ভিন্ন নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোফাইল ছিল একাধিক, পার্কস্ট্রিটকাণ্ডের পুনর্নির্মাণ করা হল কাদেরকে দিয়ে
কলকাতা, ১ অক্টোবর : সাড়ে চার বছর গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও, সমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় লগ ইন থেকেছে পার্কস্ট্রিট কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত কাদের। ভিন্ন নামে দিনের পর দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে সে। [পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণ : রাজীব কুমারের এক সিদ্ধান্তে পুলিশের জালে কাদের খান]
পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত কাদের ও তার প্রধান শাগরেদ আলিকে দফায় দফায় জেরায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। শনিবার ধৃত কাদের ও আলিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণও করা হয়। [পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত নাসের ঘটনাস্থলেই ছিল না, চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি কাদেরের]
পুলিশি জেরায় কাদের খান স্বীকার করেছে, ভিন্ন নামে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সে যোগাযোগ রাখত তার বন্ধু বা পরিজনদের সঙ্গে। যাদের সঙ্গে কাদের নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলত, তাদের একটা তালিকাও তৈরি করছেন গোয়েন্দারা। প্রয়োজনে তাদের জেরা করাও হতে পারে। কী কী নামে এতদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় অনলাইন থেকেছে কাদের, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাদের মধ্যে কী কথা হত, তা জানতে ওই প্রোফাইলগুলিও খতিয়ে দেখা হবে। [টি আই প্যারেড হবে না, অন্য কোনও ফাঁক যেন না থাকে, সাবধানী তদন্তকারী পুলিশ ও আইনজীবীরাও]
পুলিশ জানতে পেরেছে, দিল্লিতে তিনটি ঠিকানায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে থাকত কাদের খান ও মহম্মদ আলি। ফয়জলের বাড়িতেই ছিল মূল আস্তানা। তারপর শবনম ও আফজলের বাড়িতেও তারা থাকত। ফয়জল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র। তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে সহজেই মিশে থাকতে পারত কাদের ও আলি। ছাত্রদের মধ্যে মিশে থাকায় সহজে তাদেরকে সন্দেহ করেননি কেউ। মাঝেমধ্যে রাঁচিতেও কাদেরের এক ভাইয়ের বাড়িতে তারা কাটিয়ে আসত বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ।
ব্যাঙ্কশাল আদালত ১৪ দিনের গোয়েন্দা হেফাজত মঞ্জুর করায় শনিবার সকালেই কাদের ও আলিকে নিয়ে ঘটনা পুনর্নিমাণে বের হন গোয়েন্দারা। কাদেরকে নিয়ে পার্কস্ট্রিটে যাওয়া হয়। কোন জায়গা থেকে নির্যাতিতাকে গাড়িতে তোলা হয়েছিল, কীভাবে তোলা হয়েছিল, গাড়ি কোন কোন জায়গায় গিয়েছিল, গাড়ির মধ্যে কীভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছিল? তা দেখাতে বলা হয় কাদের ও আলিকে। কাদের জানায়, অনেকদিন আগের ঘটনা, সেভাবে মনে নেই ঠিক কোন জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছিল। তাছাড়া তারা সে সময় স্বাভাবিক অবস্থাতেও ছিল না।
এদিকে কাদের পুলিশি জেরায় দাবি করেছে, সে ধর্ষণে জড়িত ছিল না। নির্যাতিতাকে হাত ধরে টানাটানি করেছিল, মারধরও করেছিল, কিন্তু ধর্ষণ সে করেনি। কাদেরের এই বয়ানে বিভ্রান্তি ছড়ায়। পুলিশ মনে করছে, তদন্তকে ভুলপথে চালনা করতেই ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের মন্তব্য করছে ধৃতরা।
শুক্রবার আদালতে তোলার আগেও অভিযুক্ত কাদের দাবি করে, সে কোনওদিনও দেশের বাইরে পালিয়ে যায়নি। দেশের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়েছিল সে ও তার সঙ্গী আলি।
পুলিশ এখন দফায় দফায় জেরা করে সেই কথাগুলির সত্যতা নিরূপণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিনের পুনর্নির্মাণের ঘটনায় অনেক সত্যই সামনে চলে আসবে বলে তদন্তকারীদের ধারণা।