দীপা কর্মকারকে নিয়ে এফআইজির স্বীকারোক্তিতেও রহস্য ঘনীভূত! তালিকা থেকে নাম কেন হঠাৎ গায়েব?
রিও অলিম্পিক্সে অল্পের জন্য পদক হাতছা়ড়া হলেও আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সে তাক লাগানো পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের ধ্বজা বিশ্বমঞ্চে উড়িয়েছিলেন দীপা কর্মকার। ভারতের উদীয়মান প্রতিভাদের জিমন্যাস্টিক্সের প্রতি আগ্রহী করতে ভোকাল টনিকের কাজ করেছিল দীপার অনবদ্য পারফরম্যান্স। তবে সম্প্রতি ভারতে জিমন্যাস্টিক্সের মুখ হয়ে ওঠা দীপার আচমকা সাসপেন্ড হওয়া, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নীরবতাই জন্ম দেয় নানা জল্পনার। আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিক ফেডারেশনের দীপাকে সাসপেন্ড করার বিষয়টি স্বীকার করলেও একাধিক কারণে থাকছে নানা রহস্য।
দীপাকে নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত
ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎই লক্ষ্য করা যায় আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিক ফেডারেশন দীপা কর্মকারকে সাসপেন্ড করেছে। কী কারণে সাসপেনশন তা জানানো হয়নি। দীপার ফোন তারপর থেকেই বন্ধ। তাঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী জানান, দীপা নিজেও এই অপ্রত্যাশিত খবরে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছেন। এই অবধি তবু ঠিক ছিল। কিন্তু বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রক্রিয়াই ক্রমাগত রহস্য বাড়াতে থাকে। এমন প্রশ্নও উঠছে, দীপাকে নিয়ে যে খেলা চলছে তা কি অনভিপ্রেত নয়? দীপার প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনে বাধাটাই বা কোথায়? দীপার পাশে থেকে কেন গর্জে উঠছে না দেশের ক্রীড়া মহল?
এফআইজির স্বীকারোক্তিতেও রহস্য
এফআইজি সর্বশেষ যেটা জানাচ্ছে তা হলো, দীপাকে সাময়িক সাসপেন্ড করা হয়েছে। কিন্তু কী কারণে সাসপেনশন তা নিয়ে এখনই কিছু জানাতে নারাজ এফআইজি। রহস্য ক্রমেই ঘনীভূত হয়েছে। কেন না, দীপার সাসপেনশনের ঘোষণার কয়েক দিন পর এফআইজির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, সাসপেনশনের তালিকায় নেই দীপার নাম! প্রশ্ন, তাহলে কি সাসপেনশন উঠে গেল? না, তাও নয়। কেন না, ওই ওয়েবসাইটে ভারতীয় জিমন্যাস্টদের তালিকায় নেই দীপার নাম। বিশ্বমানের জিমন্যাস্টদের তালিকায় শুধু নাম রয়েছে। প্রাক্তনদের তালিকায়? সেখানেও নেই। রয়েছে টুম্পা দেবনাথের নাম। এতেই সংশয় তৈরি হচ্ছে দীপার সাসপেনশন, তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে। যদি নির্দিষ্ট কোনও কারণেই দীপাকে সাসপেন্ড করা হয় তাহলে কেন তা জানানো হবে না? কেন দীপার নাম সাসপেনশন তালিকা থেকে রাতারাতি গায়েব করে দেওয়া হলো? নানা মহলে লুকোছাপাই বা কেন?
প্রশ্নের মুখে বিশ্বেশ্বরের ভূমিকা
ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রের অন্যতম বড় মুখ দীপা কর্মকারের সঙ্গে কোনওভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিষয়টি নিয়ে নাছোড় ত্রিপুরার সংবাদমাধ্যমও। সকলেই চাইছেন দীপা মুখ খুলুন। সন্দেহের তালিকার বাইরে রাখা যাচ্ছে না দীপার দ্রোণাচার্য কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীকে। তিনি দীপার সাসপেনশনের খবর সামনে আসার পর কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, দীপা নাকি অবসর নিয়েছেন! অথচ বিশ্বেশ্বর নন্দীই তার কিছুদিন আগেও দাবি করে এসেছেন, প্যারিস অলিম্পিক্সের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন দীপা। তাহলে? নীরব ভারতের জিমন্যাস্টিক্স সংস্থা থেকে শুরু করে ত্রিপুরার রাজ্য সংস্থাও। কেউ বলছেন, দীপাকে নির্বাসনের খবর শুনেছি। কেউ আবার সে সম্পর্কে নিশ্চিতও নন। আজব ব্যাপার হলো, সত্য অনুসন্ধানে উদ্যোগ নিতেও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এমনও জানা যাচ্ছে, দীপা ট্রায়ালে নেমে অনেকের চেয়ে ভালো পারফর্ম করার পরও আচমকাই সরে দাঁড়ান। কেন? কার অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে? দীপা কর্মকার বহু অ্যাথলিটের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম। তিনি যদি অবসরই নেবেন তার মঞ্চও তো তেমনই রাজকীয় হবে। নিদেনপক্ষে একটা সাংবাদিক সম্মেলন। কিন্তু কোথায় কী? কোন কারণে ফোন বন্ধ রেখে চুপ থাকতে হচ্ছে দীপার মতো তারকাকে?
অলিম্পিয়ান কি নোংরা রাজনীতির শিকার?
ত্রিপুরার দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ, ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত এবং এফআইজি কর্তাদের ঘনিষ্ঠ এক ভারতীয় জিমন্যাস্টিক জাজ, যাঁর সঙ্গে আবার বিশ্বেশ্বরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন এফআইজি কর্তাদের মাধ্যমে দীপার বিষয়টা ভ্যানিশ করে দেওয়ার! চেষ্টা চলছে দীপাকে রাতারাতি প্রাক্তন করে দিয়ে বিষয়টা ঠাণ্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার! এর জন্য অবশ্য অল্প বিস্তর সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এই সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পেতে নানা রাস্তা খোলা রাখছেন দিল্লির ওই জাজ। তবে দিল্লি সুত্রে খবর, জাতীয় জিমন্যাস্টিক সংস্থার বিরোধী পক্ষ গোটা বিষয়টির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছে। বিরোধী গোষ্ঠীর এক কর্তাকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা দেখার পর আমরা বিষয়টি নজরে আনবো কেন্দ্রীয় সরকারের। একই সঙ্গে এফআইজির কাছেও গোটা ঘটনার সত্যটাকে তুলে ধরার জন্য চিঠি দেব। কারণ আমরা চাই ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের গায়ে যাতে কালির দাগ না লাগে। দীপা কর্মকারের প্রতি আমাদের কোনও বিদ্বেষ নেই। কারণ দীপাই ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন। কিন্তু ওঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর কোচিং করানোর পরিবর্তে নজর বেশি ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সে রাজনীতি করার ক্ষেত্রে। নন্দী হুমকি দিতেই পারেন, তা নিয়ে আমরা আতঙ্কিত, ভয়ে সিঁটিয়ে আছি, এটা যেন দ্রোণাচার্য কোচ ভেবে না থাকেন। কারণ যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতেও মজুত রয়েছে। যে মেয়েকে ঘিরে দেশের ১৩০ কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁর বর্তমান পরিস্থিতি দেশের মানুষ জানতে চায়। তাঁকে ঘিরে কেন এত রহস্য, কেন এত প্রশ্ন, কার অঙ্গুলিহেলনে তাঁর এই করুণ পরিণতি?