কলকাতায় বসে আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্ক প্রতারণার ছক, দিন কয়েকে কয়েক লক্ষ টাকার জালিয়াতি
গড়িয়াহাটের কানাড়া ব্যাঙ্কের অর্থ প্রতারণার তদন্তে সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। দিল্লিতে ইতিমধ্যে এই আর্থিক জালিয়াতিতে ২ রোমানিয়ান নাগরিককে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
গড়িয়াহাটের কানাড়া ব্যাঙ্কের অর্থ প্রতারণার তদন্তে সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। দিল্লিতে ইতিমধ্যে এই আর্থিক জালিয়াতিতে ২ রোমানিয়ান নাগরিককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাদের জেরা করেই এমন তথ্য পেয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা অফিসাররা। এই মুহূর্তে ওই দুই ধৃত রোমানিয়ানকে কলকাতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ট্রানজিট রিমান্ডে এদের কলকাতায় আনা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে।
এই দুই রোমানিয়ান কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা অফিসারদের যে তথ্য দিয়েছেন তাতে জানা গিয়েছে ব্যাঙ্ক প্রতারণার প্র্যাক্টিকাল ক্লাসটা তারা করেছিল কলকাতার কসবা অঞ্চলের এক হোটেলে। এই জন্য এই গ্যাং-এর ২ জন কসবার ওই হোটেলে এসে ঘাঁটিও গেড়েছিলেন। ঘূণাক্ষরেও কেউ কিছু জানতে পারেনি।
ধৃত রোমানিয়ানদেরকে জেরা করে কসবার ওই হোটেলের ঠিকানা জোগাড়ও করেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। হোটেল ম্যানেজার সুদীপ্ত ভড় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২ রোমানিয়ান এসেছিলেন। এক জন মার্চ মাস নাগাদ এসেছিল। তবে, তার চেহারা খুব একটা খেয়াল নেই। আর দ্বিতীয় জন এসেছিল ৩০ এপ্রিল। হোটেলে সে ৭দিন ছিল। এরপর ৭ মে সে হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়।
দিল্লির একটি সংস্থা এই হোটেলে তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য ঘর ভাড়া নিত। এই দুই রোমানিয়ানের জন্য ঘর বুক রাখার বরাত দিয়েছিল দিল্লির সেই সংস্থা। হোটেলের রুমে ভাড়া ও খাওয়া-দাওয়া বাবদ রোজ ৭ হাজার টাকা করে খরচ করেছিল এক রোমানিয়ান। মাঝে-মধ্যেই রোমানিয়ান বেরিয়ে যেত। আর ফিরত রাত করে। তবে যেদিন বের হত না সেদিন ঘরেই থাকতে। ব্যবহারে কোনও সন্দেহের ছাপ ছিল না বলেও দাবি করেছেন কসবার ওই হোটেল ম্যানেজার। হোটেলের চারতলায় ৮ নম্বর রুম দেওয়া হয়েছিল ৩০ এপ্রিল শহরে আসা রোমানিয়ানকে।
তদন্তে পুলিশ মনে করছে ৩০ এপ্রিল যে রোমানিয়ান কলকাতায় এসেছিল সে -ই বিভিন্ন এটিএম-এ স্কিমার লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। তবে, যে ভাবে এই রোমানিয়ান গ্যাং কলকাতা শহরের কসবা অঞ্চলে ঘাঁটি গড়ে বিভিন্ন এটিএম স্কিমার ফ্রড-এর ছক-কে প্রয়োগ করেছিল তাতে অবাক পুলিশ। বিশেষ করে নিরাপত্তারক্ষীহীন এটিএমগুলি-কে এক্ষেত্রে নিশানা করা হয়েছিল। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এটিএম সুরক্ষায় উদাসীনতার সুযোগে স্কিমার ফ্রড-এর সিস্টেমকে যে খুব সহজে এটিএম মেশিনে লাগানো গিয়েছিল তাতে নিঃসন্দেহ কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা।
ইউরোপে বহুদিন ধরে এমন সব স্কিমার ফ্রড চলছে। এই ধরনের প্রতারণায় বারবার রোমানিয়ানদের নামও জড়িয়েছে। স্পেন, ব্রিটেনে একাধিক রোমানিয়ান গ্রেফতারও হয়েছেন। নিরাপত্তার কড়াকড়িতে এই রোমানিয়ান স্কিমার ফ্রড-রা এখন পাড়ি জমাচ্ছেন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। ভারতে এমন বেশকিছু রোমানিয়ান গ্যাং সক্রিয় বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, মাস কয়েক আগেই জয়পুর-হায়দরাবাদে একাধিক স্কিমার ফ্রড-এর ঘটনায় একটি রোমানিয়ান গ্যাং-কে ধরা হয়েছিল। এরা রোমানিয়ান হলেও অন্য গ্যাং বলেই মনে করা হচ্ছে। আর কোনও রোমানিয়ান গ্যাং এই শহরে অপারেশন চালাচ্ছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে, ঘটনার সময় পালিয়ে যাওয়া তৃতীয় রোমানিয়ানের খোঁজে দিল্লিতে তল্লাশিও চলছে।