দলের ঊর্ধ্বে নিজেকে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, অনিয়মে হানতেন কুঠারাঘাত
দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা, দাপুটে রাজনীতিবিদ, সুবক্তা হিসাবে রাজনৈতিক আঙিনায় তাঁর বিচরণকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন তাঁর গুণমুগ্ধরা।
দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা, দাপুটে রাজনীতিবিদ, সুবক্তা হিসাবে রাজনৈতিক আঙিনায় তাঁর বিচরণকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন তাঁর গুণমুগ্ধরা। লোকসভার স্পিকার হিসাবেও তিনি যথেষ্ট সমাদৃত। তিনি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
একটা সময় বাংলার বাম-রাজনীতি যাঁকে ঘিরে উদ্দীপ্ত হয়েছে, সেই নামী ব্যারিস্টার তথা রাজনীতিবিদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এদিন কলকাতার এক বেসরকারী হাসপাতালে প্রয়াত হন। বহুদিন ধরে হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন থেকে আজ এক অন্য দেশে পাড়ি দিলেন তিনি। রেখে গেলেন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এক অসামান্য অধ্যায়। যে অধ্যায়ের একটা বড় অংশ জুড়ে আজও রয়ে গিয়েছে ২০০৮ সালের এক স্মরণীয় রাজনৈতিক ঘটনা।
পার্টির নির্দেশ
দশ বারের সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনাটি ঘটে ২০০৮ সালে। সেই সময়ে সিপিএম থেকে বহিষ্কার করা হয় এই দুঁদে ব্যারিস্টার তথা দলীয় সদস্যকে। পার্টির তরফে বলা হয়, দলের নিয়মানুবর্তিতা না মানাতেই এই সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কী ঘটেছিল সেই সময়?
২০০৮ সালে মনমোহন সিং এর প্রধানমন্ত্রিত্বের ইউপিএ -কে সমর্থন করার অবস্থান থেকে আসার সিদ্ধান্ত নেয় সিপিআই (এম)। সেই সময়ে লোকসভার স্পিকার পদে আসীন ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। দল চেয়েছিল একসঙ্গে তিনিও পদ থেকে ইস্তফা দিন। কিন্তু তার দু'দিন পরে অর্থাৎ ২১ জুলাই ২০০৮-এ ছিল সংসদের বিশেষ অধিবেশন। নিজের পদের নিরপেক্ষতা আর মান বজায় রাখতে দলের অনুরোধ ফিরিয়ে দেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
কেন সরে এসেছিল বামেরা?
২০০৪ সালে মনমোহন সিং এর নেতৃত্বের ইউপিএম সরকারে ক্ষমতায় এলে তাকে বাইরে থেকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয় বামপন্থী দলগুলি। সেই সময়ে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করে সরকাকে বাইরে থেকে সমর্থন করার অবস্থান থেকে সরে আসে বামপন্থী দলগুলি।
ফিরিয়ে দেন জ্যোতি বসুর অনুরোধ
এমন এক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সংকটে পড়ে দেশের সরকার। এমন সময় আস্থা ভোটের প্রাক্কালে স্পিকার পদ ছাড়তে চাননি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। এমনকি দেশের তথা বাংলার বাম রাজনীতির অন্যতম নেতা জ্যোতি বসুর অনুরোধও তিনি সাড়া দেননি । সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি ছিল, তাঁর স্পিকার পদটি রাজনৈতিক শরিকি বিবাদ তথা দলীয় বিষয়ের উর্ধ্বে।
দলীয় সিদ্ধান্ত
এরপর সিপিআই (এম)-এর দলীয় সংবিধানের আর্টিক্যাল ১৯ (১৩) অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয় ব্রিটেনে প্রশিক্ষিত ব্যারিস্টার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। পরবর্তীকালে যদিও দলে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে ফেরানোর কথা শোনা গেলেও , সেপ্রস্তাব ফিরিয়ে দেন এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজনীতিবিদ।