তৃণমূলের চিঠি শিশির ও দিব্যেন্দুকে, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে ফের জমে গেল খেলা
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংসদ ভবনে গিয়ে ভোট দিয়ে শিশির অধিকারী দাবি করেছিলেন, তিনি তৃণমূলে ছিলেন, আছেন, থাকবেনও। দল তাঁকে আক্রমণ করলেও তৃণমূল তিনি ছাড়েননি। দলের মনোনীত প্রার্থীকেই তিনি ভোট দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংসদ ভবনে গিয়ে ভোট দিয়ে শিশির অধিকারী দাবি করেছিলেন, তিনি তৃণমূলে ছিলেন, আছেন, থাকবেনও। দল তাঁকে আক্রমণ করলেও তৃণমূল তিনি ছাড়েননি। দলের মনোনীত প্রার্থীকেই তিনি ভোট দিয়েছেন। সেই বক্তব্যের পর উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তৃণমূলের চিঠিতে জল্পনা আরও বাড়ল।
|
অধিকারী দুই সাংসদকে চিঠি দিল তৃণমূল
বর্তমানে বিজেপির ডাকসাইটে নেতা তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বাড়িতেই রয়েছে দুই তৃণমূল সাংসদ। একজন তাঁর পিতৃদেব শিশির অধিকারী। অন্যজন তাঁর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। এবার দুই সাংসদকেই চিঠি দিল তৃণমূল। চিঠি দিয়ে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হল, আসন্ন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস অংশগ্রহণ করছে না। কোনও প্রার্থীকেই ভোট দেবেন না তাঁরা। কেউ যদি ভোটে অংশ নেন, তবে ধরে নিতে হবে তিনি দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন।
শিশির-দিব্যেন্দুকে নিয়ে সমীকরণ বদলাচ্ছে
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারী উভয়েই দাবি করেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে তাঁদের কোনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বা ভোট নিয়ে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাঁরা তাঁদের ইচ্ছামতোই দলের মনোনীত প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। তবে বিধানসভায় গিয়ে ভোট দেবেন না। ভোট দেবেন সংসদ ভবনে গিয়ে। সেইমতো সংসদ ভবনে গিয়ে ভোট দেওয়ার পর দাবি করেন, তাঁরা দলীয় প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থীকে ভোট দিলেও বিজেপি তথা এনডিও মনোনীত প্রার্থীই যে সুযোগ্য তা বুঝিয়ে দেন শিশির অধিকারী।
দলের পথেই কি অধিকারী পিতা-পুত্র
সংসদ ভবনে ভোটদানের পর শিশির অধিকারী একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, যে দলে আছি, সেই দলকেই সমর্থন করি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও সেই দলকে সমর্থন করেছেন। আর উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও দল যা বলবেন, তিনি সেটাই করবেন। সেইমতো দল নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানিয়ে দিল তাঁরা কোনও প্রার্থীকেই সমর্থন করছেন না, তাঁরা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকছেন। সেইমতো শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারীরা কী অবস্থান নেন, তা-ই দেখার।
ধনখড়কে সেরা বলেছিলেন শিশির
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শিশির অধিকারী দাবি করেন, তিনি দলীয় প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছেন। কিন্তু জানাতে ভোলেননি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ-র দ্রৌপদী মুর্মুই ছিলেন যোগ্য প্রার্থী। একইভাবে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও এনডিএ-র প্রার্থী জগদীপ ধনখড়কে যোগ্যতম বলে বর্ণনা করেন শিশির অধিকারী। ধনখড়কে বাংলার সেরা রাজ্যপাল বলেও অভিহিত করেন তিনি। তবে এবার আর যোগ্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাঁদের ভোট দিতে হবে না, যদি না তাঁরা তৃণমূলের নির্দেশ অমান্য করেন।
দল মানুক, আর না মানুক শিশির তৃণমূলে
উল্লেখ্য, ২০২১-এ বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রচার মঞ্চে দেখা গেলেও তাঁকে বিজেপিতে যোগ দিতে দেখা যায়নি। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর দলবদলের পর থেকে তৃণমূল ধরেই নেয়, গোটা অধিকারী পরিবারই বিজেপিতে চলে গিয়েছে। কিন্তু খাতায় কলমে শিশির অধিকারী ও তাঁর সেজ ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারী এখনও তৃণমূল সাংসদ। সেই কারণেই জোরের সঙ্গে শিশির অধিকারী দাবি করেন, তৃণমূলেই ছিলাম, তৃণমূলেই আছি, তৃণমূলেই থাকব। দল মানুক, আর না মানুক।
রাজনীতি থেকে দূরে, রাজ্যপালের লড়াইয়ে
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন শিশির অধিকারী। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি দিল্লি যান ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারীকে নিয়ে। তার আগে তাঁর নাম বাংলার রাজ্যপাল হিসেবে চর্চা হচ্ছিল। তিনি সেই কারণেই দিল্লি ছুটে যান বলেও রটনা শুরু হয়ে যায়। তা খারিজ করে শিশির অধিকারী জানিয়ে দেন তিনি এখনও তৃণমূলেই আছেন। দলের নির্দেশ মেনেই কাজ করেন। যদিও দল তা মানে না।