নাদাল থেকে রোনাল্ডো, হিউজ কিংবা বাউচার, খেলার দুনিয়াকে স্তম্ভিত করেছে ক্রীড়াবিদদের চোট
খেলার মাঠে বিভিন্ন সময় চোট পেয়েছেন অনেক ক্রীড়াবিদ। কেউ তা সারিয়ে মাঠে ফিরেছেন। কারও বা শেষ হয়ে গিয়েছে কেরিয়ারই। চলতি সপ্তাহে রাফায়েল নাদালের ক্যালেন্ডার স্ল্যাম জেতার স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে পেটের পেশির চোট। সরে দাঁড়াতে হয়েছে সিঙ্গলস সেমিফাইনাল থেকে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ক্রীড়াক্ষেত্রে কাদের চোট কীভাবে প্রভাব ফেলেছে ক্রীড়াবিদদের কেরিয়ারে।
ফুটবল মাঠে
ফুটবল মাঠে চোটের কারণে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলা হয়নি বিশ্বের তিন নক্ষত্রের। ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ হয়েছিল ব্রাজিলে। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে চোটের কারণে বাইরে চলে যেতে হয়েছিল নেইমারকে। কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার ক্যামিলো জুনিগা যেভাবে নেইমারকে আঘাত করেছিলেন তাতে ভার্টিব্রার চোট তাঁর বিশ্বকাপ অভিযানই শেষ করে দেয়। ২০১৬ সালের ইউরো ফাইনালে পর্তুগাল মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্সের। দিমিত্রি পায়েতের সঙ্গে সংঘর্ষে চোট পেয়ে ৯ মিনিটের পরই মাঠ ছেড়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সেবার অবশ্য ট্রফি জেতে পর্তুগাল। ২০১৮ সালে সেভিয়ার বিরুদ্ধে দুরন্ত খেলছিলেন লিওনেল মেসি। ম্যাচ চলাকালীন আচমকাই চোট পান লিওনেল মেসি। বার্সেলোনার তারকাকে এই চোট কয়েক সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। তাতে অবশ্য বার্সার লা লিগা জয় আটকায়নি।
টেনিসের কোর্টে
ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে রাফায়েল নাদালের বিরুদ্ধে খেলার সময় গোড়ালিতে চোট পান আলেকজান্ডার জেরেভ। ছিটকে যান টুর্নামেন্ট থেকে। অস্ত্রোপচার হয়েছে, কবে কোর্টে ফিরবেন স্পষ্ট নয়। নাদাল পেটের পেশি ছেঁড়ায় সরে দাঁড়ান চলতি উইম্বলডন সেমিফাইনাল থেকে। ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছেন নিক কির্গিয়স। হাঁটুর চোটের কারণে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে রজার ফেডেরারকেও। তিনি এবার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামেই নামতে পারবেন না। তবে চলতি বছরের শেষের দিকে কোর্টে ফেরার আশা রয়েছে। ২০০৫ সালে মারাত্মক চোট পেয়েছিলেন ব্রিটেনের ১ নম্বর তারকা অ্যান্ডি মারে। পড়ে গিয়েছিলেন আচমকাই। তারপরও চোট নিয়ে খেলা চালিয়ে যান। তবে পরাজয় এড়াতে পারেননি।
মোটরস্পোর্টে দুর্ঘটনা
মোটরস্পোর্টের জগতেও মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। চোট পান ড্রাইভাররা। ১৯৯৪ সালের ১ মে ব্রাজিলের কিংবদন্তি আয়রটন সেন্না (Ayrton Senna) সান মারিনো গ্রাঁ প্রি-তে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান। ঠিক তার আগের দিন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যান আরেক ড্রাইভার রোলান্ড রাতজেনবার্গার। দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন রুবেনস বারিসেল্লো। তারপরও পরের দিন রেসের অনুমতি দেওয়া হয় এবং তাতে সেন্না প্রাণ হারান। ১৯৫৫ সালে মার্সিডিজ বেঞ্জ নিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পজডেন পিয়ের লেভেগ। তাঁর গাড়িটির অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল এবং উড়ে গিয়ে পড়ে দর্শকদের মধ্যে। তার জেরে মারাত্মক বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৮০ জন, আহত হন শতাধিক। এরপর প্রায় ৩০ বছর মার্সিডিজ রেসে অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিল।
রাগবিতে চোট
রাগবিতেও অনেক চোট-আঘাতের ঘটনা ঘটেছে। ১৯৮৬ সালে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ব্রুক শেলফোর্ড ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচ চলাকালীন অণ্ডকোষে চোট পেয়েছিলেন, দাঁতও পড়ে গিয়েছিল। এই ম্যাচটি Battle Of Nantes বলে চিহ্নিত। ২০১১ সালে ওয়েলস ফ্লাইব্যাক মর্গ্যান স্টডার্টের বাঁ পা ভেঙে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রাগবি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ চলাকালীন। এই চোটের ফলে তাঁকে ১৪ মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয়। অনুশীলনও করতে পারছিলেন না। ফলে অবসর ঘোষণা করে দেন।
ক্রিকেট মাঠে
১৯৯৮ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে ঢাকা মহমেডানের বিরুদ্ধে ফিল্ডিং করার সময় মাথায় চোট পাওয়ার তিনদিন পর মারা যান ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার রামন লাম্বা। ২০১৪ সালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিরুদ্ধে খেলছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ফিলিপ হিউজ। সিন অ্যাবটের বাউন্সারে মাথায় চোট পান। মাঠেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে যান। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয়। ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালীন ওয়ার্ম-আপ সেশনে চোট পেয়েছিলেন যুবরাজ সিং। এরপরও তিনি খেলা চালিয়ে যান, কিন্তু হাঁটুর সেই চোট তাঁকে ভোগাত। ফিল্ডিংও করতেন সতর্ক হয়ে। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার সমারসেটের বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস ম্যাচ চলাকালীন চোখে চোট পেয়েছিলেন। বোলার ছিলেন ইমরান তাহির। চোখে অস্ত্রোপচার করান, কিন্তু দৃষ্টিশক্তি আংশিক চলে যাওয়ায় পরে আর খেলতে পারেননি।