Chess Olympiad: চেন্নাইয়ে দাবা অলিম্পিয়াড উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী, কোন বার্তা দিলেন মোদী?
বার্মিংহ্যামে কমনওয়েলথ গেমস উদ্বোধনের আগে চেন্নাইয়ে আজ সন্ধ্যায় সূচনা হয়ে গেল ৪৪তম চেস অলিম্পিয়াডের। দাবা অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উপস্থিত ছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর প্রমুখ। নেহরু ইনডোর স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর হাতে চেস অলিম্পিয়াডের মশাল উদ্বোধনের ঠিক আগে তুলে দেন প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ।
|
চেস অলিম্পিয়াডের সূচনা
এরপর অলিম্পিকের মশাল তুলে দেওয়া হয় প্রজ্ঞানন্দ-সহ দাবাড়ুদের হাতে। আজ সূচনা হলো দাবা অলিম্পিয়াডের, চলবে অগাস্টের ১০ তারিখ পর্যন্ত। মামল্লাপুরমের পিঞ্জেরি গ্রামে হচ্ছে চেস অলিম্পিয়াড। আজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে জওহরলাল নেহরু ইনডোর স্টেডিয়াম ও পুঞ্জেরির যেখানে দাবা অলিম্পিয়াডের আসর বসবে সেখানে পরিদর্শন সারেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী। আজ চারটি জেলায় স্কুল, কলেজ ও জরুরি পরিষেবা ব্যতীত সব সরকারি অনুষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছিল তামিলনাড়ু সরকার। চেস অলিম্পিয়াড উদ্বোধন করতে এদিন বিকেলে চেন্নাই পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপর অনুষ্ঠানস্থলে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। চেস অলিম্পিয়াডের সূচনার আগে তামিলনাড়ুর ঐতিহ্য সম্বলিত একটি ভিডিও সকলের সামনে উপস্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী এল মুরুগান প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের কথা তুলে ধরে।
|
মোদীর বক্তব্যে তামিল জাত্যাভিমান
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, তামিলনাড়ুতে অনেক মন্দির রয়েছে। এখানে প্রাণবন্ত সংস্কৃতি যেমন রয়েছে, তেমনই প্রাচীনতম ভাষার নাম তামিল। মন্দিরের গায়ে যে ভাস্কর্যগুলি রয়েছে তাতেও বিভিন্ন খেলাধুলোর বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তামিলনাড়ুর সঙ্গে দাবার ইতিহাসের এক শক্তিশালী যোগাযোগ রয়েছে। এখান থেকে অনেক গ্র্যান্ডমাস্টার উঠে এসেছেন। দাবার সবচেয়ে ঐতিহ্যশালী প্রতিযোগিতাটি ভারতের তামিলনাড়ুতেই হচ্ছে। টোকিও অলিম্পিকে দেশের সাফল্যের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এখন অনেকেই খেলাধুলোকে পেশা হিসেবেও বেছে নিতে আগ্রহী হচ্ছেন। তারুণ্যের অফুরান প্রাণশক্তির সঙ্গে সরকার যথোপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির ফলেই যে সাফল্য আসছে সে কথা উল্লেখ করেছেন মোদী। তিনি বলেন, প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদরা ছোট শহর থেকেও সাফল্য লাভের মাধ্যমে দেশকে গৌরবান্বিত করছেন।
|
নজির গড়ে ভারতে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলায় কেউ পরাজিত হয় না। কেউ হন বিজয়ী, কেউ হন ভবিষ্যতের বিজয়ী। ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের চেয়ে ভালো সময় এর আগে আসেনি। অলিম্পিক, প্যারালিম্পিক, ডেফলিম্পিক্সে ভারত সর্বকালীন সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে। আগে যে ধরনের খেলায় আমরা সাফল্য পাইনি, তেমন খেলার ক্ষেত্রেও সাফল্য এসেছে। খেলা মানুষ ও সমাজকে একত্রিত রাখে। খেলার মাধ্যমেই টিমওয়ার্ক, টিম স্পিরিট যে অটুট থাকে তার কথাও উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, তিন দশকের পর চেস অলিম্পিয়াড এশিয়ায় হচ্ছে। যেখানে দাবার জন্ম সেই ভারতেই প্রথমবার হচ্ছে অলিম্পিয়াড। সবচেয়ে বেশি দেশ অংশ নিচ্ছে। প্রতিযোগীর সংখ্যাও এবারই সবচেয়ে বেশি। মহিলা বিভাগেও সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগী রয়েছেনয চেস অলিম্পিয়াডের প্রথম মশাল দৌড়ের সূচনাও হয়েছে ভারত থেকেই। সকলকে শুভকামনও জানান প্রধানমন্ত্রী।
উচ্ছ্বসিত স্ট্যালিন
তামিলনাড়র মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন বলেন, আজকের দিনটি দেশের জন্য গর্বের দিন। আন্তর্জাতিক দাবা অলিম্পিয়াড এর আগে ভারতের কখনও হয়নি। ফলে প্রথমবার তা তামিলনাড়ুই আয়োজন করছে, এটা দারুণ গর্বের। এরপরই প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে স্ট্যালিন বলেন, আপনি দাবার কতটা অনুরাগী তা আমরা জানি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আপনি ২০ হাজারের বেশি দাবাড়ু নিয়ে বিরাট মাপের চেস ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করেছিলেন। স্ট্যালিন এরপর পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখান, ভারতে দাবায় গ্র্যান্ডমাস্টারদের ৩৬ শতাংশই তামিলনাড়ুর। চেন্নাইকে দেশের দাবার রাজধানী হিসেবেও উল্লেখ করেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী।
জমকালো অনুষ্ঠান
উল্লেখ্য, ভারতে ৭৩ জন গ্র্যান্ডমাস্টারের মধ্যে তামিলনাড়ুরই রয়েছেন ২৬ জন। কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেন, তিন মাসে এমন বড় মাপের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা সহজ নয়। কিন্তু আমাদের দেশ তা করতে পেরেছে। অন্য কোনও দেশ সম্ভবত তা পারতো না। প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানস্থল অবধি আসার পথে স্বাগত জানান মিউজিশিয়ান ও পারকাশনিস্টরা। মোদীর পরনে ছিল শাল এবং ধুতি যার বর্ডার ছিল দাবার বোর্ডের আদলে। স্ট্যালিন পরে এসেছিলেন হলুদ রংয়ের সিল্কের জামা, ধুতি এবং অঙ্গবস্ত্র (শাল)। তামিলনাড়ু বিজেপির শিল্প ও সংস্কৃতি শাখা লোকনৃত্য ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। রাস্তার দুই ধার থেকে ছোড়া হয় ফুলের পাপড়ি। বালুশিল্পী সর্বম প্যাটেল মামল্লাপুরমে মন্দিরের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর মুখাবয়ব তুলে ধরেন।