বেতন বৈষম্য নিয়ে এবার দিল্লিতে ধরনায় রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা, মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ-এর চেষ্টা
বেতন বৈষম্য নিয়ে এবার দিল্লিতে ধরনায় বসতে চলেছে উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বা ইউইউপিটিএ।
বেতন বৈষম্য নিয়ে এবার দিল্লিতে ধরনায় বসতে চলেছে উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বা ইউইউপিটিএ। তারিখ এখনও ঠিক না হলে দিল্লিতে ধরনার বিষয়ের কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদিকা পৃথ্বা বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যায় কি না তারও চেষ্টা করছে ইউইউপিটিএ। যদিও, রাজ্য সরকারকে বেতন বৈষম্যের নিস্পত্তির জন্য ২০ দিনের সময়সীমা দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং, এই সময়ের মধ্যে বেতন বৈষম্যে নিয়ে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করলে দিল্লি অভিযানের ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে কোনও তথ্য জানা যায়নি। লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের দিল্লি অভিযান রাজ্য সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনের আবহে বেতন বৈষম্য দূরের দাবিতে বুধবার কলকাতায় ফের রাস্তায় নামেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। অন্তত ৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা একটি মিছিল করে মৌলালির রামলিলা ময়দানে জমায়েতও করেন। এই মিছিল ও জমায়েতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্পষ্টতই রাজ্য সরকারকে হুঁশিয়ারি দেন। এনসিটিই-র বলে দেওয়া হারে যাতে অবিলম্বে মাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করে তার দাবি তোলেন তারা। বেতন বৈষম্য নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকরা বছর খানেকেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলনে নেমেছেন। অভিযোগ, প্রতিবারই রাজ্য সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও আসলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, তাঁরা কারোর কাছে ভিক্ষা চাইছেন না বা বেতন বৃদ্ধির দাবিও তুলছেন না। তাঁরা শুধু বলতে চাইছেন এনসিটিই-এর বলে দেওয়া হারে তাঁদের মাইনেটা দিক সরকার।
শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়ানো হলেও মাইনেতে কৃপণতা
প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ, এনসিটিই-র নির্দেশ অনুযায়ী তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মান বাড়াতে হয়েছে। এখন প্রাথমিকে নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিকে অন্তত ৫০ শতাংশ নম্বর এবং সঙ্গে ২ বছরের ডিইএলইডি-এর প্রশিক্ষণ। শিক্ষাগত যোগ্যতা যেমন বাড়ানো হয়েছে তেমনি মাইনেতেও এনসিটিই বদ্ধি ঘটিয়েছে। যার ফলে এনসিটিই-এর প্রদত্ত নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিকের শিক্ষক-শিক্ষিকারা পিআরটি স্কেলে ৯৩০০ টাকা থেকে ৩৪,৮০০ টাকা এবং গ্রেড পে-তে ৪২০০ টাকা করে পাওয়ার কথা। কিন্তু এখনও যে মাইনেটা রাজ্য সরকার দিয়ে চলেছে তা হল পে ব্যান্ড-এ ৫৪০০ টাকা থেকে ২৫,২০০ টাকা এবং গ্রেড পে ২৩০০ থেকে ২৬০০ টাকা। এটা মাধ্যমিকের যোগ্যতা মানের বলে দাবি প্রাথমিক শিক্ষকদের।
শিয়ালদহে জমায়েত
বুধবার সকাল থেকেই জেলাগুলি থেকে শিক্ষকরা এসে জমায়েত হন শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে। সেখান থেকে মিছিল শুরু হয় মৌলালির রামলিলা ময়দানের উদ্দেশে। সেখান পৌঁছনোর পর একটি সমাবেশও হয়। বেতন বৈষম্য দূর না করা নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেন শিক্ষকরা।
রামলিলা ময়দানে ৫ হাজার শিক্ষকের জমায়েত
জেলা থেকে অন্তত হাজার পাঁচেক শিক্ষক-শিক্ষিকা এখানে জমায়েত হন। রাজ্য সরকার অবিলম্বে এই বেতন বৈষম্য দূর করতে উদ্যোগী না হলে আন্দোলন আরও কঠোর করারও ডাক দেওয়া হয় জমায়েতের মঞ্চ থেকে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ডেপুটেশন
আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল বিকাশ ভবনে যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ডেপুটেশন দিতে। বেতন বৈষম্য নিয়ে আন্দোলন করা উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন জানায় শিক্ষামন্ত্রী বিকাশ ভবনে ডেপুটেশন গ্রহণের কথা বললেও সেখানে তিনি ছিলেন না। ফলে বিকাশ ভবন থেকে ফিরে আসতে হয় প্রতিনিধি দলটিকে।
আন্দোলনের মিছিলে সুজন, শমীক
উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের-এপ বিক্ষোভ সমাবেশে এদিন অংশ নেন বাম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী ও বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য। দু'জনেই মিছিলে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে হাঁটেন।
ইউইউপিটিএ-র বার্তা
উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদিকা পৃথ্বা বিশ্বাস জানিয়েছেন, বহুদিন থেকেই তাঁরা এই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করছেন। কিন্তু, বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও রাজ্য সরকার কোনও সদর্থক ভূমিকা নেয়নি। প্রাথমিক শিক্ষকরা তাঁদের অধিকারের বেতনটা চাইছে। রাজ্য সরকারের কাছে কোনও বর্ধিত বেতনের দাবি জানানো হচ্ছে না । মাধ্যমিকের শিক্ষাগত যোগ্যতায় যে বেতন দেওয়া হচ্ছে তাকে সরিয়ে এনসিটিই বলে দেওয়া অর্ডারটা প্রয়োগের আর্জি রাখা হয়েছে। এতকিছুর পরও যদি রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ না নেয় তাহলে চরম পথেই হাঁটা হবে বলে জানিয়েছেন ইউইউপিটিএ-র রাজ্য সম্পাদিকা পৃথ্বা বিশ্বাস।
দিল্লিতেও মিছিলের রূপরেখা
দিল্লির বুকেও প্রাথমিক শিক্ষকদের বৈতন বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরার রূপরেখা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৃথ্বা বিশ্বাস। তারিখ নির্ধারণ না হলেও মোটামুটি চূড়ান্ত যে দিল্লিতে বেতন বৈষম্য নিয়ে ধরনা কর্মসূচি পালন হচ্ছেই। এই ধরনা চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে স্মারক লিপি জমা দেওয়া যায় কি না তারও চেষ্টা করছে উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
পুজোর সময় থেকেই জোর আন্দোলনে
গত অক্টোবর থেকেই বেতন বৈষম্য নিয়ে আন্দোলন তীব্র করেছে উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। শহিদ মিনারে দুই দিনের অবস্থান বিক্ষোভেরও আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে প্রায় লাখ খানেক প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা যোগ দিয়েছিলেন। এমনকী এই মঞ্চে এসে প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন সব দলের বিশিষ্ট নেতারা থেকে শুরু করে সমাজের বিশিষ্টজন, শিক্ষাবিদরা। বেতন বৈষম্য নিয়ে রাজ্য়পালের কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়েছিল। এমনকী বিধানসভার অধিবেশনেও বেতন বেষম্যের বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন সুজন চক্রবর্তী ও আব্দুল মান্নানরা।