স্বাধীনতার ডায়মন্ড জুবিলির প্রাক্কালে ফিরে দেখা বিগত ৭৫ বছরে ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য
স্বাধীনতার ডায়মন্ড জুবিলির প্রাক্কালে ফিরে দেখা বিগত ৭৫ বছরে ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে এই বছর। ২০২২ সালের ১৫ অগস্ট সারা দেশে পালিত হবে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি। ১৯৪৭ সালে প্রায় ২০০ বছররের পরাধীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নতুন করে গড়ে উঠেছে ভারতের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিকাঠামো। এরই সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে গিয়েছে ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারত। অলিম্পিকের মঞ্চ হোক কিংবা বিশ্বকাপের আসর, ভারতীয় দল শ্রেষ্ঠত্বের নজির স্থাপন করেছে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন খেলার মধ্যে দিয়ে। দেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের মনে ক্রিকেট চিরস্থায়ী জায়গা করে নিলেও হকি, ফুটবল, কবাডি, ব্যাডমিন্টন, ভরোত্তোলন, বক্সিং, কুস্তি, জুডো, টেবিল টেনিস, তিরন্দাজি, শ্যুটিং, জ্যাভলিন থ্রো, টেনিসও সমান আগ্রহ দিয়ে দেখে ক্রীড়াপ্রেমি ভারতবাসী।
১৯৪৮ লন্ডন অলিম্পিকে হকিতে সোনা জয়:
পরাধীন ভারত একাধিক বার অলিম্পিকে সোনা জিতলেও স্বাধীনতার পর প্রথম বার ভারত সোনা জেতে ১৯৪৮ সালে লন্ডন অলিম্পিকে। এ ছাড়াও ১৯৫২, ১৯৫৬, ১৯৬৪ এবং ১৯৮০ অলিম্পিকে হকিতে সোনা জেতে ভারত।
১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ায় হকি বিশ্বকাপ জয়:
১৯৭৫ সালে প্রথমবার হকি বিশ্বকাপ জেতে ভারত। এটি ছিল হকি বিশ্বকাপের তৃতীয় সংস্করণ। ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ভারতের হয়ে দু'টি গোল করেছিলেন সুরজিৎ সিং এবং অশোক কুমার। এর আগে রূপো এবং ব্রোঞ্জ পেলেও বিশ্বকাপের মঞ্চে এই প্রথম সোনা জিতেছিল ভারত।
১৯৮৩ সালে লর্ডসের মাটিতে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়:
ভারতের কোটি কোটি মানুষ যেই খেলাকে কেন্দ্র করে আন্দোলিত হয়, যেই খেলা হাজারে-হাজারে মানুষকে স্টেডিয়ামে নিয়ে আসতে পারে সেটি ক্রিকেট। ক্রিকেট প্রধান ভারত প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য পেয়েছিল ১৯৮৩ সালে। ইংল্যান্ডের মাটিতে কপিলে দেবের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। ঐতিহ্যশালী লর্ডসে সেই সময়ে দুই বারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৩ রানে হারিয়েছিল ভারত।
২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপ:
২০১১ সালে দ্বিতীয় বার একদিনের ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। এর আগে ২০০৩ সালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেছিল ভারত। উল্লেখ্য, ধোনি যেই দল নিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন সেই দলের অর্ধেকের বেশি ক্রিকেটারকে ভারতীয় দলে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বলা হয়, সৌরভের বানানো দল নিয়েই বিশ্বকাপ জেতেন ধোনি। ২০০৭ সালে টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম সংস্করণেই জিতেছিল ভারত। হারিয়েছিল পাকিস্তানকে।
এশিয়ান গেমস:
১৯৫১ সালে প্রথম বার এশিয়ান গেমস আয়োজন করে ভারত। দেশের রাজধানী নয়া দিল্লিতে এই প্রতিযোগীতা আয়োজিত হয়েছিল। ওটাই ছিল এশিয়ান গেমসের প্রথম সংস্করণ। অলিম্পিকের পর দ্বিতীয় সর্ব বৃহত্তম মাল্টি স্পোর্টস ইভেন্ট হল এশিয়ান গেমস। ১৯৮২ সালে শেষ বার ভারতে আয়োজিত হয়েছিল এশিয়ান গেমস। ১৯৮২ সালে এশিয়ান গেমসে পদক তালিকায় পঞ্চম স্থানে ছিল ভারত। ১৩টি সোনা, ১৯টি রূপো এবং ২৫টি ব্রোঞ্জ নিয়ে মোট ৫৭টি পদক পয়েছিল আয়োজক দেশ ভারত।
ফুটবল:
এশিয়ান গেমসে প্রথম ফুটবলে সোনা জয়ী দল ভারত। ১৯৫১ সালে উদ্বোধনী সংস্করণে ফুটবলে সোনা জিতেছিল ভারত। এর পর ১৯৬২ সালে ইন্দোনেশিয়ায় আয়োজিত এশিয়ান গেমসে ফুটবলে ফের সোনা জেয়ে ভারত। ১৯৭০ সালে ব্যাংককে এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জেতে ভারত। ২০১৭ সালে ভারতের মাটিতে আয়োজিত হয় অনূর্ধ্ব-১৭ ফিফা বিশ্বকাপ। ভারতের মাটিতে এটিই ছিল ফিফার আয়োজিত প্রথম টুর্নামেন্ট।
