হাতে মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা, আর তাতেই মানুষকে দিতে হয় পুনর্জন্ম, দেখুন ভিডিও
চিকিৎসাবিজ্ঞানে এখন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সাফল্যের হার অনেক বেশি। কিন্তু, অঙ্গ প্রতিস্থাপন যতটা সহজ বলে মনে হচ্ছে ততটা নয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে এখন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সাফল্যের হার অনেক বেশি। কিন্তু, অঙ্গ প্রতিস্থাপন যতটা সহজ বলে মনে হচ্ছে ততটা নয়। কারণ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সঙ্গে জড়িত থাকে বেশকিছু ব্যবস্থা যেগুলি ঠিকমতো পালন না হলেই বিফলে চলে যেতে পারে প্রতিস্থাপন। এর সঙ্গে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সময়ের সঙ্গে দৌড়ানো। কারণ শরীরের ভিতর থেকে কোনও অঙ্গ বের করে অন্য একজনের শরীরে তা প্রতিস্থাপন করতে চিকিৎসকদের কাছে সর্বাধিক ঘণ্টা ছয়েক সময় থাকে। অঙ্গা দাতা ও গ্রহিতারা এক হাসপাতালে থাকলে সেভাবে সময় নিয়ে কোনও সমস্য়া থাকে না। কিন্তু, অঙ্গ যদি বাইরে থেকে আনতে হয় তখন সময়টা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
একস্থান থেকে অন্যস্থানে অঙ্গ নিয়ে যেতে প্রয়োজন হয় গ্রিন করিডরের। এই করিডরের মানে কোনও বাধাই ছাড়া অঙ্গ বহনকারী গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যেতে পারেন। এর জন্য পুলিশ-প্রশাসনের একটা বড় ভূমিকা থাকে। গ্রিন করিডর মূলত সড়ক যোগাযোগেই হয়ে থাকে। তবে, প্রয়োজন বিশেষে বিমান ওঠা-নামার ক্ষেত্রেও গ্রিন করিডর তৈরি করা যেতে পারে। উড়ানে প্রতিস্থাপনের জন্য যদি কোনও অঙ্গ থাকে তখন এই করিডর তৈরি করা হয় বিমানবন্দরে।
গ্রিন করিডর তৈরি হলেই হবে না হাসপাতালেও যাবতীয় আয়োজন তৈরি করে রাখতে হয়। যেন প্রতিস্থাপনের অঙ্গ এস পৌঁছলেই সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচারের কাজ শুরু করে দেওয়া যায়। এর জন্য রোগীকেও অস্ত্রোপচারের জন্য তৈরি করে রাখতে হয়। তবে, একটা জিনিস মাথায় রাখতে হয় চিকিৎসকদের- আর সেটা হল বিশেষ করে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে। কারণ, এখানে কোনও লাইফ-লাইন থাকে না। সামান্য ভুলে মৃত্যু নেমে আসতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। তাই হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন শুধু ঝঁকির কাজ নয়, এরসঙ্গে জড়িয়ে থাকে মৃত্যুর থাবা।
হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন মানে গ্রহিতার শরীর থেকে অকেজো হার্টকে বের করে নিয়ে সচল হৃদযন্ত্রকে প্রতিস্থাপন করতে হয়। এই প্রতিস্থাপনের জন্য চিকিৎসকদের কাছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় থাকে। অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর রোগীকে স্টেবিলাইজ করাটা চিকিৎসকদের প্রধান কাজ। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর রোগীর এমন স্থানে থাকা উচিত যেখান থেকে হাসপাতালের দূরত্ব সর্বাধিক ৩০ মিনিট। অন্তত ৬ সপ্তাহ রোগীকে এই ধরনের রুটিন অনুসরণ করতে হয়। কারণ ঘন ঘন এই সময় রোগীকে হাসপাতালে আসতে হয়। বেশকিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষাও করাতে হয়। সুতরাং রোগী দূরে থাকা মানে যাতায়াতের ধকল নেওয়া। আর এতে রোগীর শারীরিক অবস্থা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
হৃদযন্ত্র প্রতিস্তাপনের পর অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করতে পারেন রোগী। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো পেনকিলার খেতে হয়। শারীরিকভাবেও নানা অস্বচ্ছন্দ্য তৈরি হতে পারে, কিন্তু অঙ্গ প্রতিস্থাপনের শুরুতে এই ধরনের অসুবিধা থাকেই। হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের অন্তত ৬ সপ্তাহ পরে একজন রোগী আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে আসতে পারেন। অনেকে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের পরপরই গাড়িও চালাতে শুরু করেন। মাথায় রাখতে হবে এই ধরনের কাজ একজন রোগী তখনই করতে পারেন যখন হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য করা বুকের ক্ষত পুরোপুরি সেরে যায় এবং বুকের হাড়ে কোনও ব্যাথ্যা থাকে না।
[আরও পড়ুন:সিনেমাকেও হার মানাল এই ঘটনা, মাত্র ২০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে গেল হৃদযন্ত্র]
সাধারণত প্রতিস্থাপনের জন্য আনা হৃদযন্ত্র অপারেশন থিয়েটারে বেশিক্ষণের জন্য ফেলে রাখার নিয়ম নেই। অপারেশন থিয়েটারের প্রতিস্থাপনের হৃদযন্ত্র ঢুকলেই তা আগে পরীক্ষা করে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা দেখে নেন তা ঠিকঠাক কাজ করছে কি না। চিকিৎসকরা প্রতিস্থাপন করতে চলা হৃদযন্ত্রের কার্যকরিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হলেই রোগীকে জেনারেল অ্য়ানাস্থেসিয়া করা হয়। এরপর বুকের ব্রিথ-বোন কেটে কয়েক মিনিটের মধ্যে অকেজো হৃদযন্ত্র বের করে নিয়ে চালু হৃদযন্ত্রটিকে সেখানে বসিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিস্থাপন হৃদযন্ত্রকে নতুন শরীরের মধ্যে স্টেবিলাইজ করানোর কাজ শুরু হয় এরপরে। এই প্রক্রিয়াটাই দীর্ঘ। এতে সামান্য ভুলচুক হলে কিন্তু চিকিৎসকরা রোগীর জীবন ফেরানোর কোনও লাইফ-পান না। হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনে এটাই সবচেয়ে জটিল ও ঝুঁকির। এই প্রক্রিয়া সফল হলেই চিকিৎসকরা এরপর রোগীর বুকের ক্ষত সেলাই করে তাকে স্টেবিলাইজ করার পদ্ধতি অনুসরণ করেন।