দৃষ্টিহীনদের কথা মাথায় রেখে সমাজসেবী সংঘের এবারের থিম 'স্পর্শ'
দৃষ্টিহীনদের কথা মাথায় রেখেই দক্ষিণ কলকাতার সমাজসেবী সংঘের নতুন প্রয়াস। থিমের নাম করা হয়েছে 'স্পর্শ'।
দেবী দুর্গার আগমনে আকাশে বাতাসে পরিবেশের কতই না পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। কাশফুলে লাগে দোলা। এগুলিই সচরাচর লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এমন অপরূপ দৃশ্য থেকে যারা বঞ্চিত তাদের কথা কেউ ভাবেন না। কি ভাবছেন? কাদের কথা বলছি? বলছি দৃষ্টিহীনদের কথা। সমাজের মূল স্রোত থেকে যাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পিছিয়ে রয়েছেন। তাই এবার সেই সমস্ত দৃষ্টিহীনদের কথা মাথায় রেখেই দক্ষিণ কলকাতার সমাজসেবী সংঘের নতুন প্রয়াস। থিমের নাম করা হয়েছে 'স্পর্শ'।
শিল্পীর ভাবনা
শিল্পীদের নাম শুভজিৎ ও সুমি। তাঁরা জানান, 'চারটি ভাগে ভাগ করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে সমাজসেবির মন্ডপ। প্রথম অংশে থাকবে ব্রেইল। এর মাধ্যমে পূজো সংক্রান্ত বেশ কিছু শধ, যা সেই সমস্ত দৃষ্টিহীন মানুষরা এসে সহজেই অনুভব করতে পারবেন। পরের ধাপে থাকছে শোনার জন্য ব্যবহৃত সাউন্ড বক্স, রেডিও এবং টিভি ইনস্টলেশন।
বিশেষ ব্যবস্থা
কারণ আমরা যারা চোখে দেখতে পাই তারা বাইরে ঘুরে পুজোর হোর্ডিং, ব্যানার দেখে মাঠে কাশ ফুলের সমারোহ দেখে সহজেই বুঝতে পারি। পুজো আসছে এটা কিন্তু দৃষ্টিহীনদের জন্য বোঝার অন্যতম উপায় হচ্ছে শধ। রেডিওতে শোনা থিমের বিষয়ে টেলিভিশনে দেখানো খবরের থেকে তাঁরা বুঝতে পারেন পুজো আসছে। সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন তারা রেডিওতে মহালয় শোনার জন্য। তারপর এই ধাপে ধাপে থাকছে একটি অনন্য ভাবনা।
চক্ষুদানের সতর্কতা
সেই অংশে দেখানো হবে কিভাবে এই ধরনের মানুষরা এরা পুজোকে কল্পনা করে। তাদের মুখে শোনা গল্পের ভিত্তিতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে অংশটি এরপরেই যেখানে মানুষকে আরও বেশি করে চক্ষুদানের বিষয়ে সচেতন হওয়ার বার্তা দেওয়া হবে। মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমাজ সেবীর প্রতিমা করেছেন শিল্পী পরিমল পাল। তবে তারা যে একেবারে শুধুমাত্র থিম এর মধ্যেই নিজেদের ভাবনাকে আটকে রেখেছেন, তা নয়। মণ্ডপের ঠিক বাইরে তৈরি হচ্ছে একটি মেডিকেল ক্যাম্প। সেখানে দৃষ্টি দানের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা হবে। ইতিমধ্যেই সমাজসেবী উদ্যোক্তদের ৩০ জন সদস্য এই মরণোত্তর চক্ষুদানের তালিকায় নাম নথিভুক্ত করেছেন। পুজো কর্মকর্তাদের প্রধান অরিজিৎ মৈত্র জানান, '৩০ নয় আমাদের লক্ষ্য ১০০ জন মানুষ। যদি এতজন আমাদের এই তালিকায় যুক্ত হন তবেই সাফল্য আসবে।
চমকে দেওয়া পরিসংখ্যান
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের এক কোটি কুড়ি লক্ষ মানুষ দৃষ্টিহীন। তার মধ্যে ২৬ শতাংশই শিশু। তাদের জগত সম্পূর্ণ অন্ধকারে। কিন্তু পুজোর সময় তাদের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দ অনুভূতি জেগে ওঠে। তাই দৃষ্টিহীনদের জন্য এই ভাবনা চিন্তা উদ্যোক্তাদের। তাঁরা বলছেন, মানুষের কাছে আমাদের একটাই আবেদন মৃত্যুর পর চোখ নষ্ট না করে মানুষকে দান করুন তাতে যারা কোনদিনও পৃথিবীর আলো দেখতে দেখেনি তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষ হয়ত সে আলো দেখতে পাবে।