অর্ধেক রাস্তা যেতেই পুলিশের জলকামানে ছত্রভঙ্গ বিজেপি, তবু অভিযান সফল বলে দাবি দিলীপদের
অর্ধেক রাস্তা যেতেই পুলিশের জলকামানে ছত্রভঙ্গ বিজেপি, তবু অভিযান সফল বলে দাবি দিলীপদের
পুলিশের জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ও টানা-হ্যাঁচড়ায় বিজেপি লালবাজার অভিযান স্থগিত করলেও দলের নেতাদের দাবি, অভিযান একশো শতাংশ সফল। সেই সঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, এসএস আলুওয়ালিয়া, রাজ্যের নেতা দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, জয়প্রকাশ মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা এ রাজ্যে গণতন্ত্র নেই বলে আরও একবার গলা ফাটালেন।
সন্দেশখালিতে রাজনৈতিক হিংসা সহ রাজ্যজুড়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতির প্রতিবাদে বিজেপির এদিনের লালবাজার অভিযান এবং তাকে ঘিরে প্রস্তুতি, চাপানউতোর যেকোনো বলিউড থ্রিলারকে হার মানাবে। কয়েক দিন আগেই এক জনসভায় বিজেপি কর্মীদের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হয়তো রাজ্যের সুপ্রিমোর সেই নির্দেশ একটু বেশিই গম্ভীরভাবে নিয়েছিল কলকাতা পুলিশ।
বিজেপির মিছিল আটকাতে বুধবার সকাল থেকেই কলকাতা পুলিশ যে প্রস্তুতিটা নিতে শুরু করে, তা যে কোনো দেশে গৃহযুদ্ধের সময় সেনার প্রস্তুতিকে ছাপিয়ে যেতে বাধ্য। আগে থেকেই ঠিক ছিল রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে জমায়েত করবেন রাজ্য বিজেপির নেতা ও কর্মীরা। সেখান থেকে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট হয়ে মিছিল লালবাজারের দিকে রওনা হয় বিজেপির মিছিল। তাই লালবাজার পৌঁছনোর সবচেয়ে সহজ পথ ফিয়ার্স লেনে পর পর চারটি ব্যারিকেড করে কলকাতা পুলিশ।
অ্যালুমনিয়াম ও স্টিলের গার্ডরেলের পাশাপাশি কিউআরটি, এইচআরএফএস ভ্যানও তৈরি রাখা হয়েছিল। ছিল মোবাইল ভ্যান, কুইক রেসপনস টিম, হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডও। ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোটা লালবাজার চত্বর। বিজেপির মিছিল আটকাতে শুধু ওই এলাকাতেই নামোনো হয়েছিল সাড়ে তিন হাজার পুলিশ কর্মী। যদিও এত লড-বহরের আমদানি কিন্তু বেকারই গেল। কেবল জল কামান ও কাঁদানে গ্যাসের ঠেলাতেই যে বিজেপির নেতা-কর্মীরা পিছু হঠবেন, তা হয়তো আঁচ করতে পারেনি রাজ্য প্রশাসন।
বুধবারের ঘটনাক্রম এক নজরে
১) দুপুর একটায় রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে লালবাজারের উদ্দেশে রওনা হয় বিজেপির মিছিল।
২) ঠিক তখনই কে জানে কী ভাবে কলকাতা পুলিশের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে লালবাজারের সামনে পৌঁছে যায় রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রীরা। রাস্তায় বসে তাঁরা 'জয় শ্রীরাম' বলে চিৎকার করতে শুরু করেন। দিশেহারা পুলিশ তিন মহিলাকে গ্রেফতার করে।
৩) ওদিকে, রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে শুরু হওয়া মিছিল ফিয়ার্স লেনে পুলিশের তৈরি করা একটি ব্যারিকেড পেরিয়ে দ্বিতীয়টির দিকে এগোতে গেলে বিপদে পড়ে। রণকৌশলে বিজেপি নেতাদের গুনে গুনে দশ গোল দেওয়া পুলিশ মিছিলে জল কামান চার্জ করার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়।
৪) পুলিশের এই অপ্রত্য়াশিত আক্রমণে হকচকিয়ে যাওয়া বিজেপির নেতা-কর্মীরা একে একে পিছু হটেন।
৫) সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ ও বৌ বাজারের মোড়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, এসএস আলুওয়ালিয়া, রাজ্যের নেতা দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, জয়প্রকাশ মজুমদার, রাহুল সিনহা, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। যদিও সেখানে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেওয়া এবং কাঁদানে গ্যাসের সেলে অসুস্থ হয়ে পড়া দলের কর্মীদের সেবা করা ছাড়া বিজেপি নেতারা তেমন কিছুই করতে পারেননি।
৬) সবশেষে বিজেপির রাজ্য সভাপতি আন্দোলন স্থগিত বলে ঘোষা করেন। পুলিশকে দলদাসে পরিণত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের উপর এই আক্রমণ নিন্দাজনক, বললেন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ও রাহুল সিনহা।
প্রাপ্তি
বিজেপির দাবি, যাই হোক তারা কলকাতা পুলিশকে মারমুখী হতে বাধ্য করেছে। তাই তাদের পরিকল্পনা সফল।
অন্যদিকে, বডি কনটাক্টে না গিয়েও শুধুমাত্র জল কামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে বিজেপির নেতা-কর্মীদের পিছু হঠাতে পেরে খুশি কলকাতা পুলিশ।
[আরও পড়ুন: লালবাজার অভিযানে জয় দেখছে বিজেপি! অগ্নিগর্ভ কলকাতায় মিলল আন্দোলনের রসদ]