ক্রিসমাস কিন্তু পার্ক স্ট্রিটে এই জিনিসগুলি চাক্ষুষ করেননি! তাহলে 'বিগ-মিস', দেখে নিন
ফি বছরই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের জন্য অপেক্ষায় থাকেন বাঙালিরা। আর বাঙালির এই বর্ষশেষের উৎসবে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ক্রিসমাস কার্নিভাল।
ক্রিসমাস মানেই কলকাতার ঠিকানা সাধের পার্ক স্ট্রিট। ডিসেম্বরের শেষ ক'টা দিন একটু হইচই-আড্ডার ভিড়ে জম-জমাট পার্ক স্ট্রিটে কাটিয়ে নেওয়া। ফি বছরই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের জন্য অপেক্ষায় থাকেন বাঙালিরা। আর বাঙালির এই বর্ষশেষের উৎসবে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ক্রিসমাস কার্নিভাল।
এবার একটু দেরিতেই শুরু হয়েছে এই কার্নিভাল। ২২ ডিসেম্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু, উদ্বোধনের পরের দিন থেকেই পারদ চড়ছে পার্ক স্ট্রিট-এর ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ারের স্বাগত উৎসবে। যারা এখনও পার্ক স্ট্রিট-এর পা মাড়াননি তাঁরা কিন্তু অনেক কিছু মিস করছেন। পার্ক স্ট্রিটের এই জিনিসগুলিকে যদি ক্রিসমাস-এর এই সময়ে চাক্ষুষ না করে থাকেন তাহলে কিন্তু পরে পস্তাতেই পারেন।
ক্রিসমাস কার্নিভাল
পার্ক স্ট্রিটের অ্যালান পার্ক এখন সেজে উঠেছে। তার শরীর জোড়ে রঙ-বেরঙের আলো। ক্রিসমাস কার্নিভাল-এর মঞ্চে সমানে চলছে অনুষ্ঠান। একের পর এক পারফরম্যান্স। অ্যালান পার্কের এই উৎসবের আবহই বলে দিচ্ছে কলকাতা এখন বুঁদ ক্রিসমাস কার্নিভালে।
[আরও পড়ুন:বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিসমাস ট্রি! মহাকাশ থেকে যাতে জ্বলে উঠল আলো]
পার্ক স্ট্রিটে চাঁদের হাট
ক্রিসমাস কার্নিভাল উপলক্ষ্যে এখন চাঁদের হাট অ্যালান পার্কে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতে এই উৎসবের সূচনা করেছিলেন। কার্নিভাল-এর মঞ্চে ইতিমধ্যেই পারফর্ম করে গিয়েছেন ঊষা উত্থুপ। ছিল ক্রস-উইন্ড-এর টিম। সামনের কয়েক দিনও আরও সব তারকারা আসছেন অ্যালান পার্কের মঞ্চে।
উৎসব হবে খাওয়া-দাওয়া হবে না!
