কানের গোড়ার ক্ষতচিহ্নই ধরিয়ে দিল খুনিকে! সল্টলেকে ইঞ্জিনিয়ার-খুনে চাঞ্চল্যকর ‘বয়ান’
অপমানের প্রতিশোধ নিতেই সে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতেই অভিজিৎবাবুর যৌনাঙ্গ কেটে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সল্টলেকে ইঞ্জিনিয়ার হত্যাকাণ্ডের কিনারা।
পুরনো আক্রোশের মেটাতে সল্টলেকের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার অভিজিৎ নাথ চৌধুরীকে খুন করেছে ভাড়াটিয়া সঞ্জয় আগরওয়াল। অপমানের প্রতিশোধ নিতেই সে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতেই অভিজিৎবাবুর যৌনাঙ্গ কেটে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সল্টলেকে ইঞ্জিনিয়ার হত্যাকাণ্ডের কিনারায় প্রকাশ্য এল এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা। তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, জেরার মুখে ধৃত ভাড়াটিয়া সঞ্জয় আগরওয়াল স্বীকার করেছেন এই খুনের কথা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জয়ের কানের গোড়ায় রক্তের দাগই তাঁকে ধরিয়ে দিল। তার কানের গোড়ায় রক্তের দাগ দেখেই সন্দেহ অন্যদিকে মোড় নেয়। তারপর সঞ্জয়কে জেরা করে জানা যায় এই খুনের পিছনে রয়েছে তারই হাত। সে-ই নিজে হাতে খুন করেছে অভিজিৎবাবুকে। কী কারণে এই খুন? উঠে আসে আর্থিক আদান-প্রদানের গল্প।
সল্টলেকের একটি দোতলা বাড়িতে একাই থাকতেন অভিজিৎবাবু। ৬৫ বছরের বৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বনিবনা ছিল না। আলাদা থাকতেন স্ত্রী। ওই বাড়ির সিঁড়িঘর থেকে তাঁর গলার নলিকাটা দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর যৌনাঙ্গ কেটে বাড়ির বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল প্রণয়ঘটিত কারণেই এই খুন।
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল অভিজিৎবাবুর। তবে কি তিনিই এই খুনের ঘটনায় জড়িত? সেই সন্দেহ থেকেই পরিচারিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। কিন্তু সিঁড়ির ঘর আর গ্যারাজের দরজায় রক্তের দাগ দেখেই তদন্ত অন্য দিকে মোড় নিতে শুরু করে।
পুলিশ জানতে পারে গ্যারাজটি ভাড়া নিয়েছিলেন সঞ্জয় আগরওয়াল। খোঁজ পড়ে সঞ্জয়ের। শুক্রবার তাকে আটক করে জেরা শুরু করেন তদন্তকারীরা। সেইসময় সঞ্জয়ের কানের গোড়ায় একটি আঁচড়ের দাগ লক্ষ্য পড়ে পুলিশের। আর সেই রক্তের দাগই স্পষ্ট করে দেয় এই হত্যাকাণ্ডের নায়ক কে। খুনের মোটিভ তারপর স্পষ্ট হয়ে যায়।
সঞ্জয়ের সঙ্গে অভিজিৎবাবুর সম্পর্ক একেবারেই ভালো যাচ্ছিল না। সঞ্জয়ের সঙ্গে বকেয়া ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। তারপর সঞ্জয় হাজার তিরিশেক টাকা ধার নিয়েছিলেন, তাও ফেরৎ দেয়নি। তা নিয়ে দুজনের বচসাও হয়। পরিবারের সামনে সঞ্জয়কে অপমান করেন অভিজিৎ। সেই অপমানের বদলা নিতেই খুনের ছক কষে সে।
সেইমতো নকল চাবি বানিয়ে অভিজিতের ফ্ল্যাটে ঢোকে। কিন্তু ফ্ল্যাটে অভিজিৎকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছিল সঞ্জয়। তখনই মদের বোতল হাতে অভিজিৎ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছিল। সেখানেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে সে। গায়ে-হাতে রক্তের দাগ ওই গ্যারাজের বেসিনে গিয়ে ধুয়ে ফেলে। তারপর পায়ে হেঁটে পালিয়ে যায় গলি পথ ধরে।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে এদিন সঞ্জয় ওই বাড়ির সামনে এসে দুবার ফোন করে অভিজিৎবাবুর মোবাইলে। তারপর অভিজিৎবাবুর পরিবারকে জানায় ফোন করেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। অভিজিৎবাবু ফোন তুলছেন না। পুলিশকে জানানোর পরই শুরু হয় তদন্ত। সঞ্জয়ের সমস্ত ছক ফাঁস হয়ে যায় পুলিশের জেরার সামনে।