রাজ্যে সেনা মোতায়েন, রাষ্ট্রপতির কাছে নালিশ জানাবে তৃণমূল, সংসদেও আলোচনা
রাষ্ট্রপতিকে নালিশ জানানোর পাশাপাশি সংসদের দুই কক্ষেই সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে সরব হবেন তৃণমূল সাংসদরা। এই ইস্যুতেও কংগ্রেসকে পাশে পাচ্ছেন তাঁরা।
কলকাতা, ২ ডিসেম্বর : রাজ্যের টোল প্লাজায় সেনা মোতায়েন নিয়ে যুদ্ধ জারি রাখলেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কেন্দ্রকে, রাজ্য থেকে সেনা মোতায়েন না হলে রাতভর কাটাবেন নবান্নে। সেইমতো নবান্নেই রাত কাটালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ রাষ্ট্রপতিকে নালিশ জানানোর পাশাপাশি সংসদের দুই কক্ষেই সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে সরব হবেন তৃণমূল সাংসদরা। এই ইস্যুতেও কংগ্রেসকে পাশে পাচ্ছেন তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কার্যত জরুরি অবস্থা জারি করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলায় নাক গলাচ্ছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত তিনি বরদাস্ত করবেন না। এই ঘটনা আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই। তাই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই চলবে। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দলীয় সাংসদরা রাষ্ট্রপতির কাছে নালিশ জানাতে যাবেন। সেই কারণে পেনড্রাইভে সেনা মোতায়েনের ছবিও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। টোলপ্লাজাগুলিতে সেনা মোতায়েনের ছবি দেখানো হবে রাষ্ট্রপতিকে।
মুখ্যমন্ত্রী সংসদের দুই কক্ষেই সাংসদদের সরব হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইমতোই রাজ্যসভায় ডেরেক ও'ব্রায়েন ও লোকসভায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। কংগ্রেসও এই ইস্যুতে পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের। দুই কক্ষেই কংগ্রেসকে পাশে পাবে তৃণমূল। এই মর্মে গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে একপ্রস্থ কথাও হয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আহমেদ প্যাটেল ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর।
রাজ্যের চারটি টোলপ্লাজায় সেনা নামিয়ে বেসরকারি গাড়ির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই সেনা নামানোর ঘটনা ভালো চোখে দেখছেন না মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি দফায় দফায় খোঁজ নেন বর্ধমানের গলসি ও হুগলির ডানকুনি, হাওড়ার দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও মেদিনীপুরের খড়্গপুরের টোল প্লাজায় সেনা ক্রিয়াকলাপ নিয়ে। সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একবার তিনি সেনা নামানোর সমালোচনা করেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।
ফের রাত দশটা নাগাদ তিনি ফের সাংবাদিক সম্মেলন করে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যতক্ষণ না সেনা প্রত্যাহার করা হবে টোল প্লাজা থেকে ততক্ষণ তিনি নবান্নেই বসে থাকবেন। রাতভর নবান্নে কাটিয়ে অবিলম্বে সেনা প্রত্যাহারের দাবি জোরদার করেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নোট বাতিল করে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এখন রাজ্যে সেনা নামিয়ে জরুরি অবস্থা লাগু করতে চাইছে কেন্দ্র। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কখন রাজ্যে সেনা নামানো হয়? যখন জরুরি অবস্থা জারি হয়। কেন্দ্র সেই কাজটাই করতে চাইছে। তাই গলসি ও ডানকুনিতে সেনা নামানো হয়েছে। কেন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলায় নাক গলাতে চাইছে কেন্দ্র? জাতীয় সড়ক কেন্দ্রের অধীন হতে পারে, কিন্তু রাস্তাঘাটের আইনশৃঙ্খলা দেখা রাজ্যের আওতায় পড়ে। সেই কাজে হস্তক্ষেপ করে কেন্দ্রীয় সরকার ভুল করছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোনও রাজ্যে সেনা নামাতে গেলে রাজ্য সরকারের অনুমতি নেয়, সেই অনুমতি তো নেয়ইনি কেন্দ্র, একবার জানানোর প্রয়োজনও মনে করেনি। গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের ঘটনা বিরল। তাঁর দাবি ১৯টি জেলায় সেনা নামানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এমন অভিযোগও করেন, সেনাবাহিনী লরি থামিয়ে টাকা তুলছে। এই প্রেক্ষিতে একটি ভিডিও ফুটেজও দেখান তিনি।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, এই সেনা মোতায়েনের ঘটনায় আশঙ্কার কিছু নেই। প্রতিবছর সমস্ত রাজ্যেই এই সময় সমীক্ষা চালানো হয়। সেই রুটিন কাজই করছেন সেনারা। বর্তমানে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে সেনা মোতায়েন করে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। সেনা বিবৃতি দিয়ে জানায়, ২৮ নভেম্বর থেকে এই রুটিন সমীক্ষা চালানোর জন্য পুলিশকে জানিয়েছিল তারা। তখন পুলিশের অনুমতি মেলেনি।
পুলিশের অনুরোধেই ১ ডিসেম্বর থেকে সমস্ত টোলপ্লাজায় সমীক্ষা চালানো হয় নিরস্ত্র সেনা মোতায়েন করে। উল্লেখ্য, শুক্রবার সকাল থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর টোলপ্লাজাগুলিতে সেনা নামেনি। জানানো হয়েছে, ওই টেলপ্লাজায় কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বলেই নামানো হয়নি সেনা।