কালী আরাধনাকে সামনে রেখে সমাজ সেবা, বিতরণ হবে শীত বস্ত্র
কালী আরাধনাকে সামনে রেখে সমাজ সেবা, বিতরণ হবে শীত বস্ত্র
শারদোৎসবের পর পরই বাংলা ও বাঙালী মেতে ওঠে আলোর উৎসব ' মা কালি'র আরাধনায়। আগামীকাল ২৪শে অক্টোবর কালি পূজো। এই কালি পূজোয় ভবানীপুরের ৬৮ পল্লীও তৈরি হচ্ছে কালী পূজার জন্য।
কারা করবেন দ্বার উদ্ঘাটন?
এই পূজো উপলক্ষে আগামী কাল ২৩শে অক্টোবর বিকেল ৫টায় ভবানীপুর ৬৮ পল্লীর কালি পূজোর প্যান্ডেলের দ্বার উৎঘাটন হবে। দ্বার উৎঘাটন করবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি,রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক কুমার গাঙ্গুলী, প্রধান অতিথি রুপে উপস্থিত থাকবেন সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য্য সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গগন।
শীতবস্ত্র বিতরন
উদ্বোধনের পর সংগীতানুষ্ঠান,নিত্য পরিবেশন,দুঃস্থদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরন করা হবে। কালী বা কালিকা হলেন একজন দেবী। তিনি দেবী দূর্গার একটি রূপ । তার অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। প্রধানত শাক্ত সম্প্রদায় আবশ্যিক কালীপূজা করে থাকে। তন্ত্র অনুসারে কালী দশমহাবিদ্যা-র প্রথম দেবী। শাক্তমতে কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ। বাঙালি হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়।
দেবীর আর্বিভাব
দেবীর আর্বিভাব সম্পর্কে পৌরাণিক ব্যাখ্যা ও সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী পুরাকালে শুম্ভ এবং নিশুম্ভ নামক দুই দৈত্য সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের ভয়ঙ্কর ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল। দেবতারাও এই দুই দৈত্যের কাছে যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে। ফলে দেব লোক তাদের হাতছাড়া হয়ে যায় তখন দেবরাজ ইন্দ্র দেবলোক ফিরে পাওয়ার জন্য আদ্যশক্তি মা পার্বতীর তপস্যা করতে থাকেন, তখন দেবী সন্তুষ্ট হয়ে তাদের কাছে আবির্ভূত হন এবং দেবীর শরীর কোষ থেকে অন্য এক দেবী সৃষ্টি হয় যা কৌশিকী নামে ভক্তদের কাছে পরিচিত। দেবী কৌশিকী মা মহামায়ার দেহ থেকে নিঃসৃত হয়ে মহাকাল বর্ণ ধারণ করে, যা দেবী কালীর আদিরূপ বলে ধরা হয়।
পুরাণ ও তন্ত্র সাহিত্যে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। এগুলি হল-দক্ষিণাকালী(শ্যামা),মহাকালী,শ্মশানকালী গুহ্যকালী, ভদ্রকালী, সিদ্ধকালী, আদ্যাকালী, চামুন্ডাকালী। আবার বিভিন্ন মন্দিরে "ব্রহ্মময়ী", "ভবতারিণী", "আনন্দময়ী", "করুণাময়ী" ইত্যাদি নামে কালীপ্রতিমা পূজা করা হয়। এই সব রূপের মধ্যে দক্ষিণাকালীর বিগ্রহই সর্বাধিক পরিচিত ও পূজিত। দক্ষিণাকালী চতুর্ভূজা। তার চার হাতে খড়্গ, অসুরের ছিন্ন মুণ্ড, বর ও অভয়মুদ্রা রয়েছে। তার গলায় রয়েছে নরমুণ্ডের মালা। দেবীর গায়ের রং কালো। মাথায় আলুলায়িত চুল এবং তিনি শিবের বুকে ডান পা আগে রেখে দণ্ডায়মান।
দেবী
ব্রহ্মযামল নামক তন্ত্রগ্রন্থের মতে, কালী বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জাঁকজমক সহকারে পালিত হয়। এছাড়া মাঘ মাসের চতুর্দশী তিথিতে রটন্তী কালীপূজা ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালীপূজাও বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়াও ভাদ্র ও পৌষ মাসের অমাবস্যায় কালী পুজো বিশেষ জনপ্রিয়। অনেক জায়গায় প্রতি অমাবস্যা এবং প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবারে কালীপূজা হয়ে থাকে। ভারত, বাংলাদেশে অনেক কালী মন্দিরের দেখা পাওয়া যায়।
চামুণ্ডাচর্চিকা কালীর পূজা বাংলা ও বহির্বঙ্গে প্রাচীন উৎসব হলেও বর্তমান আকারে কালীপূজা আধুনিক কালের। ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ স্মার্ত পণ্ডিত তথা নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপূজার বিধান দিলেও, কালীপূজার উল্লেখ করেননি। ১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে, "কাশীনাথ এই গ্রন্থে কালীপূজার পক্ষে যে ভাবে যুক্তিতর্কের অবতারণা করিয়াছেন, তাহা দেখিলেই মনে হয়, কালীপূজা তখনও পর্যন্ত বাঙলা দেশে সুগৃহীত ছিল না।" তবে খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলায় কালীপূজার প্রচলনের কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
সপ্তদশ শতকের নবদ্বীপের প্রথিতযশা তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়। তাঁর পূর্বে কালী উপাসকগণ তাম্রটাটে ইষ্টদেবীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে পূজা করতেন। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, "কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বয়ং কালীমূর্তি গড়িয়া পূজা করিতেন। আগমবাগীশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া বাংলার সাধক সমাজ অনেকদিন চলেন নাই; লোকে 'আগমবাগিশী' কাণ্ড বলিয়া তাঁহার পদ্ধতিকে উপেক্ষা করিত।" অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এই সময় রামপ্রসাদ সেনওআগমবাগীশের পদ্ধতি অনুসারে কালীপূজা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপূজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে কালীপূজা বাংলায় দুর্গাপূজার মতোই এক বিরাট উৎসব।
গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দেবীকে ছিন্নমস্তক সহ বলির পশুর রক্ত, মিষ্টান্ন, অন্ন বা লুচি, মাছ ও মাংস উৎসর্গ করা হয়।
কেকের পর কালী পুজোয় সুর সম্রাজ্ঞী, মণ্ডপ সাজছে পূর্ব কলকাতায়