কলকাতায় কানাড়া ব্যাঙ্কে প্রতারণার কিনারা, দিল্লিতে জালে ২ রোমানিয়ান
কলকাতায় ব্যাঙ্ক প্রতারণার কিনারা করল কলকাতা পুলিশ। দিল্লিতে ধরা পড়েছে ২ রোমানিয়ান। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা তদন্তে বেশকিছু সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে।
কলকাতায় ব্যাঙ্ক প্রতারণার কিনারা করল কলকাতা পুলিশ। দিল্লিতে ধরা পড়েছে ২ রোমানিয়ান। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা তদন্তে বেশকিছু সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে। এই সিসিটিভি ফুটেজে বারবার কতগুলো বিদেশিকে বিভিন্ন ফুটেজে দেখতে পাওয়া যায়। এরপরই এই বিদেশিদের খোঁজে কলকাতা বিভিন্ন হোটেলে তল্লাশি শুরু হয়। আর সেখান থেকেই মেলে সূত্র।
ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের একটি দল দিল্লি পৌঁছে গিয়েছিল। কারণ, গড়িয়াহাটের কানাড়া ব্যাঙ্কের শাখায় যত জনের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে এটিএম থেকে অর্থ বের করা হয়েছিল তা ছিল দিল্লিতে। তবে, একটি নয় দিল্লির একাধিক এটিএম থেকে এই অর্থ তোলা হয়েছিল। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা দিল্লিতে আসা এইসব এটিএম-এ নজর রেখে যাচ্ছিলেন। সেখানেই তিন জন রোমানিয়ান-এর সন্ধান মেলে। কলকাতা থেকেও গোয়েন্দা দলটি এক রোমানিয়ানের ছবিকে চিহ্নিত করে পাঠিয়েছিল। দিল্লির ওই এটিএম-র সামনে লালবাজার থেকে পাঠানো এক রোমানিয়ানের ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে এমন এক রোমানিয়ান ও তার সঙ্গে থাকা আরও এক রোমানিয়ানকে ধরে ফেলে। তৃতীয় এক রোমানিয়ান পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর শুক্রবার রাতে এই গ্রেফতারির পর দুই রোমানিয়ানকে জেরা করা হয়। সেখানেই এই বিদেশিরা তাদের বাড়ির ঠিকানা বলে। সেখানে দিল্লি পুলিশের সহায়তায় তল্লাশি চালানো হয়। উদ্ধার হয় অসংখ্য ক্লোন কার্ড ও ব্যাঙ্ক প্রতারণার নানা ছক এবং বেশিকিছু ছোট ছোট ডায়েরি। দুই রোমানিয়ানের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোনও পাওয়া গিয়েছে। তৃতীয় রোমানিয়ান গ্রেফতারির সময় সেখানে ছিল। কিন্তু, সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তার খোঁজে দিল্লি জুড়ে তল্লাশি চলছে।
ট্রানজিট রিমান্ডে ২ রোমানিয়ানকে কলকাতায় আনা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই গোলপার্কের বালিগঞ্জ গার্ডেন্সের এক যুবতী অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় কানাড়া ব্যাঙ্কে দু'দফা. ৪০ হাজার টাকা তচ্ছরুপের অভিযোগ দায়ের করেন। ওই তরুণী জানিয়েছিলেন, প্রথমে দিল্লির এটিএম থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার মেসেজ তিনি পান। কিছুক্ষণ পরেই আরও ২০ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার এসএমএস অ্যালার্ট আসে। এরপর ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে অনিন্দিতা জানতে পারেন তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি এরপর কার্ড ব্লক করে দেন। গড়িয়াহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে জানতে পারেন ইতিমধ্যে এমন প্রতারণার আরও ২৫টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এদের মধ্যে আবার কয়েকজন প্রতারিত বালিগঞ্জ গার্ডেন্সের বাসিন্দা।
ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা এরপর কানাড়া ব্যাঙ্কে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। ম্যানেজার সুকুমার দফাদার আশ্বস্ত করেন অবৈধ লেনদেনে যে প্রতারণার ঘটনা হয়েছে তা দেখা হচ্ছে। গ্রাহকদের প্রতারিত অর্থ ফেরতেরও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। কানাড়া ব্য়াঙ্ক কর্তৃপক্ষও জানায় যারা এটিএম কার্ড ব্যবহার করেন তারাই প্রতারিত হয়েছেন। এরপরই তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ কানাড়া ব্যাঙ্কের এটিএম খতিয়ে দেখতে শুরু করে। সংগ্রহ করা একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ। তদন্তে লালবাজারের অ্যান্টি ব্যাঙ্ক ফ্রড সেকশন জানায় যে অর্থ হাতানোর পিছনে রয়েছে স্কিমিং ফ্রড। এতে এটিএম-এ স্কিমারের ফাঁদ পেতে যাবতীয় নথি সংগ্রহ করেছিল প্রতারকরা।