ধাবার কর্মী থেকে ভারতের কবাডি তারকা, বিস্ময়কর উত্থান এই সোনার মেয়ের
ভারতের মহিলা কাবাডি দলের অন্যতম তারকা কবিতা ঠাকুর। তাঁর পথ চলা শুরু হয়েছিল মানালিতে একটি ধাবার কর্মী হিসেবে। ২০১৪ সালের পর এবারও এশিয়াডে সোনা জেতার স্বপ্নে বিভোর তিনি।
এশিয়ান গেমস ২০১৮-য় চ্যাম্পিয়নের মতোই শুরু দৌড় শুরু করেছে ভারতের মহিলা কাবাডি দল। রবিবার প্রথম রাউন্ডে উড়িয়ে দিয়েছে জাপানকে। ২০১৪ সালে গেমসে সোনা জিতেছিল ভারতের মেয়েরা। আর এই দলেরই একজন হলেন হিমাচল প্রদেশের কবিতা ঠাকুর। অবিশ্বাস্য হলেও মাত্র কয়েক বছর আগেও তিনি মানালি কাছে এক ধাবায় বাসন মাজতেন, সাফ সুতরো করতেন।
মানালি থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে জগতসুখ গ্রাম। সেই গ্রামেই থাকতেন কবিতা ও তাঁর পরিবার। গ্রামের নাম জগত সুখ হলেও সুখে থাকার বিশেষ অবকাশ শৈশব বা কৈশোরে হয়নি কবিতার। বাবা পৃথিবী সিং ও মা কৃষ্ণা দেবী ওই ধাবাটি চালাতেন। কবিতা ও তাঁর দিদি তাঁদের সাহায্য করতেন।
দারীদ্রেই কেটেছে কবিতার ছোটবেলা। শীতকালে হিমাচল প্রদেশের প্রচন্ড ঠান্ডাতেও ওই ধাবার পিছনেই একটি ঘরে মাটিতে শুয়ে কাঁপতে কাঁপতে রাত কাটাতে হত। তোষক কেনার পয়সাও ছিল না। যেদিন বিক্রিবাটা হত না সেইদিনটা যেত অনাহারে।
কিন্তু সবটা বদলে দিয়েছে কাবাডি। বিশেষ করে ২০১৪ এশিয়াডে সোনা জিতে ফেরার পর তাঁর উপর প্রচারের আলো পড়ে। হিমাচল প্রদেশ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সাহায্যও করা হয়। এখন জগতসুখের সেই ধাবাটি ছেড়ে কবিতার পরিবার এসে উঠেছে মানালি শহরের এক ভাড়া বাড়িতে। খবিতা জানিয়েছেন বাবা-মায়ের হাতে নতুন বাড়ির চাবি তুলে দেওয়াটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ছিল। কবিতা ও তাঁর দিদির সুযোগ হয়নি, কিন্তু তাঁদের ছোটভাই অশোককে ভাল করে পড়াসোনা করাচ্ছেন কবিতা।
কবিতা কাবাডি খেলা শুরু করেছিলেন ২০০৭-এ, স্কুলে পড়ার সময়। তিনি জানান, কাবাডি খেলতে বিশেষ পয়সা লাগে না। তাই তিনি কাবাডি খেলাটাকে বেছে নিয়েছিলেন। তবে তাঁর সামনে উদাহরণ ছিল দিদির। খবিতার মতে তাঁর থেকেও কাবাডিটা ভাল খেলতেন তাঁর দিদি। কিন্তু বাবা-মাকে ধাবার কাজে সাহায্য করতে গিয়ে তাঁর সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলা হয়নি।
তবে তারপর থেকেই যে সব ভাল গিয়েছে তা নয়। আরও একবার বিপর্ষয় নেমে এসেছিল কবিতার জীবনে। ২০১১ সালে প্রবল হজমের সমস্যায় ভুগতে হয়েছিল। প্রায় ছয় মাস খেলার বাইরে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু তারপর দারুনভাবে ফিরে এসেছিলেন তিনি। ২০১২ সালে এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০১৪ সালে এশিয়াডে ভারতীয় দলকে জেতার ব্যাপারে সাহায্য করেন তিনি।
আগে অলরাউন্ডার হিসেবে খেলতেন, কিন্তু দু বছর ধরে জাতীয় কোচের পরামর্শে এখন ডিফেন্ডার হয়ে গিয়েছেন। এবারের এশিয়াডে সোনা ধরে রাখার ব্যাপারেও তাঁর উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল ভারতীয় দল।