Exclusive: অলিম্পিকে প্রণতিদের শুভেচ্ছা জানালেন দীপা কর্মকার, দিলেন বিশেষ পরামর্শ
অল্পের জন্য রিও অলিম্পিকে দেশের হয়ে পদক জিততে পারেননি দীপা কর্মকার। কিন্তু বিশ্বেশ্বর নন্দীর আগরতলার এই ছাত্রী উঠতি জিমন্যাস্টদের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণা। চোট ও কোভিড পরিস্থিতিতে অনুশীলনে ব্যাঘাত ঘটায় এবার টোকিও অলিম্পিকে যাওয়া হয়নি অলিম্পিয়ান দীপা কর্মকারের। তবে দীপা নিজে উৎসাহী ভারতের একমাত্র জিমন্যাস্ট প্রণতি নায়েককে টোকিও অলিম্পিকের আসরে দেখার জন্য। সুস্থ ও নিরাপদ থেকে সকলকে ভালো পারফর্ম করার শুভেচ্ছাও জানালেন আগরতলা থেকে ফোনে ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারের মাধ্যমে।
দীপার স্বপ্নের দৌড়
ঝুঁকিপূর্ণ প্রোদুনোভা ভল্ট বিশ্বখ্যাত করেছে ভারতের গর্ব দীপা কর্মকারকে। ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় দলে ছিলেন। ২০১১ সালে জাতীয় গেমসে আসে সোনালি সাফল্য। অলরাউন্ডের পাশাপাশি ফ্লোর, ভল্ট, ব্যালান্স বিম ও আনইভেন বারসে সোনা জেতেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৪ সালে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে মহিলাদের ভল্ট ফাইনালে তিনি ব্রোঞ্জ জেতেন। ২০১৫ সালে হিরোশিমায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জজয়ী দীপা ওই বছরই প্রথম ভারতীয় জিমন্যাস্ট হিসেবে ওয়ার্ল্ড আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার ছাড়পত্র আদায় করেছিলেন।
গর্বিত করেন রিওতে
২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকেও ভল্ট ফাইনালে উঠেছিলেন দীপা, প্রথম ভারতীয় জিমন্যাস্ট হিসেবে। অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হলেও চতুর্থ স্থান অধিকার করে গর্বিত করেন দেশকে। যে প্রোদুনোভা ভোল্টের জন্য দীপার বিশেষ খ্যাতি সেই ভল্ট দীপা ছাড়া বিশ্বের আর মাত্র চারজনই রপ্ত করে পারদর্শিতা দেখাতে পেরেছেন। যদিও চোটের কারণে প্রোদুনোভা ছেড়ে অন্য ভল্টের দিকে ঝুঁকতে হয় তাঁকে। ২০১৭ সালে এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রস্তুত হতে গিয়ে চোটের কবলে পড়েন দীপা। অস্ত্রোপচারও করাতে হয়। এই ইভেন্ট ও ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসেও নামতে পারেননি। তাতেও অদম্য মনের জোর সঙ্গী করে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তুরস্কে এফআইজি আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপে ভল্টে সোনা জেতেন। আন্তর্জাতিক আসরে দেশের প্রথম জিমন্যাস্ট হিসেবে। ওই ইভেন্টেই ব্যালান্স বিমে হন চতুর্থ। ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসের ভল্ট ফাইনালে উঠতে পারেননি, উল্টে ডান হাঁটুতে চোটের কারণে অস্ত্রোপচার করাতে হয়। এর ফলে জাতীয় প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিতে পারেননি।
দীপার শুভেচ্ছা
টোকিও অলিম্পিকে নিজে যেতে না পারলেও প্রণতি নায়েক দেশের একমাত্র জিমন্যাস্ট হিসেবে টোকিওর টিকিট পেতেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানান দীপা। পরামর্শ দেন অনুশীলনে চোট থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে অলিম্পিকের লক্ষ্যে এগোতে। আজ ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে দীপা বলেন, ভারত থেকে যাঁরা অংশ নিচ্ছেন সবাইকেই শুভেচ্ছা। সকলে সুস্থ ও সুরক্ষিত থেকে ভালো পারফরম্যান্স উপহার দিক, সেটাই চাই। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতে কখন কার কী হচ্ছে বলা যায় না। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই গেমস ভিলেজেও থাবা বসিয়েছে করোনা, আক্রান্তদের মধ্যে অ্যাথলিটরাও রয়েছেন। সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তেও শুরু করেছে।
