বাংলার লুপ্তপ্রায় শিল্প নিয়ে ত্রিধারা সম্মেলনীর থিম 'সাজাবো যতনে, প্রকৃতি রতনে'
হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতি বান্ধব বিভিন্ন বিষয়কে মাথায় রেখে ত্রিধারা সম্মেলনীর এবারের ভাবনাচিন্তা 'সাজাবো যতনে, প্রকৃতি রতনে'।
আধুনিকতার বেড়াজালে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের বহু মূল্যবান জিনিস। হারিয়ে গিয়েছে মৃৎশিল্প, পাট শিল্পের মতো বহু ঐতিহ্যবাহী শিল্প। হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতি বান্ধব বিভিন্ন বিষয়কে মাথায় রেখে দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম জনবহুল পুজো ত্রিধারা সম্মেলনীর এবারের ভাবনাচিন্তা 'সাজাবো যতনে, প্রকৃতি রতনে'।
গোটা বিষয়টির রূপায়নে ও সৃজনে রয়েছেন শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা। ত্রিধারার থিম ও গোটা মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পী নিজেই। শিল্পী জানান, হারিয়ে যাওয়া মৃৎ শিল্প, পাট ও পাটজাত দ্রব্যের সমস্ত সামগ্রী দিয়ে গোটা মণ্ডপটি তৈরি হচ্ছে।
৭২তম বর্ষে এই ভাবনা-চিন্তা রূপায়নে তাদের আনুমানিক ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে বলে জানান গৌরাঙ্গ। তাঁর কথায়, প্রযুক্তি আর আধুনিকতার হাত ধরে কালের বিবর্তনে আমরা হারিয়েছি আদিকালের ঐতিহ্যবাহী মাটির বাড়ি। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মাটির ঘরে বসবাস করে আসছে। কিন্তু এখন আর চোখেই পড়ে না মাটির ঘর, হারিয়ে গিয়েছে চেনা সেই মনোরম দৃশ্য।
এখানেই না থেমে শিল্পী বলেন, ঐতিহ্যের এই স্থাপনাটি এখন স্থান পেয়েছে হারিয়ে যাওয়ার বইয়ের পাতায়। হারিয়েছি লাঙ্গল, জোয়াল, হারিয়েছি মাটির তৈরি বিভিন্ন সাজ সরঞ্জাম। প্রচলিত সেই ঢেঁকি আজ লুপ্তপ্রায়। প্লাস্টিক-পলেথিন পণ্যের ভারে হারিয়েছি শাল পাতা ও পাটজাত পণ্যের দ্রব্যাদিও। যেগুলির ঠাঁই হচ্ছে জাদুঘরে। এবার সেইসব বিষয়ই তুলে ধরতে চাইছেন ত্রিধারার পুজো উদ্যোক্তারা।
পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে গার্গী মুখোপাধ্যায় জানান, প্রতি বছরই আমরা কোনও না কোনও ভাবনা চিন্তা নিয়ে কাজ করি। এবারও হারিয়ে যাওয়া বাংলার শিল্পকে তুলে ধরতে চাইছি। এক সময় নিজেদের ব্যবহার করা জিনিস এখন আমরা নিজেরাই চিনতে পারি না। এটা আগামী প্রজন্মের কাছে ক্ষতিকর।'
ত্রিধারার পুজো মানেই দক্ষিণ কলকাতায় উপচে পড়া ভিড়। গত বছর ৭১তম বর্ষে ত্রিধারার ভাবনায় ছিল 'আধুনিকতার গ্রাসে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি'। কিন্তু মানুষ ছুটে চলেছে আধুনিকতার দিকে। প্রকৃতির ধ্বংসের দিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। এটাই তুলে ধরার হয়েছে ত্রিধারার মণ্ডপে। থিম রূপায়নে শিল্পী ছিলেন এই গৌরাঙ্গ কুইল্যাই। তার আগের বছর ছিল, রহস্যময়ী আফ্রিকার অন্দরে দুর্গা আরাধনার আনন্দের থিম।