জিডি বিড়লায় শিশুকে যৌন নিগ্রহ, সপ্তাহখানেক অচলাবস্থা চলার পর খোলে স্কুল
শিক্ষাঙ্গনে ফের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। রানিকুঠির জিডি বিড়লা স্কুলে ৪ বছরের পড়ুয়াকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের জেরে উত্তাল থাকে ডিসেম্বর প্রথম সপ্তাহ।
শিক্ষাঙ্গনে ফের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। রানিকুঠির জিডি বিড়লা স্কুলে ৪ বছরের পড়ুয়াকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের জেরে উত্তাল থাকে ডিসেম্বর প্রথম সপ্তাহ। অভিভাবকদের দাবি মতো, প্রিন্সিপালকে সরিয়ে আপাতত সংকটের সামাল দেয় কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনাটিও ২০১৭-র নিরিখে যথেষ্ট গুরুত্ব পূর্ণ।
৪ বছরের পড়ুয়াকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ
৩০ নভেম্বর স্কুলের পিটির দুই শিক্ষক ৪ বছরের পড়ুয়াকে যৌন নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ। এই মর্মে যাদবপুর থানায় যৌন নির্যাতনের অভিযোগও দায়ের করা হয়। ১ ডিসেম্বর সকাল থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে স্কুল চত্বর। অভিভাবকরা স্কুলের গেটে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এই ধরনের অভিযোগে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমল দেয় না বলেও অভিযোগ ওঠে।
প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ
স্কুলের প্রিন্সিপাল এই ধরনের অভিযোগে আমল দেন না বলেও অভিযোগ ওঠে। প্রথম থেকেই জিডি বিড়লা স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল নানা ভাবে তথ্য গোপন করার চেষ্টা করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের কাছ থেকে ফোন পাওয়ার পরও প্রিন্সিপ্যাল কোনওভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিতা শিশুর বাবার। ঘটনাটি জানার পর ক্ষেপে য়ান অন্য শিশুর অভিভাবকরাও। পরিবারকে দেওয়া প্রিন্সিপালের চিঠিতে শিশুর নাম প্রকাশের অভিযোগ ওঠে।
ঘটনার নিন্দায় শিক্ষামন্ত্রী
রাজ্য সরকারের তরফে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় জানিয়েছেন, ঘটনার নিন্দা করতে মুখের ভাষা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গোটা ঘটনাকে তিনি অত্যন্ত বর্বোরোচিত এবং নির্মম বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কলকাতার বুকে এমন ঘটনা সত্যিকারেই চিন্তার বলে শিক্ষামন্ত্রীর মনে হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর মতে, সরকারি স্কুলে উন্নত মানের পড়াশোনার ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার। কিন্তু, বাবা-মা-রা বিপুল অর্থ খরচ করেও বেসরকারি স্কুলগুলির পিছনে ছুটছেন।
অভিযুক্তরা চিহ্নিত, গ্রেফতার ২
জিডি বিড়লাকাণ্ডে ছবি দেখে দুই জনকে চিহ্নিত করে নির্যাতিতা বছর চারেকের শিশু। সূত্রের খবর শুক্রবার এসএসকেএম হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি যৌন নির্যাতনের শিকার পড়ুয়ার মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়। সে সময়ই তাকে চারটে ছবি দেখানো হয়েছিল। এর মধ্যে দু'টি ছবিকে সে চিহ্নিত করে। অভিযুক্ত অভিষেক রায় এবং মফিজুদ্দিনকে গ্রেফতার করে পকসো আইনের ধারা আনা হয় ধৃতদের বিরুদ্ধে।
নির্যাতিতা শিশুর পাশে বিজেপির ২ নেত্রী
নির্যাতিতা শিশুর বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। স্কুলের গেটে গিয়ে ধর্নায় বসেন বিজেপি সাংসদ রূপা গাঙ্গুলিও। যদিও বেশিরভাগ অভিভাবক স্কুলের গেটে রূপা গাঙ্গুলির ধর্নাকে ভাল চোখে দেখেননি। যদিও শিশুর বাবার অনুরোধের পর সরে যান রূপা গাঙ্গুলি।
স্কুল বন্ধের নোটিশ কর্তৃপক্ষের
অভিভাবকদের বিক্ষোভের জেরে ৩ ডিসেম্বর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধের নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। ঘটনায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অভিভাবকরা। জুনিয়র সেকশনে মহিলা অ্যাটেন্ডেন্টের পাশাপাশি, কোনও পুরুষ কর্মী রাখা চলবে না বলে দাবি তোলেন অভিভাবকরা। ওইদিনই পুলিশি মধ্যস্থতায় ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে অভিভাবকদের আলোচনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
তদন্তে লালবাজার ও শিশু সুরক্ষা কমিশন
ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় লালবাজারের ওমেন্স গ্রিভান্স সেলের হাতে। তারা যাদবপুর থানা থেকে নথি সংগ্রহ করেন। স্কুলে যান রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন এবং সদস্যরাও। তাঁদের তরফে অধ্যক্ষার গ্রেফতারের সুপারিশ করা হয়। হাইকোর্টে বিষয়টি নিয়ে মামলাও হয়।
প্রিন্সিপালকে লালবাজারে তলব
প্রিন্সিপালকে লালবাজারে তলব করে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। আপাত অপসারণের পর শর্মিলা নাথ জানান, তাঁর সম্পর্কে না জেনেই বিচার হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাদের ভালর জন্য যতটুকু করতে হয়, ততটুকু তিনি করেছেন বলেও জানান অপসারিত প্রিন্সিপাল। প্রিন্সিপালের পাশাপাশি স্কুলের একাধিক আয়াকেও লালবাজারে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সিলেবাসে পকসো আইন
জিডি বিড়লা কাণ্ডের জেরে পকসো আইন, ২০১২-র নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল শিক্ষা দফতর। রাজ্য পরিচালিত স্কুলগুলিতে বেশ কয়েকটি ইন্টারেক্টিভ অ্যাকটিভিটিসও রাখা হচ্ছে স্কুলের সিলেবাসে। তবে, প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পসকো আইন সম্পর্কে বোঝানো খুব কষ্টকর হওয়ায়, খারাপ স্পর্শ কিংবা ভাল স্পর্শ সম্পর্কে টেকস্ট বই-এ অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা। এছাড়াও বিষয়টিকে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের কাছে আরও সহজ করে তুলতে বেশ কিছু ভাবনা-চিন্তাও করা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন সিলেবাস রিস্ট্রাকচার কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার।