
সময় এলে মানুষ জবাব দেবে! রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে জল্পনা জিইয়ে রেখে মন্তব্য শিশির অধিকারীর
লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দুই সাংসদকে নিয়ে চিঠি দেওয়ার পরে এক সাংসদ সুনীল মণ্ডল ফিরে গিয়েছে তৃণমূলে (trinamool congress)। বিজেপি বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু অন্যজন বর্ষীয়ান শিশির অধিকারী (sisir adhikari) এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি। বরং তিনি এখনও জল্পনা জিইয়ে রাখলেন। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেননি, সময় এলে সবটাই জানাবেন।

চিঠি দেওয়ার পরে জানতে চেয়েছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন পর্ব শেষ হওয়ার পরেই লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লার কাছে চিঠি দিয়ে দলের দুই সাংসদদের বিরুদ্ধে অন্যদলে যোগ দেওয়ার অভিযোগ করে, তাঁদের অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন। জবাব না আসায় তিনি ফোন করেন অধ্যক্ষকে। অধ্যক্ষ তারপর চিঠি পাঠান দুই সদস্যকেই। এরই মধ্য বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল দিল্লিতে মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তারপর তিনি সংসদ এবং সংসদের বাইরে তৃণমূলে হয়ে বিজেপি বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন এবং দাবি করেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দেননি।

একমাস সময় চেয়েছেন শিশির অধিকারী
অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে শিশির অধিকারী লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লার কাছে চিঠি পাঠিয়ে একমাস সময় চেয়ে নেন। চিঠিতে মূলত অসুস্থতার কারণ দেখান তিনি। বিধানসভা ভোটের আগে দুই ছেলে শুভেন্দু অধিকারী এবং সৌমেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেন। এরপর শিশির অধিকারীকে কাঁথিতে অমিত শাহের সভায় দেখা গিয়েছিল। যা নিয়ে পরবর্তী সময়ে শিশির অধিকারী বলেছিলেন, তিনি বিজেপির পতাকা তাতে নেননি, কিংবা সেই দলের প্রচারেও সামিল হননি। অধ্যক্ষের সিদ্ধান্ত মানবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘা-শঙ্করপুর ঘুরে দেখার পরে অভিযোগ করেছিলেন মানুষের টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। যাঁরা এর দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরাই টাকা নয়ছয়ের সঙ্গে যুক্ত। এই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে বলেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যদি কোনও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে যেন গ্রেফতার করা হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম থেকে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে নাম না করে তিনি বলেছিলেন, নাটক ছাড়া উনি ভোট পাবেন না। ১০ বছর আগে রাজ্যে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, মানুষ অপাত্রে ভোট দিয়েছিল কিনা তিনি জানেন না। তবে বাংলার বেকাররা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

এখনও সিদ্ধান্ত নেননি
লোকসভার অধ্যক্ষকে চিঠি পাঠানোর পরে কেটে গিয়েছে একসপ্তাহের মতো সময়। নিজের অবস্থান প্রসঙ্গে কাঁথির সাংসদ জানিয়েছেন, তিনি এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি, কিছু ভাবেনওনি। নিজের শশীর ভাল না থাকার কথা ফের একবার জানিয়ে শিশির অধিকারী বলেছেন শরীর ভাল হলে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে সময় এলে সবটাই জানাবেন। তিনি আরও বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বাড়িতেই রয়েছেন। আর অসুস্থতার কারণে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না। যেসব মানুষ তাঁর জন্য বাড়িতে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন বলেও জানিয়েছেন কাঁথির সাংসদ। তবে নিজের অবস্থান তিনি খানিকটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন।

সময় এলে মানুষ জবাব দেবে
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় শিশির অধিকারী জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকারকে মানুষ আদৌ ভোট দিয়েছে না, জাল ভোট পড়েছে, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। তাঁর আরও অভিযোগ এরা ক্ষমতায় থাকতে যা ইচ্ছা তাই করছে। সময় এলে মানুষই জবাব দেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজনীতিতে শিশির অধিকারী
ছয়ের দশকে রাজনীতিতে যোগ দেন শিশির অধিকারী। সেক্ষেত্রে প্রায় ৬০ বছর তাঁর রাজনৈতিক জীবন। ২৫ বছর কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। দক্ষিণ কাঁথি এবং এগরা থেকে যথাক্রমে ২০০১-২০০৬ এবং ২০০৬-২০০৯ সাল পর্যন্ত বিধায়ক ছিলেন। এরপর ২০০৯ থেকে কাঁথি লোকসভার সদস্য। ২০০৯-এর পরে ২০১৪ এবং ২০১৯ পরপর তিনবার কাঁথি থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তৃণমূলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকে শিশির অধিকারী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ২০০৯ সালে সাংসদ হওয়ার পরে তাঁকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রীও করা হয়। কিন্তু ২০২০ থেকে তাঁর মেজো ছেলে শুভেন্দু অধিকারীর মতো তাঁর সঙ্গেও দলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। সর্বশেষে কাঁথিতে অমিত শাহের সভায় গিয়েছিলেন। তবে সেখানে বিজেপির কোনও কোনও পতাকা তিনি হাতে তুলে নেননি।
Daily News Update: মোদীর রাজ্যেও হবে 'খেলা হবে' দিবস, গুরুং-তামাং বৈঠক নিয়ে জল্পনা