ইচ্ছাপূরণ হল না প্রয়াণেও, সোমনাথের শুরু নির্দল হিসেবে, চলেও গেলেন ‘দলহীন’ হয়ে
মনের ভিতরে সুপ্ত বাসনা ছিল, তিনি যেদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন, তাঁর দেহের উপর থাকবে লাল পতাকার আচ্ছাদন। তাঁর সেই বাসনা অপূর্ণই রয়ে গেল।
মনের ভিতরে সুপ্ত বাসনা ছিল, তিনি যেদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন, তাঁর দেহের উপর থাকবে লাল পতাকার আচ্ছাদন। তাঁর সেই বাসনা অপূর্ণই রয়ে গেল। মৃত্যুতেও অসমাপ্ত সোমনাথ-বিতর্ক। দল তাঁকে আলিমুদ্দিনে নিয়ে যেতে চাইলেও পরিবারের আপত্তিতে গুরুত্ব পেল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিমানী ব্যক্তিত্বই।
১৯৬৮ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। যোগ দিয়েছিলেন সিপিএমে। তবে ১৯৭১ সালে বর্ধমান থেকে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁকে সমর্থন দিয়েছিল সিপিএম। শুরুর মতোই শেষ তাঁর। শেষ জীবনে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে দলের নির্দেশ অমান্য করেছিলেন। সাংবিধানিক দায়িত্ববোধকেই কর্তব্য ভেবেছিলেন।
তারই ফলে তাঁকে বহিষ্কৃত হতে হয়। একজন দুঁদে রাজনীতিবিদ, একজন আদর্শ নেতা হওয়া সত্ত্বেও দল তাঁকে বহিষ্কৃত করে। সেই অভিমানের শেষ হয়নি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। মনে একরাশ দুঃখ নিয়ে তিনি বিদায় জানালেন পৃথিবীকে। তবু শেষ হল না বিতর্কের। তাঁর মৃত্যুতেও দ্বন্দ্বে সিপিএম। সিপিএমের বঙ্গ নেতৃত্ব তাঁকে দলের ঊর্ধ্বে বলে ব্যাখ্যা করলেও, আলিমুদ্দিনে আর যাওয়া হল অভিমানী সোমনাথের।
২০০৮ সাল থেকে তিনি দলহীন। রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেন দল বহিষ্কারের পর থেকেই। এরপর বহু প্রলোভনেও তিনি রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেননি। ১০ বছর ধরে তিনি ছিলেন সক্রিয় রাজনীতির আড়ালে। তবে রাজনৈতিক মতামত দিয়েছেন। ২০১১-য় বাংলায় পরিবর্তন থেকে শুরু করে ২০১৮-য় পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে তিনি মত প্রকাশ করেছেন।
[আরও পড়ুন: দল ব্রাত্য করলেও, বামপন্থায় ছিল অটুট বিশ্বাস, দায়িত্ববোধে আজীবন অবিচল সোমনাথ]
এই মহান রাজনীতিবিদ জ্যোতি বসুকে নিজের রাজনৈতিক গুরু মনে করতেন। জীবনের শেযদিন পর্যন্ত সেই আদর্শ থেকে তিনি সরে আসেননি। ১৯৬৮ সালে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন থেকে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করার পর থেকেই তিনি দলে অপরিহার্য করে তুলেছিলেন নিজেকে। বর্ধমান থেকে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন। তারপর তিনি তিনবার লড়েন যাদবপুর থেকে। ১৯৮৪ সালে তিনি একবারই হেরেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হারের পরের বছরেই তিনি বোলপুর থেকে উপনির্বাচনে জয়ী হন। তারপর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বোলপুরের সাংসদ। এর মধ্যে শেষ পাঁচ বছর তিনি লোকসভার স্পিকার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
[আরও পড়ুন: বামপন্থী সোমনাথের প্রয়াণে পাশে মমতা, 'বিভেদে'র দেওয়াল ভেঙে কাঁধে নিলেন 'দায়িত্ব' ]