বঙ্গ বিজেপির দায়িত্ব নিয়েই হারের হ্যাটট্রিক সুকান্তর! সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ রাজ্যের পুরভোটে
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ব্যর্থতার পর দিলীপ ঘোষ অপসারিত হয়েছেন রাজ্য সভাপতির পদ থেকে। বঙ্গ বিজেপির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে তরুণ তুর্কি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের উপর। কিন্তু তিনি শুরুই করলেন হারের হ্যাটট্রিক দিয়ে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন মাসে তিনটি নির্বাচন হল, তিন নির্বাচনেই হারের মুখে পড়তে হল তাঁকে।

ভবানীপুর-সহ তিন কেন্দ্রে হার বিজেপির
সুকান্ত মজুমদারকে বঙ্গ নেতৃত্বের মাথায় বসিয়ে নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র তিনমাস হয়েছে। তিনি কার্যত হারের হ্যাটট্রিক করে বসেছেন। তিনি দলের দায়িত্ব নিয়ে সব কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভবানীপুরে উপনির্বাচন ও মুর্শিদাবাদের দুটি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনটি কেন্দ্রেই হারের মুখে পড়তে হয় বিজেপিকে। ২০ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নিয়েছিলেন সুকান্ত। ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল ভবানীপুর-সহ তিন কেন্দ্রের ভোট।

চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও শোচনীয় হার
এরপর বাকি চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়। ৩০ অক্টোবরে সেই উপনির্বাচনেও বিজেপি হার মানে। সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বিজেপি লড়াই দিতে ব্যর্থ হয়। চার কেন্দ্রেই বিপুল ব্যবধানে জয় লাভ করে তৃণমূল। গুছিয়ে ওঠার আগেই বিজেপির দায়িত্ব নিয়ে আরও একটি হারের মুখে পড়তে হয় সুকান্ত মজুমদারকে।

সুকান্তর তৃতীয় হার কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে
আর তৃতীয় হার হল কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে। এবার কিন্তু তিনি হাতে অনেকটাই সময় পেয়েছিলেন। ১৯ ডিসেম্বর ভোট ঘোষণা হয়। কিন্তু ততদিনে আড়াই মাসেরও বেশি দায়িত্বে এসেছেন সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু বঙ্গ বিজেপিকে তিনি কঠিন চ্যালেঞ্জারের ভূমিকায় অবতীর্ণ করাতে পারেননি। বিজেপি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতেই বিলম্ব করে দেয়।

বিজেপি যেন হারবে ভেবেই নেমেছিল ভোটে
বিজেপি একুশের নির্বাচনে যেভাবে কোমর বেঁধে নেমেছিল, কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে তেমন কঠিনতর প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা যায়নি তাদের। কলকাতায় বিজেপি দুর্বল ঠিকই, কিন্তু প্রধান বিরোধী দলের যেরকম ভূমিকা হওয়া উচিত, এবারের কলকাতা নির্বাচনে তেমন ভূমিকায় দেখা যায়নি বিজেপিকে। বিজেপি যেন হারবে ভেবেই নেমেছিল ভোট ময়দানে।

পুরভোটের প্রচার ছেড়ে বিজেপি সিঙ্গুরে
বিজেপি মধ্যে ছন্নছাড়া ভাব ছিল। প্রার্থীরাই অভিযোগ করছিলেন, তাঁরা নেতৃত্বকে পাশে পাচ্ছেন না। আবার কলকাতা পুরসভার মুখে যখন ভোট প্রচার তুঙ্গে তোলা দরকার ছিল, তখন সেইসব ছেড়ে বিজেপি সিঙ্গুরে গিয়েছিল কৃষকদের সমর্থনে আন্দোলন করতে। বিজেপির মোটো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তখনই। বিজেপি নেতৃত্বের কাউকেই কলকাতা পুরসভা ভোট প্রচারে সেভাবে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়নি।

ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা বের করতে হবে সুকান্তকে
এখন সুকান্ত মজুমদারের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। তিনি সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছেন। আর দায়িত্ব নিয়েই তাঁকে হারের হ্যাটট্রিকের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি সেভাবে কাউকেই পাশে পাননি। কোনও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও পাননি তিন দফায় নির্বাচন, উপনির্বাচন ও পুর-নির্বাচন জিততে। কিন্তু তাঁণর নামের পাশে তিনটি লাল কালি পড়ে গিয়েছে। সামনে শতাধিক পুরসভায় নির্বাচন হতে চলেছে। সেই নির্বাচনে তাঁকে ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা বের করতে হবে।

একুশের নির্বাচনের পর দিকভ্রান্ত বিজেপি
কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিজেপির তেমন কোনও পরিকল্পনা দেখা যায়নি। বিজেপিকে একুশের নির্বাচনের পর দিকভ্রান্ত দেখাচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে হয়তো জানুয়ারিতেই বেশ কিছু পুরসভার ভোট হবে। কিন্তু বিজেপির মধ্যে তেমন কোনও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ২০১৯ থেকে ২০২১ যে ভূমিকায় দেখা গিয়েছেন কেন্দ্রের শাসক দলকে, একুশের বিধানসভা পরবর্তী সময়ে বিজেপি যেন আবারও ২০১৪-র আগে ফিরে গিয়েছে বাংলায়।

২০১৫-র ফলাফলটাও ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি
বিজেপি এবার কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে ২০১৫-র ফলাফলটাও ধরে রাখতে পারেনি। পারেনি ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে এগিয়ে থাকা ওয়ার্ডগুলোকে ধরে রাখতে। মাত্র তিনটি আসনে জয়যুক্ত হয়েছে বিজেপি। চিরাচরিত জেতা ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড। আর এবার সজল ঘোষের দৌলতে ৫০ নম্বর ওয়ার্ড। অথচ বিজেপি ২০১৫ সালে ৭টি ওয়ার্ডে জিতেছিল। আর একুশরে বিধানসভায় বিজেপির ১২টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল। কিন্তু এবার পুরভোটে সব ভোঁকাট্টা।

শূন্য থেকে শুরু করতে হবে সুকান্তকে
ভোট প্রাপ্তির নিরিখে বিজেপি তৃতীয় হয়ে গিয়েছে কলকাতা পুরসভায়। এবং দ্বিতীয় স্থানে থাকার নিরিখেও তাঁরা সিপিএমের পরে। তৃণমূল যেখানে ৭২ শতাংশ ভোট পেয়েছে, বিজেপি সেখানে ১০-এর নিচে। সিপিএম ১১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আর সিপিএম তথা বামফ্রন্ট দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূলের জেতা ১৩৪টির মধ্যে ৬৬টি আসনে। আর বিজেপি রয়েছে মাত্র ৪৭টিতে। ফলে সুকান্ত মজুমদারকে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। এবার জেলার পুরসভায় ভোট, তিনি কীভাবে রণনীতি সাজান, তা-ই দেখার।