ঠিক যে যে কারণে ভেঙে পড়ল বিবেকানন্দ উড়ালপুল!
কলকাতা, ১ এপ্রিল : নির্মীয়মান বিবেকানন্দ সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা যেন সারা রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে। আর দুদিন পরে বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়ে যাবে রাজ্যে। কিন্তু তার আগে এই সেতুর পতন যেন কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে রাজ্যবাসীর মনে।
উড়ালপুল বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫, কুড়ি ঘন্টা পরেও চলছে উদ্ধারকাজ
এরপরেও জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অন্য কোনও ফ্লাইওভার বা সেতুতে উঠতেই হবে সাধারণ মানুষকে। অথবা যেতে হবে কোনও সেতুর তলা দিয়ে। তবে পিছনে কিন্তু তাড়া করে বেড়াবে বিবেকানন্দ সেতুর ভূত। কিন্তু ঠিক কী কারণে ঘটে গেল এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা? ঠিক কী কী সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে এর পিছনে? কী মত উঠে আসছে? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমত, নির্মীয়মান সেতুটির কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কাঠামো তৈরির সময়ে কোনও করিগরিগত বা প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল কিনা তা তদন্তের বিষয়। যদি সেতুটির কাঠামোয় কোনও গলদ থাকে তাহলে পরের সব কাজ ঠিকমতো হলেও সেতু ভেঙে পড়বেই।
উড়ালপুল বিপর্যয়ের জের : রাজ্যের সব সেতু পর্যবেক্ষণের নির্দেশ রাজ্যপালের
দ্বিতীয়ত, সেতু তৈরির সময়ে সেখানকার মাটি কীভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কলকাতার মাটির চরিত্র ঐতিহাসিকভাবে বেশ নরম। সেখানে নির্মীয়মান ব্রিজটির ভার কতোটা এই নরম মাটি নিতে পারবে সেটাও আপাতত তদন্তের বিষয়। মাটি মজবুত না হলে তার উপরে মজবুত নির্মাণ তৈরি করলেও তা বেশিদিন টেঁকে না।
ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ সেতুর ভয়াবহ দৃশ্য একনজরে
তৃতীয়ত, সেতু তৈরির সময়ে ইস্পাতের পাত ঝালাই করে তার উপরে সিমেন্টের বড় বড় বার বসিয়ে বা ঢালাই করে সেতুর পাটাতন তৈরি হয়। তার উপর দিয়েই গাড়ি চলে। সেতুকে ধরে রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় গার্ডার। সেটাই ব্রিজকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে গার্ডারের কোনও ক্রুটি হলে ব্রিজ ভেঙে পড়তে পারে। এছাড়া নকশা বা ডিজাইনের গলদও অনেক বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।
চতুর্থত, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, এক ঢালাই কর্মী জানিয়েছেন, বুধবার রাত থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ঢালাইয়ের কাজ চলেছিল। এরপর দুপুর ১২টার পরে ব্রিজটি ভেঙে পড়ে।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কথা তিনি যেটা বলেছেন সেটা হল, বুধবার রাতেই ঢালাই করার সময়ে পাটাতনের নিচে ইস্পাতের পাতে লাগানো নাট-বোল্টের কয়েকটিতে ত্রুটি ধরা পড়ে। সেটা ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জানানোও হয়েছিল। কিন্তু সেই নাট-বোল্ট না পাল্টে তা ঝালাই করে পাটাতন ঢালাই চালিয়ে যেতে বলা হয়।
নাট-বোল্টে ত্রুটি হলে তা ঝালাই নয়, মূলত পাল্টে ফেলাই নিয়ম। সেটা না করে ঝালাই করিয়ে ঢালাই চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশেই বিপদ ঘনিয়ে এল কিনা তা তদন্ত সাপেক্ষ। এমন হলে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হয়েছে।
এর পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে সেতু তৈরিতে কি ধরনের গুনমানের সিমেন্ট, বালি, রড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছিল। যদি দেখা যায়, গুণগত মানের দিক থেকে তা নিম্নমানের ছিল, তাহলে সেটা আগে তদন্ত করে বার করা উচিত।