জন্মদিনে বাঙালীর 'রাজা'-কে শ্রদ্ধা জানালো গুগল
আজ রাজা রামমোহন রায়ের ২৪৬ তম জন্মদিন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানালো গুগল সংস্থা। আজকের গুগল ডুডলটি করা হয়েছে বাঙালীর এই 'রাজা'-কে নিয়েই।
তাঁকে বলে হয় 'আধুনিক ভারতের স্থপতি'। বলা হয় 'ভারতের নবজাগরণের জনক'। আজ সেই রাজা রামমোহন রায়ের ২৪৬ তম জন্মদিন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানালো গুগল সংস্থা। আজকের গুগল ডুডলটি করা হয়েছে বাঙালীর এই 'রাজা'-কে নিয়েই।
১৭৭২ সালে এই দিনেই তিনি জন্মেছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার রাধানগর গ্রামে। তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদী। তাঁর বাবা রামকান্ত রায় ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ। তাই বাড়িতে বরাবরই সনাতন হিন্দু ধর্মের আবহ ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালের এই ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম নেতা, একেবারে ছোটবেলা থেকেই প্রচলিত হিন্দু ধর্মের আচার বিচারের ঘোর বিরোধী ছিলেন।
ফলে সংঘাতটা বাধারই ছিল। তরুণ বয়সেই বাবার সঙ্গে ধর্ম নিয়ে বিরোধ বাধায় বরাবরের আপোসহীন রামমোহন রায় গৃহত্যাগ করেন। তারপর থেকে অনেকগুলো দিন কাটিয়েছেন হিমালয় ও তিব্বতে। ধর্মকে বুঝতে তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। এরপর ঘরে ফিরলে, ছেলের বাউন্ডুলেপনা কাটাতে তাঁর বাবা-মা তাঁর বিয়ে দেন। কিন্তু তাতে রামমোহনকে লক্ষ্যচ্যুত করা যায়নি। ততকালীন সমাজে ধর্মের নামে যে ভণ্ডামি চলছিল তাকে উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে তিনি ছিলেন অবিচল। আর এর জন্য হাতিয়ার করেছিলেন হিন্দুধর্মের দর্শনকেই।
তিনি গভীরভাবে উপনিষদ এবং বেদ অধ্যয়ন করেন। এরপরই রচনা করেন তাঁর প্রথম গ্রন্থ, 'তুহফাত আল-মুওয়াহিদীন'। এই গ্রন্থে তিনি ধর্মের পরিসরে যুক্তিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। সমাজের প্রচলিত ধর্মের রীতিসর্বস্যতার ঘোর বিরোধিতা করেন।
আজকের দিনেও সমাজে নারী-পুরুষের সাম্য নেই। সমাজে সমান জায়গা পেতে আজও মহিলাদের সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে। আজকের সমাজে অনেকেই হাতে স্মার্ট ফোন নিয়ে, আধুন্কতম পোশাক পরে মনে করেন, তিনি কত আধুনিক। অথচ মুখ খুললেই মধ্যযুগীয় আবদ্ধ বাতাসের পচা গন্ধ বের হয়। এই যেমন মাত্র কিছুদিন আগে মধ্যপ্রদেশের এক বিজেপি নেতা সওয়াল করেছিলেন মেয়েদের বাল্য বিবাহ নিয়ে। জানিয়েছিলেন বয়ঃসন্ধীতে পৌঁছলেই নাকি মেয়েদের মন উড়ু উড়ু করে। ভাবলে অবাক লাগে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে সমাজে মেয়েদের মুক্তির কথা ভেবেছিলেন রামমোহন। ভাবনার আধুনিকতায় তিনি পিছনে ফেলে দেবেন আজকের অনেক জিনস পরিহিত তথাকথিত আধুনিক পুরুষকেই।
সেসময় হিন্দু সমাজে 'সতিদাহ' প্রথার মতো কুপ্রথা প্রচলিত ছিল। স্বামী মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রীকে বা স্ত্রীদের মৃত স্বামীর জ্বলন্ত চিতাতেই জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হত। বলা হত এতে স্ত্রীরা পূন্য লাভ করে স্বর্গবাসী হবেন। রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে উৎসবের মেজাজে চলত এই নির্মম প্রথা। ঢাকের আওয়াজে চাপা পড়ে যেত ওই মহিলাদের আর্তনাদ। আপোসহীন সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় এই 'সতিদাহ' প্রথার গোড়ায় আঘাত করেন। শাস্ত্র থেকে যুক্তি তুলে এই প্রথার সারবত্তাহীনতা কে তুলে ধরেছিলেন তিনি। পাশাপাশি মহিলাদের পুনর্বিবাহ ও সম্পত্তির সমান অধিকার নিয়েও আজীবন সংগ্রাম করে গিয়েছেন।
১৮২৮-এ সালে, রামমোহন রায় 'ব্রাহ্মসমাজ' প্রতিষ্ঠা করেন। যা ভারতের প্রথম সামাজিক-ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন বলে মনে করা হয়। আজকের ভারতীয় সমাজে যখন মহিলারা চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, প্রচলিত প্রথার নামে রামনবমীর মিছিল করে সমাজে বিষ ছড়ানোর অপচেষ্টা হচ্ছে, তখন তাঁর মতো আধুনিক মনন ও সংস্কারককে স্মরণ করলো গুগল। আজকের গুগল ডুডলে জ্বলজ্বল করছেন বাঙালী সমাজের রাজা। ডুডলটি ডিজাইন করেছেন টরন্টোর ডিজাইনার বীনা মিস্ত্রি।