বেসরকারি হাসপাতালের ‘অসুখ’ সারাতে কড়া ‘প্রেসক্রিপশন’ মমতার, নয়া বিল পাস বিধানসভায়
বেসরকারি হাসপাতালের ‘অসুখ’ সারাতে কড়া ‘প্রেসক্রিপশন’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ৬৪ বছরের ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট বিলকে বিদায় দিয়ে রাজ্য বিধানসভায় পাস হয়ে গেল নয়া বিল।
কলকাতা, ৩ মার্চ : বেসরকারি হাসপাতালের 'অসুখ' সারাতে কড়া 'প্রেসক্রিপশন' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ৬৪ বছরের ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট বিলকে বিদায় দিয়ে রাজ্য বিধানসভায় পেশ করা হল নয়া বিল। কোনও সংশোধনী নয়, একেবারে নতুন করে বিল করার পথেই হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী। বেসরকারি হাসপাতালের অনিময়মে লাগাম পরাতে নয়া আইনেই ভরসা রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, 'এটা ঐতিহাসিক বিল। আগামী দিনে দেশে মডেল হবে।'[শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দেবে পর্ষদ, বিধানসভায় শিক্ষা বিলে সংশোধনী আনছে সরকার]
বিরোধীরা যথারীতি এই বিলের বিরোধিতা করলেন। বিরোধী বিধায়কদের দাবি, এই বিল নতুন আখ্যা দেওয়া হলেও, তা আদতে নতুন নয়। ২০১০ সালে বামফ্রন্ট সরকার এই সংক্রান্ত বিল এনেছিল। সেই বিলেই কিছুটা সংশোধনী করে 'নয়া বিল' নিরূপণ করা হয়েছে। তাঁদের কথায়, ১৯৬৩ সালের ওয়েস্টবেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবিলশমেন্ট বিলেই সংশোধনী আনা যেত, নতুন করে বিলের কোনও প্রয়োজন ছিল না।
আইনে বলা হয়েছে হেলথ রেগুলেটরি কমিশন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগের তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কমিশনের সিদ্ধান্তকে চালঞ্জ জানিয়ে আদালতে যাওয়া যাবে না। এই কমিশনের দায়িত্বে থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও অবসরপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব। স্বাস্থ্য আইন ভাঙলে তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
এই আইনে যেমন চিকিৎসার গাফিলতিতে কড়া দাওয়াই রাখা হয়েছে, তেমনই লাগাম পরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বিভিন্ন খরচে। কেন এক এক হাসপাতালে এক এক রকম খরচ? সেখানেও রাশ টানতে চলেছে সরকার। এমনকী ইনডোর ও আউটডোরের চিকিৎসা খরচও বেঁধে দেওয়া হচ্ছে বিলে।
বিরোধী কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট বিধায়কদের কথায়, ৮০ শতাংশ মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করান। কোনও সরকার হাসপাতাল বা সেনা হাসপাতালকে এই বিলের আওতায় আনা হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল থেকে শুরু করে নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা যখন খাড়া করা হয়েছে, তার কিয়দংশ যদি সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে করা হত, তাহলে পরিষেবা আরও উন্নত হত।
বিরোধীদের আরও বক্তব্য, ডাক্তারদের ভুলে সরকারি হাসপাতালেও মৃত্যুর হার বেশি। তা হলে কেন সরকারি হাসপাতাল নিয়ে ভাবছে না সরকার। সরকার বলছে, এই বিল বেসরকারি হাসপাতাল বা নারসিংহোমের জন্যই। এর সঙ্গে সরকারি হাসপাতালের কোনও সংযোগ নেই। সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে সরকার আলাদাভাবে ভাববে।
বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্র সরকার যে আইন আনতে চলেছে, তাতে চিকিৎসার মান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দু'বার ভাববে। বেসরকারি হাসপাতালের তরফে আরও আশঙ্কা, এই আইনের ফলে বেসরকারি হাসপাতালে লাভের অঙ্ক কমে যাবে। তার খারাপ প্রভাব কর্মসংস্থানে পড়বে।
উল্লেখ্য, এই বিলে বলা হয়েছে, চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে মৃত্যু হলে ন্যূনতম ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হবে। প্রাণে বেঁচে গেলেও চিকিৎসায় গাফিলতি প্রমাণিত হলে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। কম ক্ষতি হলে দিতে হবে ৩ লক্ষ টাকা। বেসরকারি সমস্ত হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া যেকোনও ধরনের দুর্ঘটনা, ধর্ষণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে আঘাত, অ্যাসিড হামলার ঘটনায় কোনও রোগী হাসপাতাল-নার্সিংহোমে এলে টাকা-পয়সা না দেখে আগে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে। এছাড়া কেউ মারা গেলে বকেয়া থাকলেও দেহ আটকে রাখা যাবে না। টাকার অভাবে কোনও রোগীকে যাতে জীবনদায়ী ওষুধ থেকে বঞ্চিত না করা হয়, তারও সংস্থান বিলে রয়েছে।
অযথা কোনও পরীক্ষা-নিরাক্ষা করে বা একই পরীক্ষা একাধিকবার করে বিল বাড়ানোও যাবে না। প্যাকেজের বাইরে অতিরিক্ত একটা পয়সাও নেওয়া যাবে না। অন্যথা লাইসেন্স বাতিল পর্যন্ত হতে পারে বেসরকারি হাসপাতালের। ফৌজদারী মামলার মুখোমুখিও হতে পারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।