শ্যামপুরের ওসি-র শেষ ‘অপারেশনে’ প্রাণ নিয়ে টানাটানি! কেমন আছেন সুমন, খোঁজ নিলেন মমতাও
শ্যামপুর থানার ওসি হিসেবে শেষ অপারেশনে গিয়ে দুষ্কৃতী হামলায় গুরুতর জখম হলেন পুলিশ অফিসার সুমন দাস।
ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি হয়ে গিয়েছিল তাঁর। শীঘ্রই শ্যামপুর থানার চার্জ হস্তান্তর করে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল ডিআইবি ইন্সপেক্টর পদে। তার আগেই ঘটে গেল মর্মান্তিক ঘটনা। শ্যামপুর থানার ওসি হিসেবে শেষ অপারেশনে গিয়ে দুষ্কৃতী হামলায় গুরুতর জখম হলেন পুলিশ অফিসার সুমন দাস। শুক্রবারই তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। না ফিরতেই আশঙ্কার কালো মেঘ ছেয়েছিল হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটের ডাকাবুকো যুবক সুমনের পরিবারে। এখন তাঁর প্রাণ নিয়ে যমে মানুষে টানাটানি।
[আরও পড়ুন:মমতার সরকারে অনাস্থা শাঁওলি মিত্রের! ছাড়তে চলেছেন বাংলা অ্যাকাডেমি ]
এই আশঙ্কার মধ্যে সন্তোষের একটাই কারণ চিকিৎসায় সাড়া দিতে শুরু করেছেন সুমনবাবু। এখনও কালো মেঘ না কাটলেও, ওষুধের ফল মেলায় চিকিৎসকরাও আশ্বস্ত। এখনই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই। তবে ৭২ ঘণ্টা না কাটলে কিছুই বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। সুমনের শারীরিক অবস্থা কেমন রয়েছে, তাঁর চিকিৎসায় যেন কোনও গাফিলতি না থাকে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিয়েছেন তিনি। ফিরহাদ হাকিম, শোভ চট্টোপাধ্যায়দের মতো মন্ত্রীদের পাঠিয়েছেন তদারকিতে।
[আরও পড়ুন:ভাঙড়ে রবিবার তৃণমূলের সভা, জমি আন্দোলনকারীদের কড়া চ্যালেঞ্জ]
ন-সদস্যের একটি চিকিৎসক দল সুমনের চিকিৎসা করছে। তাঁকে সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা চলছে। তারই মধ্যে সুমনের পরিবারে উদ্বেগ কমিয়েছে সুমনের চিকিৎসায় সাড়া দেওয়ার খবর। সুমন এদিন ডানা পা নেড়েছেন। তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, এক জায়গায় আঘাত থাকলেও, রক্তক্ষরণ হয়েছে গোটা মাথাতেই, তাঁর কানের পর্দার নিচের শিরাও ফেটে গিয়েছে। আঘাত রয়েছে মেরুদণ্ডে। চিকিৎসকরা এত প্রতিকূলতার মধ্যেও সবরকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সুমনের পরিবারও গভীর উদ্বেগের মধ্যে কাটাচ্ছে। বাবা মৃণাল দাস ছিলেন পুলিশকর্মী। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই স্কটিশচার্চের মেধাবী ছাত্র সুমন বেছে নিয়েছিলেন পুলিশের ঝুঁকিপূর্ণ চাকরি। রিষড়া রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন তিনি। বাবা গত হয়েছেন কিছুদিন হল। মা স্বপ্না দাস বলেন, বাড়িতে না জানিয়েই পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছিল সুমন। পরে তা জেনে গর্বিতই হয়েছিলেন বাবা-মা। শুক্রবারের পরও তাই দৃঢ় প্রত্যয়ী মা জানালেন তাঁর সুমন সুস্থ হয়ে উঠবেই।
উল্লেখ্য, শ্যামপুরের বাড়গড়চুমুকে জমি নিয়ে দুই প্রতিবেশী পরিবারের বিবাদ দীর্ঘদিনের। মাঝে-মধ্যেই ওই পাড়া উত্তপ্ত হয়ে উঠত বোমা-গুলির আওয়াজে। মাস কয়েক আগেও একবার পুলিশ আক্রান্ত হয় ওই মুন্সিপাড়ায়। ফের ঝামেলা বাধে শুক্রবার। মারধর, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর হয়। খবর পেয়ে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে শুক্রবার রাতে হানা দেয় পুলিশ। ওসি সুমন দাসের নেতৃত্বে অভযান চলে, তখনই দুষ্কৃতীরা একজোট হয়ে হামলা করে ওসির উপর। রাস্তায় ফেলে নৃশংসভাবে মারধর করা হয়। বাঁশ, রড, টাঙি দিয়ে মারা হয় সুমন দাসকে। তাঁক বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন এএসআই তরুণ পুরকাইত ও সিভিক ভলেন্টিয়ার প্রসেনজিৎ।
ঘটনাস্থলে যান হাওড়া সিটি পুলিশ ও গ্রামীণ পুলিশের বিশাল বাহিনী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সিআইডির টিমও ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত শুরু করেছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ টিম নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে এলাকার। ধৃত সাতজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জেরা করছে পুলিশ। এলাকায় রয়েছে পুলিশ পিকেট, টহল দিচ্ছে র্যাফও।