আস্ত একটা পৃথিবী নেমে এসেছে! রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘের চমকে কি কুপোকাত কলকাতার পুজো
মাঠের আয়তন কত হবে? মেরে কেটে ২ বিঘা। কিন্তু, এই দুই বিঘা জমিনেই এখন বসত গেড়েছে আস্ত একটা পৃথিবী। ঘন নীল রঙ। তার শরীর জুড়ে জল ও স্থলের চিহ্নগুলো স্পষ্ট। ঠিক যেমনটা নাসার ভিডিও-তে দেখা যায়।
মাঠের আয়তন কত হবে? মেরে কেটে ২ বিঘা। কিন্তু, এই দুই বিঘা জমিনেই এখন বসত গেড়েছে আস্ত একটা পৃথিবী। ঘন নীল রঙ। তার শরীর জুড়ে জল ও স্থলের চিহ্নগুলো স্পষ্ট। ঠিক যেমনটা নাসার ভিডিও-তে দেখা যায়। তবে আস্ত পৃথিবী গ্রহের উপরে স্থাপিত হয়েছে একটা বিশাল-বিশাল ইমারতের শহর। কংক্রিটের জঙ্গলের সেই শহরকে আবার সাপের মতো পেচিয়ে রেখেছে উঁচু উঁচু সব ফ্লাইওভার। বলতে গেলে 'আনরিয়াল' কাঠামোতে যেন 'রিয়াল-আরবানাইজেশন'।
এখানেই চমক শেষ নয়। নরেন্দ্রপুর এলাচি রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘ আরও অনেক কিছু সাজিয়ে রেখেছে পুজো দর্শনার্থীদের জন্য। যেমন আস্ত এই পৃথিবীর পেট-চিরে ভিতরে ঢুকলেই দেখা মিলবে এক অনিনন্দ্য সুন্দর প্রকৃতির। যেখানে খেলা করে লতা-পাতা আর গাছেরা। নাচের ছন্দে বয়ে যায় নীল স্বচ্ছ জল। এহেন এক প্রকৃতির মাথায় থাকা নীল-আকাশে গাভির মতো ভেসে বেড়়ায় মেঘ। কল-কোলাহল আর কিচিরমিচির আওয়াজে চারিদিক মুখরিত করে তোলে পাখির দল। আর এমন এক প্রকৃতির মাঝে অধিষ্ঠাত্রী হয়েছেন মা-দুর্গা।
এসব গল্প মনে হলেও সত্যি। কারণ বিশ্ব-উষ্ণায়ণে রিক্ত পৃথিবী এবং তার প্রকৃতির মায়াজালকে এভাবেই মেলে ধরেছে এলাচি রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘ। আর এই পুরো ভাবনাটাকেই মেলে ধরা হয়েছে 'নীল গ্রহের অতলে'-র ট্যাগ লাইনে।
কথা হচ্ছিল এলাচি রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘের অন্যতম সদস্য শ্যামল-এর সঙ্গে। তিনি জানান, বিশ্ব-উষ্ণায়ণে আজ পৃথিবী উপরে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে এখানে। কংক্রিটের জঙ্গলে কীভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি তা দেখানো হয়েছে। কিন্তু, পৃথিবীর প্রকৃতির বিরাজমানা রূপ এতটাই সুন্দর ও মায়াময় যে তা সকলকে মাত করে দেবে। সুতরাং, প্রকৃতি প্রেমেই যে পৃথিবী রক্ষার আসল রহস্য লুকিয়ে আছে সেটাকেই এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
পুজো কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় দাশগুপ্ত জানালেন, এমন এক মণ্ডপ গড়ে তুলতে এমন এমন জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে যে তার সম্পর্কে সকলে জানলে অবাক হবেন। যেমন পৃথিবীর আদল গড়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে, একধরণের পলিমারযুক্ত নীল শিট। এই শিট সাধারণত কোনও ধরনের প্যাকেট তৈরিতে কাজে লাগে। এছাড়াও রয়েছে ক্যাডবেরির মোড়ানোর আংতা। এতে আবার নীল রঙ করতে বিশেষভাবে তাতে কাজ করতে হয়েছে। পৃথিবীর বুকে স্থল বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে কুঁকড়ে যাওয়া খবরের কাগজ। মণ্ডপের ভিতরে প্রকৃতির সাজ-সজ্জার জন্য যে জিনিসগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তারমধ্যে রয়েছে টিস্যুপেপার, কান চুলকানোর বার্ডস, ফোম। তেমনি রয়েছে ইলেক্ট্রিক্যাল কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের সাদা পাইপ। এছাড়়াও ব্যবহার করা হয়েছে পাটকাঠি, সাইকেলে তেল দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত টিউবের কৌটো।
সঞ্জয় দাশগুপ্তের মতে, আমাদের ব্যবহারিক জীবনে এই জিনিসগুলোকে আমরা খুব অবহেলা ভরেই দেখি। অথচ, সামান্য একটু ভাবনার অদল-বদল ঘটালে যে এগুলো কতটা কার্যকরি হতে পারে তা আমরা জানি না। এখানেই এই সামান্য-সামান্য জিনিসগুলো দিয়ে যে ভাবে মণ্ডপ-কে সজ্জিত করা হয়েছে তা রি-সাইক্লিং-এর বার্তাকেই প্রতিষ্ঠিত করে। অর্থাৎ বিশ্ব-প্রকৃতিকে বাঁচাতে গেলে আমাদের জঞ্জালের স্তূপ কমাতে হবে। বরং জঞ্জালকেই পুনর্ব্যবহারের প্রক্রিয়া আবিষ্কার করতে হবে।
এলাচির রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘের পুজো এই বছর ৭২তম বর্ষে। নরেন্দ্রপুর এলাকায় বড় পুজো বলেই বিবেচিত হয় এই পুজো কমিটি। ফি বছরই পুজোর দিনগুলিতে অন্তত কয়েক লক্ষ মানুষ এলাচি রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘের পুজো দেখতে ভিড় করেন। এই মুহূর্তে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামি পুজোগুলোর মধ্যে একটি এলাচি রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘ। গত বছরও এই পুজো কমিটি একাধিক শারদ সম্মানে সম্মানিত হয়েছিল।