হিন্দি সিনেমা দেখেই অপহরণের গল্প ফাঁদে সল্টলেকের ‘অপহৃতা’ ছাত্রী
হিন্দি সিনেমা দেখেই অপহরণের গল্প ফেঁদেছিল সল্টলেকের ‘অপহৃতা’ ছাত্রী। এমনকী বাড়ি থেকে পালিয়ে বাবাকে মিথ্যে অপহরণের গল্প শুনিয়ে একাধিক হিন্দি ছবিও দেখে সে।
কলকাতা, ১ এপ্রিল : হিন্দি সিনেমা দেখেই অপহরণের গল্প ফেঁদেছিল সল্টলেকের 'অপহৃতা' ছাত্রী। এমনকী বাড়ি থেকে পালিয়ে বাবাকে মিথ্যে অপহরণের গল্প শুনিয়ে একাধিক হিন্দি ছবিও দেখে সে। তারপর দু'টি ক্যাব ব্যবহার করে রাতভর সে কলকাতা ও হুগলির বিভিন্ন এলাকায় ঘোরে। এমনকী শপিং করার পাশাপাশি দুপুরে সিনেমা দেখারও পরিকল্পনা ছিল তার। তার কাছে থেকে উদ্ধার হয়েছে সিনেমার একটি টিকিটও। তার আগেই অবশ্য পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় সল্টলেকের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী।
সিটি সেন্টার-টু থেকে তাকে উদ্ধার করে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে সে সিটি সেন্টারে রয়েছে। সেইমতো ছাত্রীর বাবাকে নিয়ে ছাত্রীটিকে উদ্ধার করা হয়। সে সিটি সেন্টারে ঘোরাঘুরি করছিল একাকী। তখনই পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। 'অপহৃতা' ওই ছাত্রীকে জেরা করে পুলিশ তার এই অপহরণ নাটকের কাহিনি জানতে পেরেছে।
পুলিশকে ওই ছাত্রী জানায়, শ্যামবাজার এলাকা থেকে সে বাবাকে ফোন করে জানিয়েছিল তাকে চির চারজন যুবক তুলে নিয়ে গিয়েছে। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী প্রথমেই সে হুগলির কোন্নগর চলে গিয়েছিল, তারপর রাতেই গিরিশ পার্ক হয়ে শ্যামবাজার আসে সে। তারপর তার মোবাইলের সুইচড অফ হয়ে যায়। সকালে তার টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় সিটি সেন্টারে সেইমতো হুগলিতে অভিযানে যাওয়ার পরিকল্পনা বানচাল করে সিটি সেন্টারে অভিযান চালায় পুলিশ।
একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কাতেই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে অপহরণের গল্প ফাঁদে সে। একটি হিন্দি সিনেমা থেকেই এই ভানা তার মাথায় এসেছিল। সেইমতোই অপহরণের গল্প ফেঁদে পুলিশকে ১৬ ঘণ্টা হিমশিম খাইয়ে দিল একরত্তি মেয়েটা।
পুলিশ এখন জানার চেষ্টা চালাচ্ছে, কেন সে প্রথমেই কোন্নগরে গেল। ওই কিশোরীর সঙ্গে অন্য কেউ ছিল কি না। একাকী রাতভর কলকাতায় ও কলকাতা সংলগ্ন জেলায় গাড়ি নিয়ে ঘোরার তত্ত্ব পুলিশ বিশ্বাস করছে না। প্রথম থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে ধন্দ ছিল। এখন ছাত্রী উদ্ধারের পর অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে তাকে অপহরণ করা হয়নি। স্বেচ্ছায় সে পালিয়ে গিয়েছিল। এখন তার পালিয়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সেইসঙ্গে এই কাজে তাকে কেউ সঙ্গ দিয়েছিল কি না তাও জানার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
শুক্রবার সল্টলেকের এফসি ব্লক থেকে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায় ব্যবসায়ী কিশোরী কন্যা। এরপর তাকে 'অপহরণ' করা হয়েছে বলে গল্প ফাঁদে সে। রাত দশটা নাগাদ বাবার মোবাইলে ফোন করে 'অপহৃতা' ছাত্রী জানায়, তাকে তিন-চারজন যুবক জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছে। তারপর থেকেই আর কোনও যোগাযোগ করা যায়নি ওই কিশোরীর সঙ্গে। বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ ছাত্রীটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ১৬ ঘণ্টায় অন্তর্ধান রহস্যের উন্মোচন ঘটায়।