লেকটাউনের জয়ন্তী দেব হত্যাকাণ্ডে স্বামী সহ তিনজনকে ফাঁসির সাজা
ঐতিহাসিক রায় শোনাল শিয়ালদহ আদালত। ২০১৪ সালের ২০ মেলেকটাউনের জয়ন্তী দেব হত্যাকাণ্ডে স্বামী ও তাঁর প্রেমিকা-সহ ৩ জনকে ফাঁসির সাজা শোনালেন বিচারক।
ঐতিহাসিক রায় শোনাল শিয়ালদহ আদালত। ২০১৪ সালের ২০ মে লেকটাউনের জয়ন্তী দেব হত্যাকাণ্ডে স্বামী ও তাঁর প্রেমিকা-সহ ৩ জনকে ফাঁসির সাজা শোনালেন বিচারক। এর মধ্যে রয়েছেন সুরজিৎবাবুর প্রেমিকা লিপিকা পোদ্দার ও সঞ্জয় বিশ্বাস। অবশেষে মিলেছে ন্যায় বিচার। আজ সোমবার বিচারক রায় শোনানোর সময় বলেন, যে নৃশংসতায় খুন করা হয়েছে তাতে অন্য কোনও সাজা দেওয়া যায় না।
প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের ২০ মে সন্ধ্যায় শিয়ালদহে ২ বেওয়ারিশ ট্রলি ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় এক মহিলার খণ্ড খণ্ড দেহ। ব্যাগটি উদ্ধার করেন অভিজিৎ সাহা নামে এক পুলিস আধিকারিক। একটি ব্যাগে ছিল একজন মহিলার ধড়। অন্য ব্যাগে ছিল মুন্ডু, ২টি হাত ও ২টি পা। ছিল না কোনও পোশাক।
ব্যাগের ভিতর থেকে মেলা ক্যাশ মেমো থেকে পুলিস জানতে পারেন মহিলার নাম জয়ন্তী দেব। বাড়ি লেকটাউন। ততক্ষণে অবশ্য বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন স্বামী সুরজিৎ দেব। ঘটনায় সপ্তাহ খানেকের মধ্যে স্বামী সুরজিৎ দেব-সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিস। তাঁদের জেরা করে বেরিয়ে আসে নৃশংস হত্যার কাহিনী।
পুলিশের জেরায় সুরজিৎ জানান, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল তাঁর। বিবাহবিচ্ছেদের মামলাও চলছিল। পুলিশের তদন্তে জানা যায়, বহুজাতিক সংস্থার কর্মী সুরজিৎ লেকটাউনে ফ্ল্যাট কিনে থাকলেও তাঁর আদি বাড়ি বিরাটিতে। সেখানে থাকতেন তাঁর মা।
স্ত্রী জয়ন্তীদেবীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মায়ের কাছে চলে গিয়েছিলেন তিনি। এমনকী তাঁর কিশোরী মেয়েও জয়ন্তীদেবীর সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারত না। সে থাকত জ্যেঠুর বাড়ি। স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাও করেন তিনি। কিন্তু মামলা খারিজ করে স্ত্রীর সঙ্গেই সুরজিৎবাবুকে থাকতে নির্দেশ দেয় আদালত। সেইমতো বিরাটি থেকে লেকটাউনে ফিরে আসেন তিনি।
এরপরেই লেকটাউনে ফিরতেই ফের শুরু হয় স্ত্রীর নির্যাতন। পাশাপাশি বিরাটিতে থাকার সময় মায়ের আয়া লিপিকা পোদ্দারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুরজিতের।
এরই মধ্যে একদিন অশান্তি চরমে উঠলে জয়ন্তীদেবীর মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করেন সুরজিতবাবু। এরপর লিপিকাকে ফোন করে ঘটনা জানান। ফোন পেয়ে বিরাটি থেকে লেকটাউন ছুটে যান লিপিকা। অচেতন জয়ন্তীদেবীকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন তিনি।
দেহ লোপাট করতে ডাক পড়ে মাংস ব্যবসায়ী সঞ্জয়ের। লিপিকার পূর্ব পরিচিত সঞ্জয় বিশ্বাসের বাড়ি রানাঘাটে। লিপিকারও বাড়ি সেখানেই। তাঁকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেহ লোপাট করতে ডাকা হয়। সঞ্জয় এসে দেহ টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে। এর পর ট্যাক্সি ভাড়া করে দেহ গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়।
কিন্তু ব্যাগ দু'টি শিয়ালদা স্টেশনের সামনে পার্কিংয়ে রেখে চলে আসেন তাঁরা। এরপর ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার পর আজ সোমবার ওই মামলায় তিন অভিযুক্তকেই ফাঁসির সাজা শোনালেন বিচারক।