পার্ক স্ট্রিট-এর ফুটপাত জুড়ে এখন শুধুই খাবারের মেলা। খোলা হয়েছে বিভিন্ন ফুড স্টল। তাতে কাবাব থেকে শুরু করে থুপ্পা, মোমো-র মতো ডিস পাওয়া যাচ্ছে। এমনকী বাদ নেই বাঙালির সাধের মিস্টি, এগরোল, চাউমিন। আসলে কলকাতার উৎসবের স্ট্রিট-ফুড মানেই একটা বাড়তি আকর্ষণ। দুর্গাপুজোর সময়েও এমন স্ট্রিট-ফুডে ছেয়ে যায় কলকাতা শহর। যার অন্যথা হচ্ছে না পার্ক স্ট্রিট-এর ক্রিসমাস কার্নিভাল-এ।
ক্রিসমাসের উৎসবে রঙীন পার্ক স্ট্রিট
ইতি-উতি যেদিকেই চোখ যাবে দেখবেন নানা পসরা সাজিয়ে বসে আছেন অনেকে। কি নেই সেই ভাণ্ডারে! সান্টার টুপি থেকে দাড়ি, হরিণের শিং- যাতে আবার লাল লাইট জ্বলে। বাঁশি থেকে শুরু করে হরেকরকম আইটেম।
পার্ক স্ট্রিট-এর জনসমুদ্র
বাঙালি মানেই বারো মাসে তেরো পার্বণ। একথা বহুল প্রচলিত। তাই উৎসবের সুযোগ যেন কোনওভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না বাঙালি। ডিসেম্বরের শেষের এই ক'টা দিন বাঙালি মনের আঁশ মিটিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর থাকে। সেই কারণ যে সব বাঙালি উৎসব ভালোবাসেন, রঙ ভালোবাসেন, ভিড় পছন্দ করেন- তারা এই সময়ে হাজির হয়ে পড়েন পার্ক স্ট্রিটে। ক্রিসমাস আর নতুন বছরের আগমনীতে মুখর এই পার্ক স্ট্রিট তখন বাস্তবিক অর্থেই দিন কয়েক ধরে জনসমুদ্রের আকার নেয়।
লাঞ্চ আর ডিনারের ঠিকানা পার্ক স্ট্রিট
কলকাতায় ফুড-রিজিওনের অভাব নেই। চায়না টাউন থেকে শুরু করে সিটি সেন্টার বা মাণি স্কোয়ার বা হালে শহরের মুকুটে যোগ হওয়া অ্যাক্রোপলিস মল-- সবখানেই একাধিক রেস্তোরাঁ। কিন্তু, ক্রিসমাস-এর সময়ে পার্ক স্ট্রিটে লাঞ্চ বা ডিনার-এর যেন কোনও তুলনাই হয় না। কারণ, ক্রিসমাসের সময় এখানে যে উৎসবের গন্ধটা মেখে একাকার হয়ে যায় তার অনুভূতি শহরের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। সেই কারণে ক্রিসমাসের এই দিনগুলিতে পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁ ও পাবগুলিতে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। তবে, একটু তাড়াতাড়ি করে বের হলে জায়গা না পাওয়ার আতঙ্কের হাত থেকে রেহাই মেলার সুযোগ থাকে।
উড়ছে ধোঁয়া, প্রাণের আস্ফালন, দৌড়চ্ছে আড্ডা
এই সময়ে পার্ক স্ট্রিট-এ এটা কমন সাবজেক্ট। যে কোনও কফি শপ বা ফ্লুরিজ-এ ঢুকে পড়ুন দেখবেন একদল তরুণ-তরুণী থেকে মধ্য বয়স্ক বা বয়স্কদের দলগুলি জায়গায় জায়গায় জটলা করে আছে। শীতের ওম গায়ে মেখে চলছে জমাটি আড্ডা। মাঝে মাঝে কেউ বাইরে গিয়ে ধোঁয়ার দম দিয়ে এসেছে ফের বসে পড়েছে আড্ডা টেবিলে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যা তবু যেন সেই আড্ডার ছবিগুলোর বদল হয় না। একদল চলে যায় তো পরক্ষণেই আড্ডার ডালি নিয়ে হাজির হয়ে যায় আর এক দল। আসলে নতুন বছর না আসা পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে আড্ডার রিলে।
আলোয় মালায় সেজে থাকা পার্ক স্ট্রিট
রঙীন আলোর এমন মেলা এই সময়ই দেখা যায়। এখন তো টুনি অচল। তার স্থানে এলইডি। আলো বরং আরও উজ্জ্বল। ক্রিসমাস উৎসবের আবহে বাড়তি মাত্রা যোগ করে এই আলোর মেলা। পার্ক স্ট্রিটের এই আলো যদি না দেখলে তাহলে তো কলকাতা থেকে জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে।