চলে গেলেন 'স্বপ্ন'-এর ফেরিওয়ালা, প্রয়াত নব্বই দশকের জনপ্রিয় শিল্পী প্রতীক চৌধুরী
অফিস থেকে ফেরার পথে প্রবল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন প্রতীক চৌধুরী। মুহূর্তের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু বাঁচানো যায়নি নব্বই দশকের এই মেলোডি শিল্পীকে।
অফিস থেকে ফেরার পথে প্রবল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন প্রতীক চৌধুরী। মুহূর্তের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু বাঁচানো যায়নি নব্বই দশকের এই মেলোডি শিল্পীকে। যৌবনের ঘোর লাগা প্রেম চোখে যে তরুণ তাঁর পাগলীর জন্য স্বপ্ন দেখত তাদের কাছে যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছিল প্রতীকের গান। 'স্বপ্ন বিক্রি আছে' অ্যালবামের বিক্রি এতটাই আকাশ ছোঁয়া ছিল যে রাতারাতি বাংলা আধুনিক গানে একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছিলেব প্রতীক। তাঁর প্রয়াণের খবরে বাংলা সঙ্গীতমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বাংলা গানের জগতে প্রতীক চৌধুরীর আবির্ভাবটা ছিল যেন ধূমকেতুর মতো। বাংলা আধুনিক গান তখন ভালো কথা ও সুরের অভাবে ধুঁকছে। বিভিন্ন পুরনো গান গেয়ে কোনও কোনও শিল্পী জনপ্রিয়তা পাচ্ছিলেন বটে সে সময়ে, কিন্তু নতুন সুর ও কথা যা বাঙালি মানসকে টানবে তা আর হচ্ছিল না। এই পরিস্থিতির মধ্যে বাজার রমরমা জীবনমুখীগানের। কবীর সুমন সে সময় একটা আলদা ট্রেন্ড সেট করে দিয়েছিলেন। তাঁর পিছন পিছন এক-এক করে উঠে আসছিলেন নচিকেতা, অঞ্জন দত্ত, শিলাজিৎ-রা। আর এদের পাশেই বিরাজ করছিলেন শ্রীকান্ত আচার্য, ইন্দ্রনীল সেনরা। এমনই এক পরিস্থিতিতে উজ্জ্বল সঙ্গীত প্রতিভা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন প্রতীক চৌধুরী। 'স্বপ্ন বিক্রি আছে' অ্যালবামের প্রতিটি গান তখন তরুণী-তরুণীদের হৃদয়ে ঝড় তুলেছে। রাতারাতি জনপ্রিয়তার শিখরে চড়ে পড়েছিলেন প্রতীক চৌধুরী।
সে সময় যারা বাংলা গানের জগতে ছিলেন তাদের গলা থেকে প্রতীকের কন্ঠটা ছিল একটু হঠকে। বিজ্ঞাপনের জিঙ্গলে যেমন এক উজ্জ্বল-স্বপ্ন মাখানো গলা শোনা যায় তার সঙ্গে অনেকটা সাদৃশ্য ছিল প্রতীকের। তাঁর বিশালাকার চেহারাটা তাঁর গানের মতোই আকর্ষণীয় ছিল। তবে, প্রতীকের ঘরানাটা যে রবীন্দ্র সঙ্গীত বা ক্লাসিকাল-বেসে-ও সমানভাবে বিরাজ করতে পারে তার প্রমাণও মিলতে শুরু করে। একাধিক সিনেমার প্লে-ব্যাক সিগিং-এর নাম করেছিলেন প্রতীক। এছাড়াও তাঁর গাওয়া একাধিক রবীন্দ্র সঙ্গীতও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
বিজ্ঞাপণের জিঙ্গল তৈরির ফাঁকে ফাঁকে নিজের গায়িকী-কে দক্ষতার সঙ্গে ধরে রেখেছিলেন তিনি। কুকমি থেকে শুরু খাদিম, টাটা স্টিল-এর মতো নামী ব্র্যান্ডের হয়ে জিঙ্গল বেঁধেছিলেন তিনি। তাঁর শেষ অ্য়ালবাম 'বাংলার নীড়ে'। এহেন প্রতীক দুই বছরে গান রেকর্ডিং করেননি। গত ডিসেম্বরে 'হবুচন্দ্র রাজার গবু চন্দ্র মন্ত্রী'- ছবির জন্য প্লে-ব্যাক করেন। এটাই ছিল তাঁর শেষ কাজ।