হৃদয় দিয়ে লড়াই করে হেভিওয়েট বক্সিং-এ বিশ্বসেরাই হয়ে থাকলেন মেওয়েদার
বক্সিং-এর সেরা হওয়া র যুদ্ধে শেষ হাসি হাসলেন ফ্লয়েড মেওয়েদার। ১২ রাউন্ডের তীব্র প্রতিযোগিতায় হার মানলেন কনর ম্যাকগ্রিগর।
শুধু কিলার ইনস্ট্রিংক্ট থাকলেই হয় না, থাকতে হয় পারফেক্ট গেম প্ল্যান এবং হৃদয় দিয়ে লড়াইকে বোঝার ক্ষমতা। আর এই জায়গাতেই আয়ারল্যান্ডের কনর ম্যাকগ্রিগরকে মাত করে দিলেন ফ্লয়েড মেওয়েদার। অবসর ভেঙে বক্সিং-এর ইতিহাসের অন্যতম 'মানি ফাইট'-এ নেমে মেওয়েদার বোঝালেন, কেন তিনি এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা।
[আরও পড়ুন:এক ম্যাচেই শত শত কোটি টাকা, যে কোনও খেলোয়াড়ের কাছে ঈর্ষার পাত্র মেওয়েদার]
২৭ অগাস্ট রাতে লাস ভেগাসের টি-মোবাইল এরেনাতে তিল ধারণেরও জায়গা ছিল না। জুন মাসে ফ্লয়েড মেওয়েদার ও কনর ম্যাকগ্রিগর-এর মধ্যে লড়াই-এর দিনক্ষণ চূড়ান্ত হতেই শুরু হয়েছিল হেভিওয়েট বিশ্ব বক্সিং-এর এই ম্যাচ নিয়ে তুমুল উত্তেজনা। দিন যত এগিয়েছে ততই বিশ্বজুড়ে ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে চড়েছে উত্তেজনার পারদ।
টানা ৪৯টি লড়াই জিতে হেভিওয়েট বক্সিং-কে বিদায় জানিয়েছিলেন মেওয়েদার। তাই সকলেরই প্রশ্ন ছিল বুড়ো মেওয়েদার বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ ম্যাকগ্রিগরের সঙ্গে পারবেন তো? এদিন ১২ রাউন্ডের এই 'মোস্ট হাইপড বাউট' শুরু হতেই ম্যাকগ্রিগরও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মেওয়েদারের উপরে। প্রথম রাউন্ডে এক আপার-কাটে গোটা টি-মোবাইল এরেনার দর্শকদের শ্বাস বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ম্যাকগ্রিগর প্রথম থেকে এতটাই আক্রমণাত্মক ছিলেন যে কয়েকবার নিয়ম বহির্ভূতভাবে মেওয়েদারের মাথার পিছনেও পাঞ্চ মারেন। কিন্তু, মেওয়েদার যে এতে বিন্দুমাত্র ভয় পেয়ে যাননি, তা তিনি রিঙের মধ্যে হাঁটা-চলাতেই বুঝিয়ে দিচ্ছেলেন। আসলে মেওয়েদার অপেক্ষা করছিলেন ম্যাকগ্রিগরের শরীরে ক্লান্তি নামার। কারণ, প্রথম থেকেই ম্যাকগ্রিগর অযথা আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে এনার্জি খরচ করে ফেলেছিলেন। আর বাউটের মাঝ পথে ম্যাকগ্রিগরের এই ক্লান্তিরই সুযোগ নিলেন মেওয়েদার। অভিজ্ঞতা দিয়ে একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদের মতোই ম্যাকগ্রিগরকে ১০ রাউন্ডের মধ্যেই মাত করে দেন তিনি। বোঝান, খেলায় আক্রমণ থাকবে, কিন্তু তারসঙ্গে হৃদয় এবং মাথার সংযোগ যদি স্থাপন না করা যায় তাহলে সেই লড়াইয়ের কোনও ভবিষ্যৎ নেই।
ম্যাকগ্রিগরকে মাত করতে মাত্র দু'টো রাউন্ড নিয়েছিলেন মেওয়েদার। নয় নম্বর রাউন্ডে তিনি এমনভাবে আক্রমণ করেছিলেন যার জবাব দেওয়ার মতো ক্ষমতা ছিল না ম্যাকগ্রিগরের। এই জয়ের সুবাদে টানা ৫০টি লড়াই-এ অপরাজিত থেকে এক নয়া নজিরও গড়লেন মেওয়েদার।
জয়ের পর মেওয়েদার একজন বড়মাপের ক্রীড়াবিদের মতোই জানান, 'আমার ধারণার থেকেও অনেক বড় লড়াকু ম্যাকগ্রিগর। কিন্তু, আমি তার থেকে অনেক বড় মানুষ। আমি হলফ করে বলতে পারি, আমি যে লড়াই করেছি তাতে বক্সিং-এর মর্যাদা অক্ষুন্ন থেকেছে।' হেরে গিয়ে অবশ্য ক্লান্তিকেই দায়ী করেছেন ম্যাকগ্রিগর। এই হারে যে তিনি দমছেন না তাও জানিয়েছেন বছর উনত্রিশের ম্যাকগ্রিগর। তিনি ফের হেভিওয়েট বক্সিং-এ রিঙে ফিরবেন বলেই দাবি করেছেন। বিশ্ব হেভিওয়েট বক্সিং-এর এই হাইপড হওয়া ম্যাচ জিতে মেওয়েদার পেলেন ৩০০ মিলিয়ন ডলার। টাকার অঙ্কে যা মাপতে গেলে হয়তো গোলমাল হয়ে যাবে সমস্ত হিসেব।