টোকিও অলিম্পিকে হতাশ করলেন বক্সার বিকাশ ও দীপিকা-প্রবীণ, ব্যাডমিন্টনে মিশ্র দিন
টোকিও অলিম্পিকে শুটারদের পাশাপাশি আজ হতাশ করলেন বক্সার বিকাশ কৃষ্ণন এবং মিক্সড টিম ইভেন্টে ভারতীয় তিরন্দাজরা। বিকাশ যেমন বক্সিংয়ে পদক জয়ের বড় দাবিদার ছিলেন তেমনই এবারই অলিম্পিকের তিরন্দাজিতে চালু হওয়া মিক্সড ইভেন্টে ভারতের পদক জয়ের আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই সাক্ষী থাকতে হল চরম হতাশার। তবে ব্যাডমিন্টনে আজ কাটল মিশ্র দিন। অলিম্পিক অভিষেকে সিঙ্গলসে সাই প্রণীত হারলেও জয় এল ডাবলসে।
ফেভারিট বিকাশের বিদায়
দুটি অলিম্পিকে অংশ নেওয়া ভারতের অভিজ্ঞ বক্সার বিকাশ কৃষ্ণন (বিকাশ কৃষণ যাদব) এদিন নেমেছিলেন ৬৯ কেজি বিভাগে। প্রথম রাউন্ডে তাঁর বিরুদ্ধে দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিলেন জাপানের সেওনরেটস ক্যুইন্সি মেনসাহ ওকাজাওয়া। শুরু থেকেই রিংয়ে আধিপত্য বজায় রাখেন তিনি। ২০১৯ সালে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে রুপোজয়ী এবং ওই বছরই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট এদিন বিকাশকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়ে পৌঁছে গেলেন প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখানে কিউবার তৃতীয় বাছাই রনিল ইগলেসিয়াসের বিরুদ্ধে নামবেন তিনি। ভারতের বক্সিং থেকেই বেশি পদক আসবে বলে মনে করা হচ্ছিল। বিকাশও অন্যতম ফেভারিট ছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রথম রাউন্ডেই বিদায় অবাক করছে সকলকে। হাই ভোল্টেজ লড়াই তাঁর চোখের কাছে কিছুটা কেটেও যায় এদিন। জানা গিয়েছে, কাঁধে সামান্য চোট নিয়ে খেলতে নামাই কাল হল বিকাশের। কাল ভারতের নজর থাকবে ছয়বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এমসি মেরি কম (৫১ কেজি বিভাগ) এবং কমনওয়েলথ গেমসের রুপোজয়ী মণীশ কৌশিকের দিকে।
হারলেন প্রণীত
অলিম্পিকের ব্যাডমিন্টনে পুরুষদের গ্রুপ ডি-তে অবিশ্বাস্যভাবে হারলেন ভারতের বি সাই প্রণীত। ২০১৯ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জজয়ী প্রণীথ বিশ্বের ১৫ নম্বর খেলোয়াড়, তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন বিশ্বের ৪৭ নম্বর ইজরায়েলের মিশা জিলবারম্যান। ৪১ মিনিটের মধ্যেই প্রণীতকে তিনি হারিয়ে দিলেন। খেলার ফল ২১-১৭, ২১-১৫। প্রথম গেমে এক সময় ৮-৪ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও প্রচুর আনফোর্সড এররের মাশুল দিয়ে শেষরক্ষা করতে পারেননি প্রণীত। দ্বিতীয় গেমেও জিলবারম্যান কার্যত কোনও সুযোগ দেননি। ত্রয়োদশ বাছাই প্রণীতের পরবর্তী প্রতিপক্ষ বিশ্বের ২৯ নম্বর নেদারল্যান্ডসের মার্ক কালজুউ।
ডাবলসে জয়
ব্যাডমিন্টনের গ্রুপ পর্যায়ে পুরুষদের ডাবলসে অবশ্য দারুণ জয়ের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিলেন সাত্বিকসাইরাজ রাঙ্কিরেড্ডি ও চিরাগ শেট্টি। গ্রুপ এ-তে তাঁরা এদিন ২-১ ব্যবধানে হারালেন চাইনিজ তাইপের লি ইয়াং ও ওয়াং চি-লিন জুটিকে। ১৭মিনিটে প্রথম গেম ২১-১৬ ব্যবধানে জেতে ভারতীয় জুটি। ২০ মিনিট সময় নিয়ে পরের গেম একই ব্যবধানে জিতে নেন ইয়াং-ওয়াং জুটি। তৃতীয় গেমে রুদ্ধশ্বাস লড়াই ২৯-২৭ ব্যবধানে জিতে স্বস্তি এনে দেন সাত্বিকসাইরাজ ও চিরাগ। কাল মহিলাদের সিঙ্গলস অভিযান শুরু করবেন পিভি সিন্ধু। জে গ্রুপে তাঁর প্রথম প্রতিপক্ষ ইজরায়েলের সেনিয়া পলিকারপোভা। খেলা শুরু ভারতীয় সময় সকাল ৭টা ১০ মিনিটে।
মিক্সড ইভেন্টে ভরাডুবি ও বিতর্ক
টোকিও অলিম্পিকের ঠিক আগেই প্যারিসে তিরন্দাজি বিশ্বকাপের মিক্সড টিম ইভেন্টে সোনা জিতেছিলেন তিরন্দাজ দম্পতি অতনু দাস ও দীপিকা কুমারী। ফলে অলিম্পিকে এই বিভাগে পদক প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। কিন্তু আজ শেষ আটে উঠেও কোরিয়ান তিরন্দাজদের দাপটের কাছে চুরমার হয়ে যায় ভারতের পদক জয়ের স্বপ্ন। ব্যৃাঙ্কিং রাউন্ডে অতনুর চেয়ে এগিয়ে থাকায় পরিকল্পনা বদলে দীপিকার সঙ্গে প্রবীণের জুটিকেই মিক্সড ইভেন্টে নামানো হয়েছিল। নিয়ম মেনে এতে কোনও ভুল ছিল না বলে দাবি ভারতের চিফ কোচ মিম বাহাদুর গুরুংয়ের। অতনু-দীপিকা জুটিকে নামানোর সুযোগ থাকলেও ভারত সেই পথে হাঁটেনি। এতে হতাশ ছিলেন দীপিকাও, এই সিদ্ধান্তের মাশুল দিতে হল বলে মনে করেন তিনি। যদিও ভারতীয় কোচ বলেন, যেহেতু প্রবীণের পারফরম্যান্স অতনুর চেয়ে ভালো ছিল তাই প্রবীণকে বঞ্চিত করা ঠিক হতো না। তাছাড়া অতনুও হারতে পারতেন, তখন কাকে দোষারোপ করা হতো? এদিন বিশ্বের ১ নম্বর ব্র্যাডি এলিসন-সমৃদ্ধ মার্কিন মিক্সড টিমের অপ্রত্যাশিত ছিটকে যাওয়ার উদাহরণ টেনে ভারতের চিফ কোচ বলেন, এটা খুব নিষ্ঠুর খেলা। উত্থান-পতন থাকেই। প্রবীণ ও দীপিকা অনুশীলনে ৩৮/৩৯ লাগাতার স্কোর করেন। কিন্তু এদিন তিনটি পারফেক্ট টেন মারার পর হঠাৎ প্রবীণ ছয় মেরে বসবেন তা কেউ প্রত্যাশা করেননি। বাড়তি কিছু করতে গিয়েই সম্ভবত এই বিপত্তি। যাতে চুরমার হল তিরন্দাজিতে একটি কার্যত নিশ্চিত মনে করা একটি পদক।