ব্যাডমিন্টন:
১৯৮০ সালে প্রকাশ পাডুকন ইংল্যান্ড ওপেন ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। ১৯৮৩ সাল ব্যাডমিন্টন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতেন প্রকাশ। ২০১৩, ২০১৪ সালে পিভি সিন্ধু এই ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জেতেন। এই ইভেন্টে রূপো জিতেছেন সাইনা নেহওয়াল। ২০১৯ সালে ব্যাডমিন্টন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন পিভি সিন্ধু।
দাবা:
২০০০ সালে বিশ্বনাথন আনন্দ বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন বিশ্বনাথন আনন্দ। এর পর থেকে এখনও পর্যন্ত মোট পাঁচ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এই কিংবদন্তি দাবাড়ু। সদ্য আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশনের সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্বনাথন আনন্দ। ২০২২ সালে ভারতের মাটিতে প্রথম বার আয়োজিত হয়েছে ৪৪তম দাবা অলিম্পিয়াড।
অলিম্পিক:
২০০৮ সালে অলিম্পিকে ভারতকে সোনা এনে দেন অভিনব বিন্দ্রা। অলিম্পিকের ইতিহাসে ব্যক্তিগত ইভেন্টে এটিই ভারতের প্রথম ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা। দ্বিতীয় ক্রীড়াবীদ হিসেবে সদ্য সমাপ্তা ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে সোনা জেতেন জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়া। প্রথম বার ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের ইভেন্টেএটিই ভারতের প্রথম সোনা। ২০০৮ বেজিং অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতেন বিজেন্দ্র সিং। ২০১৬ এবং ২০২০ অলিম্পিকে ভারতের হয়ে পদক জেতেন তারকা সাটলার পিভি সিন্ধু। ১৯৫২ সালে হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে কেডি যাদব ভারতকে ব্রোঞ্জ এনে দেন। ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকে ভারতকে রূপো এনে দেন রাজ্যবর্ধন সিং রাঠৌর।
কমনওয়েলথ গেমস:
২০১০ সালে দিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করে ভারত। এখনও পর্যন্ত কমনওয়েলথ গেমসের আসরে এই সংস্করণেই সব থেকে বেশি সাফল্য পেয়েছিল ভারত। ৩৮টি সোনা ২৭টি রূপো এবং ৩৬টি ব্রোঞ্জ পেয়েছিল ভারত। দেশ ভাগের পর প্রথম বার ভারতের হয়ে কমনওয়েলথ গেমসে সোনা পান মিলখা সিং। ১৯৫৮ সালে কমনওয়েলথ গেমসে ৪৪০ গজের বিভাগে সোনা জেতেন তিনি। ১৯৬৬ কমনওয়েলথ গেমসে রেসলিং-এ সোনা জেতেন মুখতার সিং, বিশম্বর সিং এবং ভীম সিং। ২০১৮ সালে নীরজ চোপড়া সোনা জেতেন কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের হয়ে। এছাড়াও জিতু রাই, মানু ভাকরে এবং অন্যান্যরা সোনা পয়েছিলেন এই ইভেন্টে।
ক্রীড়াক্ষেত্রে নিজের দ্যুতিতে উজ্জ্বল ভারত:
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে এই বছর। ২০২২ সালের ১৫ অগস্ট সারা দেশে পালিত হবে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি। ১৯৪৭ সালে প্রায় ২০০ বছররের পরাধীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নতুন করে গড়ে উঠেছে ভারতের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিকাঠামো। এরই সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে গিয়েছে ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারত। অলিম্পিকের মঞ্চ হোক কিংবা বিশ্বকাপের আসর, ভারতীয় দল শ্রেষ্ঠত্বের নজির স্থাপন করেছে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন খেলার মধ্যে দিয়ে।দেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের মনে ক্রিকেট চিরস্থায়ী জায়গা করে নিলেও হকি, ফুটবল, কবাডি, ব্যাডমিন্টন, ভরোত্তোলন, বক্সিং, কুস্তি, জুডো, টেবিল টেনিস, তিরন্দাজি, শ্যুটিং, জ্যাভলিন থ্রো, টেনিসও সমান আগ্রহ দিয়ে দেখে ক্রীড়াপ্রেমি ভারতবাসী।