অন্তরালে থেকেই চির অন্তরালে পার্থ দে! তবে কি ফের মানসিক অবসাদ গ্রাস করেছিল তাঁকে?
বাড়িতে পা দিয়েই সাময়িক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। আর বলেছিলেন, ‘সুস্থ হয়েছি। এবার সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। এবার কাজ করে থিতু হতে চাই জীবনে।’
কলকাতা, ২১ ফেব্রুয়ারি : কঙ্কালকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার ঠিক এক বছরের মাথায় বাড়ির চাবি ফিরে পেয়ে রবিনসন স্ট্রিটের বাড়িতে পা দিয়েছিলেন পার্থ দে। বাড়িতে পা দিয়েই সাময়িক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। আর বলেছিলেন, 'সুস্থ হয়েছি। এবার সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। এবার কাজ করে থিতু হতে চাই জীবনে।'[কঙ্কাল কাণ্ডের 'নায়ক' পার্থ দে-র অস্বাভাবিক মৃত্যু, আগুনে পুড়ে মৃত্যু নাকি হার্টফেল? ]
হয়তো বিয়ে করে সংসারী হওয়ার ভাবনাও ছিল মনের মধ্যে। অনেক স্বপ্ন ছিল চোখে। কিন্তু এক বছরের অন্তরাল আবারও বদলে দিল পুরো চিত্রটা। কঙ্কালকাণ্ড খ্যাত পার্থ দে বেছে নিলেন পুরনো জীবনটাই। বাবার মতোই বাথরুমের মধ্যে গায়ে আগুন দিয়ে মরণকে আলিঙ্গন করে নিলেন।
কঙ্কালকাণ্ড সামনে আসার পরের আটমাস বদলে দিয়েছিল পার্থদের জীবনটাকে। হাসপাতাল থেকে পাভলভ, তারপর মাদার হাউস-পার্থ দে-কে নতুন করে বাঁচার রসদ জুগিয়েছিল। আটমাস পরে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে রবিনসনের বাড়ির চাবি ফেরৎ পেয়েছিলেন তিনি। গিয়েছিলেন ওই বাড়িতে। খানিক আবেদাড়িত হয়ে দেখিয়েছিলেন, কোথায় বাবার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল, কোথায় দিদির কঙ্কাল রাখা ছিল।
পরমুহূর্তেই তিনি ফিরে এসেছিলেন বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে। কাকাকে প্রণাম করেছিলেন, খুড়ুতো ভাইকে জড়িয়ে ধরেছিলেন আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই। হলুদ সার্ট, কালো ব্লেজার ও কালো ট্রাউজার্স, পরিচ্ছন্ন করে কামানো দাড়িতে তাঁকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না- কী ঝড়ই না বয়ে গিয়েছে তাঁর উপর দিয়ে! দেখছিলেন সুখী জীবনের স্বপ্ন।
প্রায় ঘণ্টা খানেক ওই বাড়িতে কাটিয়ে তিনি বলেছিলেন, এই বাড়িতে নয়, তিনি মিশনারিজ অফ চ্যারিটির হোমেই থাকতে চান। সেখানেই ছিলেন আরও কিছুদিন তারপর ওয়াটগঞ্জের একটি অভিযান আবাসনে বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে যান। তিনি এরপর অন্তরালে থাকতে চেয়েছিলেন। মাদার হাউস থেকেও আপত্তি করা হয়নি। শেষ মাস আটেক তিনি ওয়াটগঞ্জেই ছিলেন।
প্রতিবেশীদের মতে, সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনজাপনই করতেন তিনি। সঙ্গে একজন কেয়ারটেকার থাকত। দিনের বেলায় থাকত সে, তারপর রাতে আবার বাড়ি ফিরে যেত। এদিন সেই কেয়ারটেকারই দেখেন বাথরুমে পড়ে রয়েছে পার্থ দে-র অগ্নিদগ্ধ দেহ।
২০১৫ সালের ১০ জুন একইভাবে রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ির বাথরুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল অরবিন্দ দে-র দেহ। তারপরই সামনে আসে কঙ্কাল কাণ্ড। দিদি দেবযানীর কঙ্কাল ও দুইটি পোষ্য কুকুরের কঙ্কালের সঙ্গেই থাকতেন পার্থ দে। তারপর পুলিশ হেফাজতে চলে যান তিনি। পুলিশ জেরায় তিনি অনেক কথাই জানান।
২০১৫-র
৪
ডিসেম্বর
চার্জশিট
দেওয়া
হয়
এই
মামলায়।
পুলিশ
তদন্ত
সাপেক্ষে
জানতে
পারে
দেবযানীর
মৃত্যু
পিছনে
কারও
হাত
নেই।
অসুস্থ
হয়েই
তাঁর
মৃত্যু
হয়েছে।
সেইমতো
দেবযানীর
দেহ
আগলে
রাখায়
জামিনযোগ্য
ধারায়
চার্জশিট
দেওয়া
হয়।
২০৬-র
১৯
জানুয়ারি
ব্যাঙ্কশাল
আদালতে
আত্মসমর্পণ
করে
জামিন
নেন
পার্থ।
তারপরই
আদালতের
নির্দেশে
তাঁর
বাড়ি
ফিরে
পাওয়া।
এবং
বাবা
ও
দিদি-র
অবর্তমানে
ওই
বাড়িতে
না
থেকে
মাদার
হাউসেই
ফিরে
যেতে
চাওয়া।
কঙ্কাল কাণ্ডে ধৃত পার্থ দে-কে ঘটনার পরেই চিকিৎসার জন্য পাভলভ মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়েছিল আদালত। সেখান থেকে সুস্থ হওয়ার পরে তিনি চলে গিয়েছিলেন মাদার হাউসে। তাঁর ফ্ল্যাট 'সিল' করে দেওয়া হয়েছিল। ব্যাঙ্কশাল আদালতে বিচারক অনুপম সরকারের এজলাসে পার্থের আইনজীবী মৃণালিনী মজুমদার জানান, পার্থ বাড়িতে ফিরতে চান। তাই চাবি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হোক। বাজেয়াপ্ত জিনিসপত্রও ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স বা মাদার হাউসের সিস্টাররা জানিয়েছিলেন, পার্থর সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে একজন সঙ্গী দরকার। একাকীত্ব তাঁর স্বাভাবিক জীবনে অন্তরায় হয়ে দেখা দেবে। তবু মাদার হাউস থেকে বেরিয়ে তিনি একাকীত্বের জীবনে চলে গেলেন। ফের সমাজে একাকী হয়ে পড়লেন তিনি। শেষমেশ চির অন্তরালে পাড়ি দিলেন কঙ্কাল কাণ্ডের খ্যাতনামা চরিত্রটি।