জেদের কাছে বশ্যতা মানতে নারাজ সরকার, মেডিক্যালের অনশন পরিস্থিতি জটিল, বিবৃতি শঙ্খর
জেদের সামনে বশ্যতা স্বীকার করতে নারাজ সরকার। আর জার জেরে আরও জটিল আকার নিয়েছে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের অনশন পরিস্থিতি।
জেদের সামনে বশ্যতা স্বীকার করতে নারাজ সরকার। আর জার জেরে আরও জটিল আকার নিয়েছে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের অনশন পরিস্থিতি। অনশনে বসা ছাত্রদের শারীরিক অবস্থা এতটাই চরমে যে সব মহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। সাধারণ মানুষও এখন রাতদিন নজর রেখে চলেছেন ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের অনশন আন্দোলনে।
কোনওভাবে মনোভাব নরম না করারই ধনু-ভাঙা পণ করেছে রাজ্য সরকার। সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য নতুন হস্টেলে যাওয়া নিয়ে ছাত্রদের দাবি কোনওভাবেই মানা হবে না। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশীস ভট্টাচার্য পরিষ্কার জানিয়েছেন, 'হস্টেল যাতে বাসযোগ্য হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।' ১২ দিন ধরে চলা ছাত্রদের অনশনকে তিনি প্রতীকী অ্যাখ্যা দিয়ে অনুরোধ করেছেন অনশন তুলে নেওয়ার। স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতরের সূত্রের খবর নতুন হস্টেল বানানো হয়েছে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য। এখানে কোনওভাবেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষের ছাত্রদের স্থান দেওয়া হবে না।
দাবি না মানলে অনশন আন্দোলন প্রত্যাহার করতে রাজি নন ছাত্ররা। অনশনে যদি মৃত্যুও আসে তাতেও তারা পিছু হঠবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, কোনও অন্যায্য দাবি করা হয়নি। তাঁদের কর্তৃপক্ষকে এই দাবি মানতে হবে। গোটা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি জারি করেছেন সাহিত্য়িক ও বুদ্ধিজীবী শঙ্খ ঘোষ। তিনি লিখেছেন- 'কোনও সংগত দাবি মেটানোর জন্য অনশন বা ঘেরাওকে ব্যক্তিগতভাবে আমি পছন্দ করি না। কিন্তু কোনও দাবি নিয়ে আন্দোলন যখন হয়, তখন তার স্বপক্ষে কথা বলতে চাই। মেডিক্যাল কলেজের অনশনরত এই ছাত্রদের দাবি মেটানোর জন্য কর্তৃপক্ষ এখনও কোনও আয়োজন করছেন না কেন, তা আমি বুঝতে পারি না। অন্য সকলের সঙ্গে মিলে আমিও এই অনুরোধ জানাই, যত দ্রুত সম্ভব সমস্যাটির মিমাংসার জন্য কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিন। কোনও কোনও ছেলে এরই মধ্যে শারীরিক যে অবস্থায় পৌঁছেছে, সেটা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। আমরা সকলেই দুশ্চিন্তায় আছি।'
শুধু শঙ্খ ঘোষ নন ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে অনশনরত ছাত্রদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বহু বিশিষ্ট মানুষ। এঁদের মধ্যে কেউ শিক্ষা-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত, আবার কেউ কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। ছাত্রদের দাবিকে সমর্থন করেছেন, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত থেকে শুরু করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বিভাষ চক্রবর্তীরা। রবিবার ছাত্রদের অনশনস্থলে হাজির হয়েছিলেন কবীর সুমন। তিনি অনশন তুলে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে ছাত্রদের অনুরোধ করেন। কিন্তু, ছাত্রদের একটাই বক্তব্য অতিতে একাধিকবার কর্তৃপক্ষ এমন বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু আখেরে কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই লিখিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া তারা কোনওভাবেই অনশন তুলবেন না।
ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের অনশন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। সুজন চক্রবর্তী নিজের টুইটার হ্যান্ডেলেও বেশকিছুদিন ধরে লাগাতার আন্দোলনের দাবির পক্ষে সওয়াল করে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দিয়েছেন। ফরওয়ার্ড ব্লকও মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে প্রতীকী অনশনে বসার কথা ঘোষণা করেছে। হস্টেল নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের পাশে এত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আনাগোনাতেই আপত্তি রয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতরের। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বিষয়টি পছন্দ নয় বলে জানা গিয়েছে। যার জেরে এখন শুরু হয়েছে জেদা-জেদির দড়ি টানা। আর এর ফলে ১২ দিন ধরে অভুক্ত ছাত্রদের শারীরিক অবস্থাকে কোনওভাবেই পাত্তা দিতে চাইছে না রাজ্য সরকার।