মুকুলের ‘অভাব’ অনুভূত হচ্ছে তৃণমূলে! বিজেপিতে ‘চাণক্য’ হওয়ার পথে হঠাৎ গুরুত্বের আসনে
‘বুড়োভাম’, ‘চাটনিদাদু’, ‘গদ্দার’- এমন নানা নামে বিভূষিত করেছিলেল তাঁকে। কিন্তু তিনি যে দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন, তা এতদিনে প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিল তৃণমূল কংগ্রেস।
ঠেকে শিখল তৃণমূল! দল ছেড়ে বিপক্ষ শিবিরে যোগ দেওয়ার চারমাস পর মুকুল রায়ের 'অভাব' অনুভব করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। মুকুল দল ছাড়ার পর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হলেও, এতদিনে দলে তাঁর গুরুত্বের কথা কার্যত স্বীকার করে নিলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। 'বুড়োভাম', 'চাটনিদাদু', 'গদ্দার'- এমন নানা নামে বিভূষিত করেছিলেল তাঁকে। কিন্তু তিনি যে দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন, তা এতদিনে প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিল তৃণমূল কংগ্রেস।
[আরও পড়ুন: মুগুর দিয়েই ইঞ্চি সাইজের মন্ত্রীদের শায়েস্তা করার নিদান! ফের কুকথার বান দিলীপের]
পঞ্চায়েত ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। দেখতে গেলে আসন্ন পঞ্চায়েতই মুকুল-হীন তৃণমূলের প্রথম বড় নির্বাচন। এর আগে মুকুল রায়কে ছাড়া দু-একটা উপনির্বাচন লড়েছে তৃণমূল। সাফল্যও পেয়েছে আশাতীত। কিন্তু মুকুলকে ছাড়া গোটা রাজ্যের নির্বাচন এই প্রথম। তাই সেই অভাব তৃণমূল কী করে দূর করে, তা একটা বড় চ্যালেঞ্জ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেডের কাছে।
তার উপর মুকুল রায় এখন আবার বিপক্ষ শিবিরের প্রধান মুখ। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভার তাঁর উপরই দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির পঞ্চায়েত নির্বাচন কমিটিক আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। স্বভাবতই তৃণমূলের হয়ে এতদিন ভোট ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন যিনি, সেই তিনিই বিপক্ষ শিবিরের দায়িত্বে। এই চাপ নিয়ে তৃণমূলকে এবার পঞ্চায়েত ভোটে লড়তে হবে।
দুদিন আগে মুকুল রায়ের উপর বিজেপি পঞ্চায়েত নির্বাচনের দায়িত্ব অর্পণ করার পর তৃণমূল যে কতখানি চাপে পড়েছে, তার প্রমাণ মিলল দলের মহাসচিবের কথায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি কার্যত স্বীকার করে নিলেন, 'তৃণমূলে মুকুল রায় গুরুত্বের আসনে ছিলেন। তবে তা সম্ভব হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন বলেই গুরুত্বের আসন পেয়েছিলেন তিনি। এখন তাঁকে গুরুত্ব দেওয়ার মতো কিছু নেই। কারণ এখন তাঁর মাথার উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেই।'
রাজনৈতিক মহলের একাংশ অবশ্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই কথার পিছনে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলেই মনে করছে। কারণ মুকুল রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব না দিলেও তিনি পর্দার আড়ালে থেকে যে কৌশলী চাল দিতেন, তাতেই বাঘা বাঘা প্রতিদ্বন্দ্বীরা কুপোকাত হয়ে যেতেন। এবার সেই 'চাণক্য'গিরি তিনি দেখাবেন বিপক্ষ শিবিরে। তাই মুকুলের গুরুত্ব কথা আর ফেলনা নয় তৃণমূলের কাছে। গুরুত্ব সহকারেই তাঁর মোকাবিলার কথা ভাবছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এই মুকুল রায় ২০০৮ সালে পঞ্চায়েতের দায়িত্ব ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁর হাত ধরেই পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল রাজ্যে। তারপর যত নির্বাচন হয়েছে, পিছন থেকে ছড়ি ঘুরিয়েছেন মুকুল রায়ই। এমনকী ২০১৬ নির্বাচনের আগে তৃণমূলে হঠাৎ করে গুরুত্ব বৃদ্ধির পিছনেও ছিল মুকুল রায়ের ভোট-মস্তিষ্ক। এহেন মুকুল রায়কে ছাড়া এবারের পঞ্চায়েত ভোট তাই তৃণমূলের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জের।
[আরও পড়ুন:মুকুলকে 'পঞ্চায়েত' দায়িত্বের পরেই 'এলোমেলো' তৃণমূল! মুকুলকে 'শেয়াল' বললেন পার্থ]