উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টে বসা হল না, মেধাবী স্বর্ণেন্দু নিজেকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে চেয়েছিলেন
উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টে বসা হল না স্বর্ণেন্দুর। গত রবিবার অঙ্কের টিউশন নিতে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হল উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের মেধাবী ছাত্রটিকে।
বসিরহাট, ৪ নভেম্বর : উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টে বসা হল না স্বর্ণেন্দুর। গত রবিবার অঙ্কের টিউশন নিতে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হল উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের মেধাবী ছাত্রটিকে। পাঁচদিনের লড়াই শেষ। বৃহস্পতিবার কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালেই শেষ হয়ে গেল স্বর্ণেন্দুর জীবনযুদ্ধ।
সান্ত্বনা শুধু এই, মৃত্যু তাঁকে কেড়ে নিলেও তিনি বেঁচে থাকবেন অন্যের মধ্যে। তাঁর অঙ্গেই জীবন পেয়েছেন তিন-তিনজন রোগী। সুন্দর পৃথিবীকে তাঁর চোখের আলোয় দেখবেন কেউ। ছেলেকে হারিয়ে শোকাহত বাবা-মা, পরিবার-পরিজনের কাছে এটাই একমাত্র সান্ত্বনার। অসম্ভব মেধাবী ছিলেন স্বর্ণেন্দু। মাধ্যমিকে চারটি বিষয়ে ৯০-এর উপর নম্বর পেয়েছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকেও ভালো রেজাল্ট করার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। পাঠ শেষ করে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার ইচ্ছা ছিল তাঁর।
কিন্তু উচ্চশিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগেই তাঁকে ডেকে নিল মৃত্যু। তাই তাঁর ব্রেন ডেথের পর সমস্ত আশা যখন শেষ হয়ে গেল, স্বর্ণেন্দুর বাবা ছেলের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েই অঙ্গদানের কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ছেলে চেয়েছিল মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে। মহান সাজার জন্য নয়, তাঁর সেই ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি আমরা।
সেইসঙ্গে আমরা চেয়েছি, আমাদের ছেলেকে হারালেও, তাঁর অঙ্গদানে তো অনেকে বাঁচবেন। ভাববো, তাঁদের মধ্যেই বেঁচে আছে স্বর্ণেন্দু। দুর্ঘটনার পর প্রথমে বসিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। তারপর কলকাতার নামী নার্সিংহোম অ্যাপেলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও প্রথম থেকেই ডাক্তাররা জানিয়ে দেন বাঁচার আশা কম।
দুর্ঘটনার পরই কোমায় চলে গিয়েছিল স্বর্ণেন্দু। সেখান থেকে আর ফিরিয়ে আনা যায়নি। ব্রেন ডেথ ঘোষণা করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একমাত্র ছেলের স্মৃতিটুকু বাঁচিয়ে রাখতে তাঁর দুটি কিডনি, লিভার ও দুটি চোখ দান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।