ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের উপর চাপ বাড়ছে, বিজেপি সাংসদ তথা ভারতীয় কুস্তি সংস্থার প্রধান আগেও জড়ান বিতর্কে
ভারতের কুস্তি সংস্থার প্রধান ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং উত্তরপ্রদেশের দাপুটে বিজেপি নেতা। আগেও তাঁর নাম জড়িয়েছে একাধিক বিতর্কে।
ভারতীয় কুস্তিগীরদের প্রতিবাদের জেরে এবার টলমল কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতির আসন। ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে উঠেছে যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ। তাঁকে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের তরফে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে বলে খবর। ব্রিজ ভূষণের নেতৃত্বাধীন ভারতের কুস্তি ফেডারেশনে একাধিক কুকর্মের অভিযোগ তুলেছেন অলিম্পিক, কমনওয়েলথ গেমসে পদকজয়ীরা।
ব্রিজ বাহুবলী
ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং ৬ বারের সাংসদ। পাঁচবার জিতেছেন বিজেপির টিকিটে। ২০০৯ সালের নির্বাচনে তিনি জিতেছিলেন সমাজবাদী পার্টির টিকিটে। গোন্ডা, কাইসেরগঞ্জ ও বলরামপুর আসন থেকে জিতে সাংসদ হন। বর্তমানে তিনি কাইসেরগঞ্জের সাংসদ। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের দাবি, যদি এই অভিযোগগুলির প্রমাণ কেউ জনসমক্ষে দিতে পারেন আমি নিজে গলায় দড়ি দেব। আমি ১০ বছর ধরে ফেডারেশন সভাপতি, তবে কুস্তির প্রশাসনে রয়েছি ২০০৮ থেকে। আমি এফআইআর, সিবিআই তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। দেশের সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থারও মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। কলঙ্কিত হয়ে পদত্যাগে ইচ্ছা নেই ব্রিজ ভূষণের। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি তবুও বলেছেন, ২২ তারিখ ফেডারেশনের এগজিকিউটিভ কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানকার সিদ্ধান্ত মেনেই চলব। আমি দেশের ঊর্ধ্বে নই।
দাপুটে নেতা
ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মহিলা কুস্তিগীরদের যৌন নির্যাতন বা হেনস্থা করার। ভিনেশ ফোগাট, আনশু মালিকরা সরব হয়েছেন। ফেডারেশন সভাপতি জাতীয় শিবিরে গেলে মহিলা কুস্তিগীররা অস্বস্তি বোধ করেন। জুনিয়র পর্যায়ের মেয়েদের ফ্লোরেই থেকে ঘরের দরজা ব্রিজ ভূষণ খুলে রাখেন বলেও অভিযোগ। যা ফেডারেশন সভাপতি তথা বিজেপির প্রভাবশালী নেতা খণ্ডন করলেও তাঁর উপর চাপ বাড়ছেই। এক শিল্পপতি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে পাল্টা অভিযোগ ব্রিজের, যার পিছনে নাকি মদত রয়েছে কংগ্রেসেরও। ব্রিজের স্ত্রী গোন্ডা জেলা পঞ্চায়েতের সভাপতি। তাঁর পুত্র প্রতীক ভূষণ সিং গোন্ডা সদরের বিধায়ক।
বাবরি ধ্বংস ও দাউদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ
এর আগেও নানাবিধ বিতর্কে জড়িয়েছেন ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং। ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসে তিনি অন্যতম অভিযুক্ত। অল্প বয়সে নিজেও কুস্তিগীর ছিলেন। নব্বইয়ের দশক থেকেই রাজনীতিতেও বাহুবলী বলে পরিচিতি লাভ করেন ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তাঁর বিরুদ্ধে টাডা আইনে মামলা দায়ের হয়েছিল। দাউদ ইব্রাহিমের সহযোগীদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ। এমনকী দাউদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য দাউদের সহযোগীদের নিজের ফোনও ব্রিজ দেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও পরে অভিযোগগুলি থেকে তিনি রেহাই পান।
একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন
২০১৯ সালের নির্বাচনী হলফনামায় তিনি জানিয়েছিলেন, অযোধ্যা ও গোন্ডায় তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলা বিচারাধীন। ডাকাতি, হত্যা, দাঙ্গা বাঁধানোর মতো নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর ঘনিষ্ঠ রবীন্দর সিংয়ের এক হত্যাকারীকে তিনি খুন করেছিলেন বলেও এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং। ফেডারেশনের সভাপতি পদে এক দশক ধরে থাকলেও ফেডারেশন পরিচালনা নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। একবার এক অনুষ্ঠানে ব্রিজ এক কুস্তিগীরকে সপাটে চড় কষান বলে অভিযোগ।
বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিরোধ
তিনি গত বছর গোন্ডা জেলা-সহ নানা জায়গায় বন্যাত্রাণের বন্দোবস্ত নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন উত্তরপ্রদেশ সরকারের। সত্য কথা বলার জন্য তাঁকে দলে বিদ্রোহী তকমা দেওয়া হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন। যখন রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবমির্মাণ সেনার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক ভালো ছিল তখন রাজকে অযোধ্যায় ঢুকে শিক্ষা দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন ব্রিজ। উত্তরপ্রদেশ বিজেপির একাধিক নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ার কথাও কারও অজানা নয়। যোগগুরু রামদেব ও তাঁর সংস্থার উৎপাদিত সামগ্রীর সমালোচনাতেও পিছপা হননি ব্রিজ। সম্প্রতি যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত হয়ে হরিয়ানার মন্ত্রী সন্দীপ সিং পদত্যাগ করেছেন। ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং কোনও মন্ত্রী নন। তবে বিজেপি সাংসদ। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে বিজেপি কী করে সেদিকে তাকিয়ে বিরোধীরাও। তবে যেভাবে ব্রিজকে সরানোর দাবি জোরালো হয়েছে, তাতে এর পিছনে প্রভাবশালী মহলের হাত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।