পদ্মাবতী ইস্যুতে গর্জে উঠল টলিউড, ধর্মীয় মৌলবাদকে তুলোধনা
পদ্মাবতী বিতর্কে টলিউডের প্রতিবাদ, পদ্মাবতীর সমর্থনে টলিউডের কর্মবিরতি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অশ্লীল মন্তব্যের প্রতিবাদ টলিউডের
'পদ্মাবতী' বিতর্কে দীপিকা পাড়ুকোন, সঞ্জয়লীলা বনশালীদের পাশেই দাঁড়াল বাংলা চলচ্চিত্র মহল। এই নিয়ে যে ভাবে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে এবং নানা ধরনের অশোভন মন্তব্য করা হচ্ছে তাঁর তীব্র সমালোচনা করেছে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্প মহলের অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে পরিচালক, প্রযোজক-সহ বিভিন্ন কলা-কুশলীরা।
[আরও পড়ুন:কার্নি সেনার হুমকির মুখে পদ্মিনীমহলে ঢাকা পড়ল এএসআই-এর ফলক, নেপথ্যে এই কারণ]
সোমবার কলকাতায় 'পদ্মাবর্তী' বিতর্কে একটি সাংবাদিক সম্মেলনও হয়। এতে বক্তব্য রাখেন গৌতম ঘোষ, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শ্রীকান্ত মোহতরা। 'পদ্মাবর্তী'-র উপর ধর্মীয় মৌলবাদের আঘাতের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বেলা বারোটা থেকে বারোটা পনের মিনিট পর্যন্ত এক প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করা হবে জানিয়েছেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
পরিচালক ও অভিনেতা গৌতম ঘোষ জানিয়েছেন, 'একটা ছবি তৈরি হল। কিন্তু সেই ছবি মুক্তি হওয়ার আগেই তার উপরে জারি করা হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। পদ্মাবতী ছবিটি ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি। কিন্তু, এই ইতিহাসের প্রামাণ্য কতটা তা আজও কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না। তাহলে এমন নিষেধাজ্ঞার মানেটা কী?' গৌতম ঘোষের মতে, 'পদ্মাবতী নিয়ে দেশজুড়ে যেভাবে ধর্মান্ধরা বিরোধিতা শুরু করেছেন তা সহ্য করা যায় না।'
ভারতবর্ষে বরেণ্য পরিচালকদের মধ্যেই গণ্য হয় গৌতম ঘোষের নাম। তিনিও বহু বছর সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি নিজেও 'মনের মানুষ' নামে লালন-ফকির-কে একটি ছবি তৈরি করেছিলেন। লালন ফকির পদ্মাপারের বাঙালির আবেগের আর-এক নাম। কিন্তু, সে ছবি নিয়ে সেভাবে কেউ বিতর্ক করেনি। স্বাভাবিকভাবেই 'পদ্মাবতী'-র উপরে জাতিসত্তার ভাবাবেগের ধুয়ো তুলে যেভাবে কুঠারাঘাত .করা হচ্ছে তাতে তিনি যে ব্যথিত তাও তুলে ধরেন গৌতম ঘোষ।
অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও জানান, 'সিনেমার কোনও জাত হয় না। সিনেমা একটা শিল্প। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পরিচালকের নির্দেশে কাজ করেন। কিন্তু, পদ্মাবতী বিতর্কে শিল্পীদেরকে টেনে বলা হচ্ছে তারা কোন কাজটি করবেন, কোন কাজটি করবেন না-- এটা মেনে নেওয়া যায় না। বাংলা ছবির জগত অনেকটাই ছোট। কিন্তু, ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি অংশ বাংলা ছবি। সুতরাং, পদ্মাবতীর পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানানোটা দরকার ছিল।' প্রসেনজিৎ-ও বলেন, মনের মানুষ- কে আপামর বাঙালি গ্রহণ করেছিল। আগে থেকে ভাবাবেগের কথা বলে কেউ বিরোধিতা করতে রাস্তায় নামেননি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও যে ভাবে 'পদ্মাবর্তী' ইস্যুতে অশ্লীলভাবে আক্রমণ করা হয়েছে এদিনও তা নিয়েও সরব হন গৌতম ঘোষ, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-সহ টলিউডের অধিকাংশ শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকরা। সাধারণ মানুষ একজনকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত করেন। সুতরাং, তিনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন। সুতরাং তাঁকে অশ্লীল কথা বলা মানে বাংলা-র মানুষকেও অপমান করা। 'পদ্মাবর্তী' বিরোধীদের এমন ধর্মীয় মৌলবাদী আক্রমণকে কোনওভাবেই সহ্য করা যায় না বলেও এদিনের এই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বার্তা দেওয়া হয়।