
শুভেন্দু ছাড়াই নন্দীগ্রামে চলার ক্ষমতা রয়েছে তৃণমূলের, ৮ বছর আগে প্রস্তাব পান অভিষেক
২০২১-এ বিধানসভা ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই অধিকারীদের ছাড়াই নন্দীগ্রাম-সহ পূর্ব মেদিনীপুরে চলতে শুরু করেছে তৃণমূল। কিন্তু আট বছর আগেই সেই শুভেন্দু অধিকারীকে ছাড়া নন্দীগ্রামে চলার প্রস্তাব পেয়েছলি তৃণমূল। কিন্তু মমতা অগাধ আস্থা রেখেছিলেন শুভেন্দুর প্রতি।

শুভেন্দু সেই বিশ্বাস ভেঙে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়ার পর একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ফলে একুশের ভোটে নন্দীগ্রাম হয়ে উঠেছিল এপি সেন্টার। নন্দীগ্রামের সেই প্রেস্টিজ ফাইটে শেষ ল্যাপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তারপর নন্দীগ্রাম দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে শুভেন্দুর বাড়ির সামনে অভিষেকের সভা করার সিদ্ধান্ত ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূলের দাবি এই সভায় রেকর্ড সংখ্যক ভিড় হয়েছে। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং তারপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেন, মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে, বাইরে এর চারগুণ লোক রয়েছে।
শুভেন্দুহীন তৃণমূলের এই শক্তি প্রদর্শনের পর এক অতীত কথা সামনে চলে এসেছে আবারও। ২০১৪ সালে তৃণমূলের যুব সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর পূর্ব মেদিনীপুরের তৎকালীন তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমানের তরফে এমন প্রস্তাব এসেছিল অভিষেকের কাছে। কিন্তু তখন শুভেন্দু অধিকারীর দাপট তৃণমূলে এমনই ছিল যে আনিসুরের সেই দাবিকে আমল দেয়নি তৃণমূল।

২০১৪ সালে শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া একটি সভা করে আনিসুর রহমান দেখিয়ে দিয়েছিলেন শক্তি। শক্তি প্রদর্শন করে তিনি দেখিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীকে ছাড়াও তৃণমূল চলার ক্ষমতা রাখে নন্দীগ্রামে। এমনকী গোটা পূর্ব মেদিনীপুরেও শুভেন্দু অপরিহার্য নয়। কিন্তু তথন শুভেন্দু অধিকারীকে ছাড়া তৃণমূল চলতে চায়নি। এখন তৃণমূল শুভেন্দু অধিকারীকে ছাড়াই চলতে বাধ্য।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সমীকরণের এই কাহিনি সামনে এনে তৃণমূল এখন বোঝাতে চাইছে আগেও তৃণমূল শুভেন্দু ছাড়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় শক্তিশালী ছিল। এখনও তারা একইরকম শক্তিশালী। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী যে জয় পেয়েছে তা সোজা পথে নয়। কিন্তু ওই জয়টুকু ছাড়া পূর্ব মেদিনীপুর যে শুভেন্দু-গড়, তা বলা যায় না।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কাঁথির সভামঞ্চ থেকে প্রশ্ন তোলেন, কেন শুভেন্দু-গড় বলা হচ্ছে এই জেলাকে। এই জেলায় আমরা ১৬টির মধ্যে ৯টি বিধানসভা কেন্রে জিতেছি। তাহলে কেন এই জেলা শুভেন্দু-গড়। এটা তৃণমূলের গড়। তারপর তিনি বলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মা-মাটি-মানুষের গড়। অভিষেক বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলার দায়িত্ব শুভেন্দু অধিকারীর উপর ছেড়েছিলেন। অধিকারীদের প্রতি তাঁর আস্থাজ্ঞাপন করেছিলেন। সেই কারণেই এটি শুভেন্দু-গড় হয়েছিল। এখন তা শুধুই তৃণমূল গড়।
অভিষেক এদিন শুভেন্দুর জয় নিয়েও কটাক্ষ করেন। শনিবার কাঁথিতে শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ির সামনে সভা করে তিনি বলেন, নন্দীগ্রামে ফের ভোট হবে। শুভেন্দু অধিকারী দেশের প্রথম বিধায়ক যিনি ভোটে জিতেছেন কি না তা আদালতে বিচারাধীন। তারপর অভিষেক বলেন, আমি বলে যাচ্ছি নন্দীগ্রামে ফের ভোট হবে। আমার এই কথা লিখে রাখুন। আর নন্দীগ্রামে ভোট হলে এবার শুভেন্দু অধিকারী বুঝবেন কী হয়!

অভিষেকের কথায়, নন্দীগ্রামে বিতর্কিত জয় তুলে নেওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কম্পার্টমেন্টাল চিফ মিনিস্টার বলতেন। কিন্তু তিনি নিজে বিধায়ক হয়েছেন কীভাবে তা বিচার করে দেখেননি। তিনি যে লোডশেডিং করে জয় হাসিল করেছিলেন, তা ভুলে যাবেন না নন্দীগ্রামের মানুষ। তা না হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জয়ী ঘোষণার পর কী করে লোডশেডিংয়ের পরই শুভেন্দু অধিকারী জয়ী হন।
অভিষেক বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই তো বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপর হঠাৎ লোডশেডিং, কী হল সেখানে, যে হঠাৎ বদলে গেল ফলাফল? প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকের কথায়, লোডশেডিংয়ে জিতে বিধায়ক হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। আমরা নন্দীগ্রামের নির্বাচন নিয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই সুবিচার পাবো। ফের ফ্রেশ ভোট হবে নন্দীগ্রামে। তখন দেখব শুভেন্দু অধিকারীর কত ক্ষমতা।
অনুব্রতহীন জেলায় জনসংযোগে ক্ষোভের মুখে শতাব্দী, পঞ্চায়েতের মুখে চাপ বাড়ছে তৃণমূলের