বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান হাজার খানেক শিক্ষকের, সাহায্যের আশ্বাস শিক্ষামন্ত্রীর
ডিইএলইডি নিয়ে আতঙ্কিত শিক্ষকদের আশ্বস্ত করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে চিঠিও লিখবেন বলে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন তিনি। ডিইএলইডি-এর দুটো পেপারের পরীক্ষা বাতিল হওয়ার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন এরাজ্যের ১ লক্ষ ৬৯ হাজার শিক্ষক। এরমধ্যে ডিইএলইডি-র ১৫ ও ১৬ মার্চের পরীক্ষার দিনও পিছোনোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এনসিটিই-র বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ৩১ মার্চের মধ্যে এই ১ লক্ষ ৬৯ হাজার শিক্ষককে শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রমাণ দাখিল করতে হবে। যে সব শিক্ষকরা এটা পারবেন না তাঁরা শিক্ষকতার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। সেক্ষেত্রে এই শিক্ষকদের চাকরি খোয়াতে হতে পারে বলেও জানিয়ে রেখেছে এনসিটিই।

শিক্ষক প্রশিক্ষণের ডিগ্রি না থাকা বহু শিক্ষক-ই এখন এনসিটিই অনুমোদিত জাতীয় মুক্ত বিদ্যালয়ের ডিইএলইডি- কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। এই অনলাইন কোর্সে শিক্ষকরা ডিটিএইচ প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিইএলইডি-র ক্লাস করেন। এই রাজ্যে অন্তত ১ লাখ ৬৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা এই ডিইএলইডি কোর্সে নাম লিখিয়েছেন। ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর ডিইএলইডি-র ৫০৬ ও ৫০৭-এর পরীক্ষা হয়। কিন্তু, চার দিন পরেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের কথা বলে এই দুই পেপারের পরীক্ষা বাতিলের কথা ঘোষণা করে ন্যাশনাল ওপেন স্কুল বা এনওএস। এই বিঞ্জপ্তিতে জানানো হয় উত্তর দিনাজপুরে প্রশ্ন হেফাজতের দায়িত্বে থাকারা এই ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত। সারা দেশে কেন এই পরীক্ষা বাতিল হল না তাই নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন শিক্ষকরা।

শিক্ষকদের অভিযোগ, পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর তা বাতিল হওয়ার পিছনে যথেষ্টই রহস্য রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, এর পিছনে রাজনৈতিক দূরভিসন্ধিও রয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে কর্মসংস্থানে একটা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির চেষ্টার সম্ভাবনাও তাঁরা উড়িয়ে দিতে রাজি নন। পুরো বিষয়টি-তে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ইন্ধনও তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসকাণ্ডে সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত বলেও মনে করছেন তাঁরা।
এই বিক্ষুদ্ধ শিক্ষকদেরই একটা অংশ সোমবার সল্টলেকের করুণাময়ীতে জমায়েত করেন। যাদের নেতৃত্ব দেয় শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ। কলকাতার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জেলা থেকেও অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা যাঁরা ডিইএলইডি-র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাঁরা এতে যোগ দেন। বিশাল মিছিল করে বিকাশ ভবনের সামনে যান শিক্ষকরা। কিন্তু পুলিশ আটকে দিতেই তাঁরা রাস্তার উপরে বসে অবস্থান শুরু করেন। এর জেরে সাময়িকভাবে করুণাময়ী এলাকায় যানজট তৈরি হয়।

পরে পুলিশ শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের প্রতিনিধি দলকে বিকাশ ভবনে যাওয়ার অনুমতি দেয়। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ তাঁদের অভিযোগ এবং দাবি-দাওয়া জানায় প্রতিনিধি দলটি। এরপর পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের হাতে দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। বাইরে বেরিয়ে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলাম জানান, 'শিক্ষামন্ত্রী যথেষ্ট মনোযোগ সহকারে আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। ডিইএলইডি-র পরীক্ষা প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত শেষ করে মার্চের মধ্যে সার্টিফিকেট দেওয়া যায় সে জন্য জাতীয় মুক্ত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেবেন বলেআশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এমনকী, এনসিটিই যাতে এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষকের কথা ভেবে শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রমাণ দাখিলের কাট-অফ টাইম-কে পিছিয়ে দেয় সে জন্যও শিক্ষামন্ত্রী এনসিটিই-র সঙ্গে কথা বলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।'
বাতিল হওয়া ৫০৬ ও ৫০৭ নম্বর পেপারের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে এনওএস। ডি.ইএল.ইডি পরীক্ষা প্রক্রিয়া ১৫ মার্চের মধ্যে শেষ করতে হবে। এরপর ফল প্রকাশের জন্য হাতে মাত্র ১৫ দিন থাকছে। এই অল্প সময়ের কীভাবে ফল প্রকাশ হবে তা নিয়ে শঙ্কায় এই রাজ্যের অন্তত ১ লাখ ৬৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কোনওভাবেই যে এনসিটিই-র নির্দেশ অনুযায়ী ৩১ মার্চের মধ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রমাণ দাখিল করা যাবে না তাতে একপ্রকার নিশ্চিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ফলে, ৩১ মার্চের পর শিক্ষক প্রশিক্ষণের ডিগ্রি না থাকাদের হাল কী হবে তা ভেবে পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রী এদিনের আশ্বাসে আশার আলো দেখলেও তাঁরা এখনও পুরোপুরি চিন্তামুক্ত নন। এনসিটিই কর্তৃপক্ষ কাট-অফ ডেট নিয়ে কী অবস্থান নেয় এখন সে দিকেই তাকিয়ে ১ লক্ষ ৬৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা।

শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, 'শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তাঁরা ভরসা রাখছেন। এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব এবং সেই অনুযায়ী কর্মসূচি ঠিক করা হবে। প্রয়োজনে ১ লক্ষ ৬৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার রুটি রুজি বাঁচাতে বৃহত্তর আন্দোলনও সংগঠিত করা হতে পারে।' ডিইএলইডি প্রশিক্ষণ নেওয়া এই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে অধিকাংশেরই বয়স ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে। অনেকে ইতিমধ্যে অবসরের মুখে দাঁড়িয়ে। শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রমাণ দাখিল নিয়ে চাকরিতে সমস্যা শুরু হলে পেনশনও আটকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।