নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে লাইভ অনুষ্ঠান, দিল্লি চললেন বারুইপুরের শইদুল
দিল্লি চললেন শইদুল লস্কর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে লাইভ অনুষ্ঠানে এবার অংশ নেবেন শইদুল। যা সম্প্রচারিত হবে দূরদর্শনে।
দিল্লি চললেন শইদুল লস্কর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে লাইভ অনুষ্ঠানে এবার অংশ নেবেন শইদুল। যা সম্প্রচারিত হবে দূরদর্শনে। ইতিমধ্যে চিঠি পাঠিয়ে শইদুল-কে এই অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে দিয়েছে প্রসারভারতী। দিল্লি যাওয়ার বিমানের টিকিটও পাঠানো হয়েছে শইদুল-কে।
মার্চ মাসে 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদীর মুখে শোনা যায় শইদুল-এর অনুপ্রেরণা জাগানো কাহিনি। কী ভাবে বোনের স্মৃতিতে ট্যাক্সি চালিয়ে এক হাসপাতাল তৈরি করেছেন বারুইপুরের শইদুল সেকথাই দেশবাসীকে জানান প্রধানমন্ত্রী। শুধু হাসপাতাল বানানো নয় বিনামূল্যে যে চিকিৎসারও বন্দোবস্ত করেছেন শইদুল সেটাও জানান তিনি।
শইদুল-এর বোন মারুফা ছোট্ট বয়সেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিল। অর্থনৈতিক অনটনে বোনের সেভাবে চিকিৎসাও করাতে পারেনিন শইদুল। চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় বোনকে মৃত্যুর মুখে পতিত হতে দেখেছিলেন। এরপরই তিনি গ্রামের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাইয়ে দেওয়ার শপথ নেন। ট্যাক্সি চালাতে চালাতেই সেখান থেকে একটা অংশের অর্থ সরিয়ে রাখতেন বোনের নামে হাসপাতাল তৈরির জন্য। এভাবে প্রায় এক দশকেরও বেশি বেশকিছু অর্থ জমান সইদুল। ট্যাক্সি চালিয়ে জমা করা সেই অর্থ থেকেই জমি কিনে শুরু করেছিলেন মারুফা মেমোরিয়াল হাসপাতাল তৈরি কাজ। এর সঙ্গে এলাকার মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রও শুরু করেন শইদুল। তাঁর স্ত্রী নিজের গয়নাও বেঁচে দেন স্বামীর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে। অল্পদিনের মধ্যেই নির্মিয়মাণ হাসপাতালের মধ্যেই বিনামূল্যে ক্লিনিক খোলেন শইদুল। সেখানে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা শুরু করেন তিনি। শুধু বিনামূল্যে রোগী দেখার সুবিধা নয় সেইসঙ্গে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের ব্যবস্থাও করেছিলেন শইদুল। রোগী দেখার জন্য নানা স্থান থেকে এই বিনামূল্যের ক্লিনিকে চিকিৎসকও আনেন তিনি।
এহেন শইদুলকে 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে কুর্ণিশ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী দেওয়া সেই স্বীকৃতির পর কেটে গিয়েছে অনেক কটা মাস। ট্যাক্সি চালক শইদুল-কে এখন চেনে না এমন মানুষ কলকাতা ও বারুইপুর অঞ্চলে খুব কমই রয়েছে। হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখনও আরও ভালো করে রোগী দেখা যাচ্ছে মারুফা মেমোরিয়াল হাসপাতালে। খুশি শইদুল। অকালে বোনকে হারিয়ে ব্যাথাতুর মনে এক মহান কাজে ব্রতি হয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে এবার আরও এক প্রকল্পের গল্প শোনাতে চান তিনি। এর জন্য খরচ পড়বে বারো কোটি টাকা। 'মারুফা মেমোরিয়াল হাসপাতাল অ্যান্ড জেরিয়াট্রিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট' নামে প্রতিষ্ঠানের কাজ হবে যে সব প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করছেন তাঁদের কাছে চিকিৎসা ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়া। ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি-কে এমনই কথা জানালেন শইদুল।
এই নয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মহিলাদের মাধ্যমে প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া-দের সম্পর্কে একটি বিশাল ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন শইদুল। যাতে এই সব মানুষগুলির যাবতীয় মেডিক্যাল হিস্ট্রি নথিবদ্ধ করা থাকবে। সংস্থা থেকে নিয়মিত কর্মীরা গিয়ে এই মানুষগুলির শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেবে এবং রিপোর্ট তৈরি করবে। কোনও অস্বাভাবিক কিছু দেখলে তখন তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন এই কর্মীরা। প্রয়োজনে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করারও সুবিধা রাখার কথা ভাবছেন শইদুল। কিন্তু, এমন একটা প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে অর্থের জোগান ঠিকমতো করতে হবে। আর সেই কারণে এই প্রকল্পে সরকারি সাহায্য পাওয়া যায় কি না সেটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনে তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন শইদুল। বলতে গেলে এক নয়া স্বপ্নের সওয়ারি হয়ে দিল্লির দরবারে লাইভ টেলিকাস্টে নরেন্দ্র মোদীর মুখোমুখি হতে চলেছেন শইদুল।