প্রণতিকে নিয়ে
প্রণতি নায়েককে খুব গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন দীপা। রিও অলিম্পিকে মিউজিক বাছাই করতে গিয়ে তাঁকে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। দীপা জানালেন, প্রণতির যাতে এমন সমস্যা না হয় ও জানতে চাইতেই আমি বলি, ভারতীয় মিউজিক পছন্দ করাই সঠিক হবে। অন্য দেশের মিউজিক সিলেক্ট করলেই সমস্যা হয়। কিন্তু ভারতীয় মিউজিকের ক্ষেত্রে সেটা হবে না। উল্লেখ্য, প্রণতি পছন্দ করেছেন 'মাসাল্লাহ মাসাল্লাহ'-র মিউজিক।
সম্ভাবনা কতটা
কন্টিনেন্টাল কোটায় টোকিওর টিকিট পেয়েছেন প্রণতি। ২০১৯ সালে দীপা ছিলেন না ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে। টেবিল ভল্ট ও বিমে সোনা, টিমে ও আনইভেন বারসে রুপো এবং ফ্লোরে ব্রোঞ্জ জিতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন। মঙ্গোলিয়ায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জয় তাঁর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমস, ২০১৭ ও ২০১৯-এর এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০১৮-র বিশ্বকাপ, ২০১৪, ২০১৭ ও ২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার পর এবার দীপার পদাঙ্ক অনুসরণ করে টোকিও অলিম্পিকে অল রাউন্ড বিভাগে নামার ছাড়পত্র আদায় করে নিয়েছেন। দীপার পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে। প্রণতির সম্ভাবনা নিয়ে দীপা বলেন, অনেক দিন প্রণতির সঙ্গে দেখা হয়নি, অনুশীলন দেখারও সুযোগ হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে সকলেই আলাদা আলাদা করে অনুশীলন সারছেন। ফলে অলিম্পিকেই প্রণতির পারফরম্যান্স দেখব। সকলেই নিজেদের কৌশল প্রকাশ্যে আনেন না। আমিও প্রণতিকে অনুশীলনের মাঝে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনি। শুধু চাই প্রণতি ভালো পারফর্ম করুক। তবে ৩৬০ না ৫৪০ ফ্রন্ট বা ব্যাক কী ভল্ট প্রণতিকে প্র্যাকটিস করানো হয়েছে সেই ধারণা আমার নেই।
ফেভারিট যাঁরা
রিও অলিম্পিকে টিম, অল রাউন্ড, ভল্ট ও ফ্লোর এক্সারসাইজে সোনাজয়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিমোন বাইলস এবারও টোকিও অলিম্পিকে ভালো করবেন বলেই ধারণা দীপার। তিনি বলেন, যেটুকু জানতে পেরেছি তাতে বাইলস বাকিদের চেয়ে এগিয়ে। টিম আর ব্যক্তিগত আলাদা হয়। সবমিলিয়ে বলতে হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার জিমন্যাস্টরা ভালো করবেন। জিমন্যাস্টরা যাঁরা অংশ নেবেন তাঁদের সকলকেই আমার শুভেচ্ছা রইল। উল্লেখ্য, বাইলস ছাড়াও যাঁদের দিকে নজর থাকবে তাঁরা হলেন জাপানের কোহেই উচিমুরা, চিনের ট্যাং জিজিং, রাশিয়ার অ্যাঞ্জেলিনা মেলনিকোভা।
দীপার টার্গেট
দীপা নিজে কবে আবার নিজের প্রিয় জায়গায় ফিরতে পারবেন সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। বললেন, আগরতলায় অনুশীলনের জায়গা খুলছে না করোনা পরিস্থিতিতে। তাই ফিটনেস ট্রেনিংয়েই জোর দিচ্ছি। তারই ফাঁকে নজর রাখবেন টোকিও অলিম্পিকের দিকে।
ছবি- সাই মিডিয়া এবং প্রণতি নায়েকের ইনস্টাগ্রাম