মমতাকে এবার আমন্ত্রণ আরএসএসের! বাউন্সারের জবাব বিশাল ছক্কায় দিলেন ভাগবত
‘গুগলি’ ছেড়ে ‘বাউন্সার’ দিয়েছিলেন মমতা। এবার সেই আরএসএসই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়ে ‘গান্ধীগিরি’ দেখাল।
আরএসএস ও বিজেপি নিয়ে আগে অনেক 'গুগলি' ছেড়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুদিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সংবাদ মাধ্যমের বিশেষ অনুষ্ঠানে আরএসএসকে ধর্মীয় জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। এবার সেই আরএসএসই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়ে 'গান্ধীগিরি' দেখাল।
ক'দিন ধরেই জল্পনা চলছিল, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পর আরএসএস আমন্ত্রণ জানাতে পারে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে। রাহুল গান্ধী লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে আরএসএসকে আরব দুনিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তারপর থেকেই রাহুলকে পাল্টা দিতে চাইছিল বিজেপি ও আরএসএস। তারপর মমতা বন্দ্যোরপাধ্যায় আরএসএসকে একহাত নিয়ে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তুলনা করেন। তারপরই তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরএসএসের অনুষ্ঠানে প্রণব
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে নাগপুরের সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিল আরএসএস। সেই আমন্ত্রণ রক্ষাও করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। জাতীয় কংগ্রেসের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণের পর কম জল্পনা হয়নি। সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিলেন ঘরে-বাইরে। শেষপর্যন্ত তিনি সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গিয়েছিলেন আরএসএসের মঞ্চে। নাগপুরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বহুত্ববাদ ও সহিষ্ণুতার পাঠ দিয়েছিলেন প্রণববাবু।
প্রণববাবুর পর টাটা
নাগপুরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আদর্শগত ফারাক। তা সত্ত্বেও তিনি হাজির হয়েছেন, সহিষ্ণুতার বার্তা দিয়েছেন। আদ্যপান্ত ধর্মনিরপেক্ষ প্রণববাবুর পর আরএসএসের মঞ্চে আমন্ত্রণ পান শিল্পপতি রতন টাটা। তিনি আরএসএস নেতা নানা পালেকরের স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন। তবে কোনও বক্তব্য রাখেননি তিনি।
এবার জল্পনায় ছিলেন রাহুল
জার্মানি ও লন্ডনের মঞ্চে আরএসএসকে মুন্ডপাত করার পর আরএসএস টার্গেট কের রাহুলকে। পুরনো কংগ্রেসি প্রণববাবুকে নিজেদের মঞ্চে এনেছিলেন। এবার বর্তমান কংগ্রেস সভাপতি রাহুলকে তাঁদের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা চলছে বলে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়। তবে বাস্তবে তা হয়নি। ডাক পাননি রাহুল। ডাক পাননি মল্লিকার্জুন খাড়গেও।
এবার ‘টার্গেট’ মমতা
প্রণব মুখোপাধ্যায় ও রতন টাটার পর এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ পাঠাল আরএসএস। শুক্রবার এর সংবাদ সংস্থা ইউএনআই-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন এমনটাই জানানো হয়েছে। ১৭ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিল্লিতে আরএসএস-এর একটি অনুষ্ঠান। সেখানেই আমন্ত্রিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতার সম্ভাবনা নেই
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বিদেশে। রবিবারই তিনি উড়ে গিয়েছেন ইউরোপের উদ্দেশ্য। সেখানে তিনি ১৩ দিনের সফর করবেন। বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনের লক্ষ্যে রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফর। ফলে সোমবার থেকে বুধবার আরএসএসের তিনদিনের অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এমনটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
আমন্ত্রিত মায়াবতী-অখিলেশও
শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নন। আরএসএসের অনুষ্ঠানে এবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বহুজন সমাজবাদী পার্টি নেত্রী মায়াবতীকে, আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদবকেও। অখিলেশ যাদব উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা না থাকলও মায়াবতী উপস্থিত থাকতে পারেন বলেই জানা গিয়েছে বিশেষ সূত্রে।
আরএসএসের মঞ্চ বিরোধী মিলনক্ষেত্র!
একই অনুষ্ঠানে রাহুল গান্ধী ও লোকসভার কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল আরএসএস। তা নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। তবে শেষপর্যন্ত তা হয়নি। মমতা-অখিলেশও যাচ্ছেন না। তা হলে আরএসএসের মঞ্চ হয়ে উঠল বিরোধী জোটের মিলনোক্ষেত্র। তবে শেষপর্যন্ত তা হচ্ছে না।
সর্বধর্মের মিলন-মঞ্চ
দিল্লিতে আরএসএসের তিনদিনের অনুষ্ঠান। ১৭ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ সোম থেকে বুধবার। মোটা ২৫০০ জন প্রতিনিধি আমন্ত্রিত ওই অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মুসলিম ও খ্রিস্টান প্রতিনিধিদেরও। এই মঞ্চ থেকে আদতে সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিতে চাইছে আরএসএস। উল্লেখ্য, এর আগে বহুবার মমতা বলেছেন- আমরা বিবেকানন্দের হিন্দুত্ব মানি, আরএসএসের হিন্দুত্ব মানি না।
মমতার তোপে আরএসএস
কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে আরএসএসকে একহাত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিকাগোতে তাঁর অনুষ্ঠান বাতিল করার বিষয়টি তুলে ধরেই আরএসএসকে চরম জবাব দেন। বলেন, সেদিন অনুষ্ঠান বাতিলের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এদিন চিঠি হাতে নিয়ে মমতা আনফোরসিন রিজনস কথাটি বারবার পড়ে শুনিয়েছেন। তারপরই গর্জে উঠে বলেছেন, আরএসএস হল একটি ধর্মীয় জঙ্গি সংগঠন।
আরএসএসকে হিন্দুত্ব-খোঁচা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, আরএসএসের জঙ্গি-হিন্দুত্ব আমরা মানি না। আমরা মানি বিবেকানন্দের হিন্দুত্ব। যে হিন্দুত্ব সহনশীলতা শেখায়, মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। আমরা স্বামীজিকে মেনে চলব। রামকৃষ্ণের পথ অনুসরণ করব। তিনিই তো আমাদের সবাইকে নিয়ে চলতে শিখিয়েছেন। কেন আরএসএসের মতো জঙ্গিপনাকে মদত দেব আমরা, প্রশ্ন তোলেন মমতা।
বিজেপি খারাপ, আরএসএস ভালো
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা সময় বলেছিলেন অটল ভালো, আদবানি খারাপ। আবার এখন বলেন মোদী খারাপ, আদবানি ভালো। তিনি বলেছিলেন বিজেপি খারাপ, আরএসএস ভালো। এখন তিনি বলছেন আরএসএস ধর্মীয় জঙ্গি সংগঠন। মানুষের কাছে ভীতিদায়ক।