে তখনও সিন্ধু এক টিন-এজার। সেই অল্প বয়সেই অত্যন্ত পরিণত ব্য়াডমিন্টন খেলে তিনি সেই বছর মালয়েশিয়া ওপেনে সিঙ্গাপুরের জুয়াম গু-কে হারিয়ে কেরিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড প্রিক্স সোনা জেতেন। এরপর ওই বছরই ম্যাকাও ওপেন গ্র্যান্ড প্রিক্সেও তিনি চ্যাম্পিয়ন হন।
ধনুষকোড়ি, তামিলনাড়ু
পাম্বান দ্বীপে অবস্থিত এই গ্রামটি পক প্রণালীর জন্য এমনিতেই বিখ্যাত। এখানকার পৌরাণিক মাহাত্ম্যও অনেক কারণ বলা হয়, এখানে শ্রী রামচন্দ্র নিজের স্ত্রী সীতাকে লঙ্কা থেকে উদ্ধার করতে 'রাম সেতু' বানিয়েছিলেন।
১৯৬৭ সালে এক ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে গোটা গ্রামটি তছনছ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও পর্যটকদের আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমেনি। কারণ এখানকার সমুদ্র সৈকতগুলির শোভা একেবারে অনন্য।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ইতিহাস
২০১৪ সালেই তিনি ব্যাডমিন্টন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চিনের ওয়াম সিক্সিয়ান-কে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদক পান। এটিই ছিল প্রথম ভারতীয় মহিলা সিঙ্গস খেলোয়াড়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম পদক। শুধু তাই নয় এই প্রতিযোগিতায় পরের বছরও তিনি ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। ওর সঙ্গে ২০১৫ সালে সিন্ধু উবের কাপ, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েল্থ গেমস ও এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপেও ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন।
মিরিক, পশ্চিমবঙ্গ
দার্জিলিংয়ের এই গ্রামটি প্রাকৃতিক শোভার জন্য এমনিতেই বিখ্যাত। এখানকার মূল আকর্ষণ হল সুমেন্দু লেক ও তার চারপাশে ঘিরে থাকা পাইন গাছের জঙ্গল। এখানকার গ্রাম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার শোভা দেখতে অনন্য লাগে।
বড় সাফল্য
মালয়েশিয়া মাস্ট্রার্স গ্যান্ড প্রিক্স জিতে ২০১৬ সালটা শুরু করেছিলেন সিন্ধু। তবে এখনও পর্যন্ত তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম বড় সাফল্য আসে ওই বছরের রিও অলিম্পিকে। ফাইনালে স্পেনের ক্যারোলিনা মারিনের কাছে পরাজিত হলেও তিনি প্রথম ভারতীয় মহিলা সিঙ্গল ব্য়াডমিন্টন খেলোয়াড় হিসেবে অলিম্পিকে রৌপ্য পদক জেতেন।
হর্ষিল, উত্তরাখণ্ড
ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রামটি কৈলাশ পর্বত, মাত্রি পর্বত ও কেদারনাথ পর্বত দিয়ে ঘেরা। এখানকার আপেলের খেত ও ঝরনার দৃশ্য দেখতে বহু পর্যটক সারাবছর এখানে ভিড় জমান।
প্রথম সুপার সিরিজ টাইটেল
২০১৬ বছরটা সিন্ধুর কেরিয়ারে ছিল স্বপ্নের মতো। অলিম্পিকে রূপো জিতে ইতিহাস গড়ার পর, চায়া ওপেনে তিনি চিনের সুন ইউ-কে হারিয়ে জাবনের প্রথম সুপার সিরিজ খেতাব জেতেন। তবে হংকং সুপার সিরিজের ফাইনালে তাঁকে চিনা তাইপেই-এর তাই জু ইং-এর বিরুদ্ধে হারতে হয়।
মালন, হিমাচল প্রদেশ
উত্তর-পূর্বের কুল্লু উপত্যকায় অবস্থিত এই গ্রামটি অনেক পুরনো। এই গ্রামের উপরে প্রচুর তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। এখানকার অধিবাসীরা কানশি নামের একটি উপজাতীয় ভাষায় কথা বলেন এবং নিজেদের আচার খুব কঠোরভাবে পালন করেন।
ক্রমতালিকায় দ্বিতীয়
একের পর এক সাফল্য ২০১৭ সালের শুরুতেই সিন্ধুকে বিশ্ব ব্য়াডমিন্টনের ক্রমতালিকার প্রথম পাঁচে পৌঁছে দিয়েছিল। ইন্ডিয়া ওপেনের ফাইনালে ক্যারোলিনা মারিনকে হারিয়ে অক্টোবর মাসে তিনি ক্রমতালিকার দ্বিতীয় স্থানেও পৌঁছে গিয়েছিলেন। এই বছর ওকুাহারাকে পরাজিত করে তিনি প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে কোরিয়া ওপেনও জেতেন। তবে এই বছরটি সিন্ধুর কেরিয়ারের স্মরণীয় হয়ে থাকবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওকুহারার বিরুদ্ধে ম্য়াচটির জন্য। শেষ পর্যন্ত পরাজিত হতে হলেও ১৯-২২, ২২-২০, ২০-২২ ফলের হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচটি ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ম্য়াচ হিসেবে দেখা হয়।
চাওকোরি, উত্তরাখণ্ড
উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুনে অবস্থিত এই শৈল শহরটির শোভা অসাধারণ। ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত চাওকোরি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে মহাকালী নদী। কয়েকদিন এখানে কাটিয়ে যেতে পারলে বছরভরের প্রাণশক্তি ফেরত পেয়ে যাবেন।
|
শেষ হাসি
২০১৮ সালটা সিন্ধুর বছর হতে পারত। কিন্তু একের পর এক প্রতিযোগিতায় তিনি ফাইনালে উঠেও পরাজিত হয়েছেন। ইন্ডিয়া ওপেন, কমনওয়েল্থ গেমস, থাইল্যান্ড ওপেন, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ - সব প্রতিযোগিতার চিত্রনাট্য একই ছিল। ক্রমতালিকাতেও তিনি নেমে গিয়েছেন ৬ নম্বরে। কিন্তু, বছরের শেষে ব্যাডমিন্টনের সবচেয়ে সম্মানজনক প্রতিযোগিতা বিডব্লিউএফ ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালস-এ জিতে তিনিই শেষ হাসিটা হাসলেন।
মাওলিননং, মেঘালয়
এই গ্রামটিকে এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামের তকমা দেওয়া হয়েছে। শিলং থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মাওলিননং গ্রামটির নৈসর্গিক দৃশ্যও অতুলনীয়।
মুন্সিয়ারী, উত্তরাখণ্ড
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই গ্রামটিতে দিনে দিনে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। গৌরিগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রামটি পর্বতারোহণ ও ট্রেকিংয়ের জন্য পরিচিত।
সামনের বছরেই টোকিও অলিম্পিক। তার আগে এই জয় তাঁকে ফের স্বমহিমায় ফেরাবে বলেই আশা করা যায়।